• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচন নিয়ে তৎপর

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রতীকী ছবি

নির্বাচন

বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচন নিয়ে তৎপর

  • আহমদ আতিক
  • প্রকাশিত ২০ অক্টোবর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য দেখার আগ্রহ বিদেশি কূটনীতিকদের। এ নিয়ে বিবদমান দুই রাজনৈতিক শিবিরের নেতাদের সঙ্গে কথাও বলছেন তারা। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ছাড়াও বৈঠক করেছেন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের সন্দেহ, সংশয় জেনে বিদেশিদের এই উদ্বেগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণের প্রতি এ ধরনের অনাস্থা কাম্য নয়। নেতাদের এটাও বুঝতে হবে যে, বিদেশিরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করে দেবে না। 

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাত দেশের প্রতিনিধিরা। আলোচনা হয় একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে। বৈঠক শেষে ঢাকাস্থ ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি টিয়ারিংক জানান, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে দরকার সব দলের অংশগ্রহণ। একই দিন ঢাকাস্থ ৩০ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি নেতারা। ওই বৈঠকেও আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল আগামী জাতীয় নির্বাচন। ওইদিন সেতু ভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট এবং ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। মার্কিন ও ভারতীয় দূত আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে তাদের সরকারের অবস্থান জানান। পরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারত বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় এবং নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের সহিংসতার প্রত্যাশা করে না। বৈঠক শেষে মার্সিয়া বার্নিকাট বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। 

গত ৮ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে সাউথ ব্লকে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) বিজয় কুমার সিং (ভি কে সিং) বলেন, ভারত চায় বাংলাদেশের নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ। নির্বাচন হতে হবে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী। কোনো দল অংশ নিক বা না নিক জনগণের অংশ নেওয়াটাই মুখ্য বিষয়।  

নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে চিঠি দিয়েছেন কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড। এর আগে নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির পরিচালক মার্ক গ্রিন। ওই বৈঠকে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদুল হকের কাছে একটি বার্তা দেন মার্ক গ্রিন। বার্তায় জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর মতো অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে বলা হয় মার্কিন প্রশাসনের এক বিবৃতিতেও।  

নির্বাচনের আগে সৌদি আরব ঘুরে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসামান্য উন্নয়নের প্রশংসা করেন সৌদি বাদশাহ। আরো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দুই দেশের সম্পর্ক আরো উন্নত হবে এবং সকল ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হবে। আর স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের আগে সৌদি বাদশাহর এ প্রশংসা বাংলাদেশের ভোটের হিসেবে ভূমিকা রাখবে। 

ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়োও বলেছেন, বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হবে নির্ঝঞ্ঝাট এবং নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। বাংলাদেশি জনগণের পছন্দ বা ইচ্ছাকে চীন সম্মান জানাবে। গত ১৪ অক্টোবর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকস্থ বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন দেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।  

গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় সংস্থার মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকের আলোচনার কথা পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সংবাদকর্মীদের অবহিত করেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে, আশাবাদ জানিয়েছেন গুতেরেস।  

বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশি দূতদের অবস্থান এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের তাদের কাছে ধরনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিজেদের সমস্যা সমাধানে বিদেশিদের দ্বারস্থ হওয়ার অর্থ নিজের দেশকে ছোট করা। এর মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতি অনাস্থা দেখান আমাদের রাজনীতিবিদরা। তাদের এটা বুঝতে হবে যে, স্বার্থ ছাড়া বিদেশিরা আমাদের দেশের সমস্যার সমাধান করে দেবে না। 

তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময় নির্বাচনী কূটনীতির নামে বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। এটা নতুন কিছু নয়। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর মনে করেন, কূটনীতিকদের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের আলোচনায় নানা বিষয় উঠে আসে। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় তাদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত জানতে চান। সাংবাদিকরাও তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা মতামত দেন। 

আমরা নিজেরাই বসে আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করব বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী সমস্যা নিয়ে বিদেশিদের এত আগ্রহ থাকাটা বাঞ্ছনীয় নয়। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads