• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
নির্বাচনকালীন সরকার হবে ১৩ সদস্যের!

নির্বাচন ভবন

ছবি : তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী

নির্বাচন

নির্বাচনকালীন সরকার হবে ১৩ সদস্যের!

  • বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম
  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হচ্ছে শিগগিরই। আগামী মাসেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা পদত্যাগ করতে শুরু করবেন। এরপরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সহায়তাকারী অন্তর্বর্তী সরকার। স্বল্পকালীন এই সরকারের সদস্যসংখ্যা ১৩ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। তবে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের বাইরে কোনো টেকনোক্র্যাট সদস্য থাকছেন না। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় এই সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা দেবে। সেই সময়টাতে নির্বাহী ক্ষমতার কোনো প্রয়োগ হবে না।  

সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ছোট পরিসরের এ সরকারের প্রধান থাকছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য নেওয়া হবে। তাদের বাছাই করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য সংসদে কোনো বিল আনার কিংবা আলোচনার প্রয়োজন হবে না। একটি সূত্রে জানা গেছে, ওই সরকারের সদস্যসংখ্যা আগেরবারের মতো বেশি হবে না। ১৩ থেকে ১৫ সদস্য দিয়ে এই সরকার গঠিত হবে।

নির্বাচনকালীন সরকারে যাদের থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়ামের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

এদিকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তার দল জাতীয় পার্টি থেকে ফখরুল ইমামকে এবং জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ বরারবই বলে আসছে সংবিধান অনুযায়ী ভোট হবে। নির্বাচনের সময় সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই থাকবে। সেই সরকার সহায়ক সরকারের ভূমিকায় থেকে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার অক্টোবরের মাঝামাঝি গঠন করা হবে। এই সরকারে টেকনোক্র্যাট কেউ থাকবেন না। মন্ত্রিসভাও ছোট হবে।

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদের অধিবেশনে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে বলেন, কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী ওই সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার সর্বতোভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে। আর সরকার নির্বাচনের সময় শুধু রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে না।

সংবিধানে অবশ্য নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো বিধান নেই। নেই অন্তর্বর্তীকালীন বা সহায়ক সরকারের বিধানও। যে কারণে ঠিক কী প্রক্রিয়ায় এই সরকার গঠন করা হবে তা নিয়ে এখনো রয়েছে ধোঁয়াশা। কেউ কেউ বলছেন, এটি একেবারেই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। আবার অনেকে বলছেন, যেহেতু সংবিধানে এই সরকারের কোনো অস্তিত্বই নেই আর প্রধানমন্ত্রী যখন চাইছেন সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকে সরকারের সদস্য করবেন সেহেতু এ বিষয়টি নিয়ে একটি বিল এনে সংসদের অনুমোদন নেওয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ে কোনো ধরনের বিল এখন পর্যন্ত জমা হয়নি। এই সরকার গঠনে আদৌ কোনো বিল আনা হবে কি না কিংবা সংসদের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে কি না, সে বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে সংবিধানে না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী চাইলে নির্বাচনকালীন সরকার ছোট বা বড় করতে পারেন বলে মত দিয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী একটি সরকার থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। আর নির্বাচনের সময় আগের নির্বাচিত সরকারই তার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। এই দায়িত্ব পালনের বিষয়টি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় যেরকম, জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাই। এর অর্থ হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় সরকার যেভাবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখে, জাতীয় ‍নির্বাচনের সময়ও বিদ্যমান সরকারই তার স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করবে। তারা বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে সরকারের কর্তব্য হবে সহায়তাকারীর। নির্বাচনের সময় সরকারের আকার ছোট করা বা কেবল নির্বাচিত প্রতিনিধিকে নিয়ে সরকার গঠনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে। এটি তার সাংবিধানিক ক্ষমতা। তিনি যেকোনো সময় তা করতে পারেন।

তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনী বিধিমালার আলোকে তফসিল ঘোষণার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়নসহ কিছু কিছু কাজে কমিশনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, নির্বাচনের সময় সরকারি প্রটোকল গ্রহণ, ডাকবাংলোসহ সরকারি স্থাপনার ব্যবহার বা এ জাতীয় কিছু কর্মকাণ্ডে বিধিনিষেধ থাকে।

সংবিধান অনুসারে, বিদ্যমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে গেলেও সরকারের ওপর তার প্রভাব পড়বে না। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনোকিছুই অযোগ্য করিবে না।’ সংবিধানের ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাহাদের  উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব-স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’

এ বিষয়ে আইনজ্ঞ স. ম. রেজাউল করিম বলেন, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো বিধান নেই। নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকার স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। বর্তমান নির্বাচিত সরকার পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। নির্বাচনের সময় সরকারের আকার ছোট করতে হবে এমন কোনো বিধান নেই জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে সেটি করতে পারেন। এতে সংবিধানের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। একই কথা বলেন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কোনো বিধান সংবিধানে নেই। ক্ষমতাসীন সরকারই নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে তার কোনো কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। তবে বিরত যে থাকতেই হবে এমন কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads