• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
জন-অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার

লোগো বিএনপি

নির্বাচন

বিএনপির ইশতেহার

জন-অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার

# রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য # নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টে ন্যস্ত # র্যাবের বর্তমান কাঠামো পরিবর্তন # শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা থাকবে না # জাতীয় প্রবৃদ্ধি হার ১১ শতাংশ # বেকার ভাতা চালু # তরুণ দম্পতি ও উদ্যো

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

‘রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা সুদৃঢ়’ করার প্রতিশ্রুতিকে প্রাধান্য দিয়ে দলীয় ইশতেহার ঘোষণা করেছে বিএনপি। ইশতেহারে ১৯টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ইশতেহার প্রকাশ করে খালেদা জিয়ার জীবনকে পুনরায় আলোয় উদ্ভাসিত করতে দেশবাসীর কাছে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান।  

রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার ঘোষিত ইশতেহারে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন, বিচার বিভাগ, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ ১৯ দফা বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ১৯ দফার অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থনীতি, মুক্তিযোদ্ধা, যুব নারী ও শিশু, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, জ্বালানি, তথ্য ও প্রযুক্তি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, বৈদেশিক ও প্রবাসী কল্যাণ, কৃষি ও শিল্প, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা ও পুলিশ, আবাসন, পেনশন ফান্ড ও রেশনিং ফান্ড প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ, পররাষ্ট্র এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা। বিএনপির ইশতেহারের বেশিরভাগই ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের সঙ্গে মিল রয়েছে।

১৯ দফা ইশতেহারে যা আছে

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর প্রকাশ করা হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলে যেন সাধারণ মানুষের কোনো ভোগান্তি না হয় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংসদে উচ্চ কক্ষ : বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

গণভোট পুনঃপ্রবর্তন ও ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন : পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হওয়া গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে শর্ত সাপেক্ষে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।

জাতীয় কমিশন গঠন : প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে একটি জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে।

ন্যায়পাল নিয়োগ : প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ দেওয়া হবে।

র্যাবের বর্তমান কাঠামো পরিবর্তন : র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। র্যাবের বর্তমান কাঠামো পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হবে। এই ব্যাটালিয়ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। পুলিশ বাহিনীর ঝুঁকিভাতা বাড়ানো হবে। পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুলিশের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গৃহীত হবে। ইন্সপেক্টর ও সাব ইন্সপেক্টরদের বেতন ছয় মাসের মধ্যে আপগ্রেড করা হবে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণ অবসরে গেলেও তাদের রেশনিং সুবিধা প্রদান করা হবে।

নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টে : সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা হবে। বর্তমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-সহ সকল প্রকার কালাকানুন বাতিল করা হবে।

সরকারি চাকরির বয়সসীমা : দেশরক্ষা, পুলিশ ও আনসার ব্যতীত শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা থাকবে না।

বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি প্রতিবেদন প্রকাশ ও তদন্ত : বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত সকল অনুসন্ধান রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে এসবের অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ দেওয়া হবে।

জাতীয় প্রবৃদ্ধি হার ১১ শতাংশ : জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ১১ শতাংশের উন্নীত করা হবে। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডে যোগ্য, সৎ, দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত : অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ পরিচালনা ও তদারকির ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হবে।

দেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থানে ওয়ার্ক পারমিট : দেশে কর্মরত সকল বিদেশির ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় এনে মুদ্রাপাচার রোধ করা হবে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ : বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন ও অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে।

বেকার ভাতা চালু : এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত যেটাই আগে হবে শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। এদের যৌক্তিক অর্থনৈতিক উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। ২৫ বছর পর্যন্ত তরুণদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত নাগরিক ঘোষণা : সকল মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে। মূল্যস্ফীতির নিরিখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বাড়ানো হবে। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিত করে সেসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

টাস্কফোর্স গঠন : একটি রেন্টাল পাওয়ার প্রজেক্টের উচ্চ ব্যয়ের কারণ তদন্ত করে দেখবে।

দুস্থ, বিধবা ও অসচ্ছলদের বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি : দুস্থ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা ও অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমাণ মূল্যস্ফীতির নিরিখে বৃদ্ধি করা হবে। বেসরকারি ও স্বনিয়োজিত খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বার্ধক্যের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি পেনশন ফান্ড গঠন করা হবে। গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন : জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে ক্ষুদ্র বৃহৎ সকল জাতি গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মকর্মের অধিকার এবং জীবন সম্ভ্রম ও সম্পদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। এ লক্ষ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এ ছাড়া ইশতেহারে বলা হয়েছে প্রথম তিন বছরে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে দুই লাখ মানুষকে চাকরি প্রদান করা হবে। আর আগামী ৫ বছরে ১ কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। তরুণ দম্পত্তি ও উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ২০ বছর মেয়াদি ঋণ চালু করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads