নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটে দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচনের দিন তাদের কর্মকাণ্ড যেন আইনানুগ হয়, সেদিকে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গতকাল শনিবার সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের প্রশিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এই নির্দেশ দেয় কমিশন।
ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, রাঙামাটি, নওগাঁ, সুনামগঞ্জ ও বান্দরবান জেলার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন এমন চার শতাধিক প্রশিক্ষক এতে অংশ নেন। কর্মশালায় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ইটিআই মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক বক্তব্য দেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের কারণেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয় জানিয়ে প্রশিক্ষকদের উদ্দেশে রফিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা মনে রাখবেন, নির্বাচন মানে কিন্তু একদিন। শিডিউলে ৪৫ দিন ৪৬ দিন থাকতে পারে, তবে নির্বাচনের দিনটাই আসল। এই নির্বাচনের দিনের কর্মকাণ্ড যদি ঠিক না হয়, আইনানুগ না হয়, তাহলে কিন্তু আমরা সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হব। কারণ ওই দিনই সারা দেশের ভোটাররা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না, সেই সংশয়ের কথা পত্রিকার খবরে ঘুরেফিরে আসছে। এটা কিন্তু নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। আপনি যদি ব্যালটটাকে ঠিকমত সংরক্ষণ করেন, আপনি যদি কেন্দ্রটাকে ঠিকমতো তৈরি করেন, আপনারা যাদের ট্রেনিং দেবেন, তারা যদি দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন, তাহলে কিন্তু ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, আপনাদের কাছে ছবিসহ ভোটার তালিকা আছে। আপনারা যদি ঠিকমত চিহ্নিত করতে পারেন, যদি আপনারা কাউকে বের করে না দিয়ে তাদের এজেন্টদের ঠিকমতো রাখেন, তারা যদি আপনাদের সহায়তা করেন, তাহলে একজনের ভোট অন্য আরেকজন দিতে পারবে না। ফলে প্রত্যেকের ভোট দেওয়ার অধিকার আপনার কেন্দ্রে নিশ্চিত হয়ে যাবে। এটুকুই আপনার দায়িত্ব। একজন ভোটারের ভোট বেআইনিভাবে অন্য কেউ দিয়ে দিলেও তার যে ভোট দেওয়ার বিধান আইনে আছে- সে কথা মনে করিয়ে দেন এই নির্বাচন কমিশনার। কোনো ভোটার যদি সত্যিকারের ভোটার হয়ে থাকেন, তার ভোট অন্য কেউ দিয়ে থাকলে তাকে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ভোট দিতে দিন। জাস্ট অ্যালাউ হিম উইদাউট অ্যানি কোশ্চেন। আপনারা যদি আইনটাকে ফলো করেন, তাহলে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হব না।
ভোটকেন্দ্রে গোপনকক্ষে ভোট দেওয়ার যে বিধান রয়েছে, তা যেন কেউ অমান্য না করে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়ার তাগিদ দিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, যদি আপনারা কাউকে ব্যালটটা দিয়ে দিলেন, গোপন কক্ষে না গিয়ে সে প্রকাশ্যে ভোট দিল। সে বলতেই পারে, তার ভোট সে দেবে- প্রকাশ্যে দিক আর গোপনে দিক। এটা আপনারা করতে দেবেন না। আপনাদের প্রশিক্ষণার্থীদেরও বলে দেবেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেআইনি, এটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ভোটারকে শনাক্ত করে তবেই তার হাতে ব্যালট দেওয়ার তাগিদ দিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, যতক্ষণ না আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ভোট দেওয়ার জন্য ব্যালট পেপার ইস্যু করবেন না।
রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পরিকল্পনা সাজায় নির্বাচন কমিশন ও ইসি সচিবালয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে নির্বাচনের আয়োজনটা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরই করতে হয়। আমাদের মান সম্মান ইজ্জত আপনাদের হাতে ন্যস্ত। নির্বাচনের সব দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন। রফিকুল ইসলাম নির্বাচন কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের নিরাপত্তার জন্য সবাই থাকবেন। নির্বাচনে একেবারে চৌকিদার থেকে সেনাবাহিনী সবাই থাকবেন। আপনাদের জীবন নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।
শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার পরামর্শ দেন এই নির্বাচন কমিশনার। আপনার অনুমতি ছাড়া তারা যেন কোথাও যেতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। মালামাল, ব্যালট সবকিছু দেখে গ্রহণ করবেন। এগুলো আপনাদের দায়িত্বে থাকবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা কারো কাছে এগুলো রেখে কোথাও যাবেন না। তারাও ব্যালটের অপব্যবহার করতে পারে। সর্বক্ষণ এগুলোর সঙ্গে থাকবেন আপনারা।