• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ভোট এখনো কোর্টে

ভোট এখনো কোর্টে

প্রতীকী ছবি

নির্বাচন

ভোট এখনো কোর্টে

# ধানের শীষের আরো তিন প্রার্থীর প্রার্থিতা স্থগিত # অভিনেতা ফারুকের বিরুদ্ধে করা পার্থ’র রিট খারির্জ

  • সাঈদ আহমেদ
  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুই দিন। অথচ অনেক আসনের প্রার্থী রয়ে গেছেন অনিশ্চয়তায়। প্রার্থী থাকা না থাকা নিয়ে আদালতে চলছে আইনি লড়াই। রিট হচ্ছে, খারিজ হচ্ছে, আবার আপিল হচ্ছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক নতুন নতুন আবেদন পড়ছে। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে মিলছে ‘নো-অর্ডার’ও। ফলে আসন্ন নির্বাচনের শেষ মুহূর্তটা কোর্টের বারান্দায় কাটছে অনেক প্রার্থীর। কর্মী-সমর্থকরাও তাদের সঙ্গে  থাকছেন। এর সঙ্গে গায়েবি মামলায় আসামি হয়ে জামিনের আবেদন নিয়ে ভিড় তো রয়েছেই। যদিও সুপ্রিমকোর্টে চলছে ১৭ দিনের ‘শীতকালীন অবকাশ’। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক মামলা-মোকদ্দমার কারণে অবকাশকালেও সরব সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গন। সুপ্রিমকোর্টের একেকটি আদেশ পাল্টে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটের হিসাব। এ বিষয়ে আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এবারের মতো নির্বাচনের আগে প্রার্থিতার বৈধতা এতটা চ্যালেঞ্জ হয়নি। ইসি প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর সেটি চ্যালেঞ্জ হওয়া সংখ্যার দিক থেকে নজিরবিহীন। প্রার্থী বদলে যাওয়ার কারণে প্রার্থীর চেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়বেন ভোটাররা।

তিন আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থিতা স্থগিত : উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ না ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ধানের শীষের আরো তিন প্রার্থীর প্রার্থিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। প্রার্থীরা হলেন, নাটোর-৪ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী আব্দুল আজিজ, গাইবান্ধা-৪ আসনের ফারুক কবির এবং নরসিংদী-৩ আসনে একই প্রতীকের প্রার্থী মঞ্জুর এলাহী। তাদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। আদেশের পর সাজু বলেন, এ ৩ প্রার্থীই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বহাল থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু ওই পদটি লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় তারা সংসদ নির্বাচন করতে পারেন না। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা রিটে এসব তথ্য তুলে ধরে আবেদন করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রিটকারীদের আবেদন মঞ্জুর করেন। এদিকে বাতিল হওয়া প্রার্থীদের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ‘বাংলাদেশের খবর’কে বলেন, হাইকোর্ট প্রার্থিতা স্থগিত করায় আমরা সুপ্রিমকোর্ট যাব। প্রার্থিতা বাতিল নয়, স্থগিত করেছেন আদালত। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের ‘বৈধ’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। আপিলে আমরা এটি তুলে ধরব।

জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলে রিট : ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট হয়েছে। গতকাল বুধবার তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী রিটটি করেন। তার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে রিট করলে পরদিন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩ কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন জামায়াত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই মর্মে সিদ্ধান্ত দেয়। ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন ২৩ ডিসেম্বর বলেন, নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তাদের প্রার্থিতা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা হয় এ রিট। রিটে ধানের শীষ প্রতীকধারী ২৫ জামায়াত নেতার নাম এবং কে কোন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তা উল্লেখ করা হয়। রিটের তথ্য অনুসারে ধানের শীষ প্রতীকের জামায়াত প্রার্থীরা হলেন, ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পারোয়ার, পাবনা-৩ আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন, ঠাকুরগাঁও-২ আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, নীলফামারী-২ মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ ওয়াদুল শেখ, বাগেরহাট-৪ আবদুল আলীম এবং চট্টগ্রাম-১৫ আসনের শামসুল ইসলাম। ধানের শীষ ছাড়াও জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে বিএনপি অন্য কোনো প্রার্থী দেয়নি। এ ছাড়া জামায়াতের নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, জহিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৬ এবং ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান পাবনা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বলে উল্লেখ করা হয় রিটে। এর আগে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ১৯ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেন হাইকোর্ট।

আবেদন পড়েছে অর্ধ শতাধিক : হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চেও একের পর এক জমা পড়ছে আবেদন। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গতকালই অন্তত অর্ধশত আবেদন জমা পড়ে। এসবই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এবং এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরেক প্রার্থীর আবেদন। তবে আদালত সময় স্বল্পতার কারণে সবগুলোর শুনানি করতে পারবেন বলে মনে হয় না। নতুন করা আবেদনের মধ্যে কয়েকটির শুনানি হয়। আদেশও হয় কয়েকটির। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-১৭ ও জামালপুর-১ আসন।

ঋণখেলাপি হয়েও ঢাকা-১০-এ নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আকবর হোসেন পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক)। তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করেন একই আসনের ধানের শীষ প্রার্থী ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান প্রার্থ। রিটে বলা হয়, ফারুক ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। রাজধানীর মতিঝিলের সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে ৩ প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি ৫ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তার একক ঋণ হিসাবে ৩৬ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল হয়নি। শুনানি শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং বিচারপতি খায়রুল আলমের ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, এ রিটটি নির্বাচনের পরেও করা সম্ভব। এ বক্তেব্যর পর আন্দালিভ রহমান পার্থের আইনজীবী সাজেদ শামীম আবেদন ফেরত নেন। এতে ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে রিটটি খারিজ হয়ে যায়। ফারুকের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আইনগত বাধা অপসারিত হয়।

জামালপুর-১ আসনে (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) নৌকা প্রতীকে লড়ছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী রাশিদুজ্জামান মিল্লাত। তবে এর আগেই দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় মিল্লাতের প্রার্থিতা বাতিল করেন হাইকোর্ট। আপিল করলে সুপ্রিমকোর্ট সেটি ‘নো-অর্ডার’ হয়। হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকায় তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা তিরোহিত হয়। এদিকে আবুল কালাম আজাদের প্রার্থিতার বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করেন মিল্লাত। তিনি নিজের ছেলেকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন জানান। শুনানি শেষে আদালত সেটি খারিজ করে দেন। এ আদেশের ফলে জামালপুর-৩ আসন এখন ধানের শীষ মুক্ত।

৩০০ আসনে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের দিয়ে ভোটগ্রহণ ও গণনা চেয়ে করা রিটটির শুনানির তারিখ ছিল গতকাল। কিন্তু আদালত শীতকালীন অবকাশের পরে আসতে বলে আবেদনকারীকে ফিরিয়ে দেন। ফলে ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে রিটটি খারিজ হয়ে যায়। আজ (বৃহস্পতিবার) নির্বাচনের আগে একটি মাত্র কার্যদিবস। তাই আজো কিছু আদেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আদালতের একটি সূত্র।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads