• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ভোট দিতে পারেননি অনেকেই

ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচন

ইভিএম-বৃত্তান্ত

মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ভোট দিতে পারেননি অনেকেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

দুপুর ১২টা। রাজধানীর পুরান ঢাকার ‘সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার’ কেন্দ্র। গলির মুখটায় জনা পঞ্চাশেক নারী-পুরুষের ভিড় ঠেলে ভেতরে যেতে দেখা গেল জনা বিশেক ভোটারের একটি লাইন। সমান্তরাল রেলাইনের মতো ছোট্ট আরেক লাইনে নারী ভোটাররা। মিনিট দশেক অপেক্ষায়ও লাইন ছোট হচ্ছে না। পুলিশ-আনসারের নাতিদীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভেতরে ঢুকতেই ভিন্ন চিত্র। তিনটি কক্ষই খাঁ খাঁ করছে। ভোটার নেই। জানতে চাওয়া হলে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে জানালেন, এখানে ইভিএম তো, তাই একটু স্লো! চেহারায় করিৎকর্মা ভাব ফুটিয়ে এ প্রতিবেদকের সামনেই একজন নারী ভোটারকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটাধিকার প্রয়োগের তরিকা বাতলে দিলেন। ভোট দিতে ওই নারীর সময় লাগল ৭ মিনিট।

ঢাকা যে দুই আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে এর একটি হচ্ছে ঢাকা-৬। লাঙল প্রতীক নিয়ে এ আসনে ‘মহাজোট প্রার্থী’ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। মহাজোট ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হারিকেন প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ববি হাজ্জাজ। কেন্দ্র থেকে কয়েক গজ দূরেই ছোট জটলা। আসাদুল হক নামক ভোটার জানালেন, তিনি কেন্দ্রেই প্রবেশ করতে পারেননি। তার ভোট এ কেন্দ্রে হলেও থাকেন অন্য এলাকায়। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা দেখে তাকে লাঙ্গল প্রতীকের স্লিপ দিয়ে বলে দেওয়া হয় ওই মার্কায় ভোট দিতে। না হয় ইভিএমে তার যে ছবি এবং ভোটার নম্বর উঠবে ওটা ধরে পরবর্তী সময়ে তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন তা জানতে তাকে খুঁজে বের করা হবে। নির্বাচন পরবর্তী নিরাপত্তার কথা ভেবে ভয়ে তিনি ফেরত আসেন সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্র থেকে। পুরো কেন্দ্র জুড়ে ধানের শীষের কোনো এজেন্টের দেখা মিলল না। স্বতন্ত্র প্রার্থী ববি হাজ্জাজের এজেন্ট শামীমা জানান, তাকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অন্য এজেন্টদেরও বের করে দেওয়া হয়। জানতে চাওয়া হলে হারিকেন প্রতীকের প্রার্থী ববি হাজ্জাজ বাংলাদেশের খবরকে টেলিফোনে বলেন, এটি নির্বাচনের নামে কমেডি। কোনো কেন্দ্রেই আমার এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানানোর জন্য আমি এখন নির্বাচন কমিশনে আছি।      

ইভিএম পরিস্থিতি একই আসনের মদনমোহন বসাক রোড কেন্দ্রে ছিল তথৈবচ। স্লথ গতির কারণে ভোট দিতে পারেননি অধিকাংশ ভোটার। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সকাল থেকে ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক থাকলেও সকাল ১০টার পর থেকে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এ সময় মেশিন মন্থর হয়ে যাওয়ার কথা ওঠে। অধৈর্য হয়ে ভোটাররা উত্তেজিত হয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তর্কবিতর্ক, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটাররা আতঙ্কে ছুটোছুটি করে। এতে ছত্রভঙ্গ ভোটারদের লাইন ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ভোটগ্রহণ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। এরপর পুলিশ এসে উভয়পক্ষকে নিবৃত করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দুপুর ১২টা থেকে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু ততক্ষণে লাইনে থাকা ভোটাররা চলে যায়। এরপর আড়াইটার দিকে ওই কেন্দ্রের প্রধান ফটকে ভেতর থেকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। ৩টার পর ভোটাররা ভোট দিতে গেলে সিকিউরিটি গার্ড জানান, ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, (ইভিএম) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নষ্ট। চালুর চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি এক ঘণ্টা পর ভোট দিতে যাওয়ার অনুরোধ জানান। এখন বাজে সাড়ে ৩টা এক ঘণ্টা পর সাড়ে চারটা হবে। ভোটের সময়সীমা চারটা পর্যন্ত। সাড়ে চারটায় কীভাবে ভোট দেওয়া যাবে? একজন ভোটার এ প্রশ্ন করলে কর্তব্যরত আনসার সদস্য কোনো সদুত্তর দেননি।

এরপর বিকাল সাড়ে ৪টায় ওই ভোটার পুনরায় কেন্দ্রে যান। তখনো কেন্দ্রের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। মেশিন ঠিক হয়েছে কি না? জানতে চাইলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ভেতর থেকে এগিয়ে এসে বলেন, ভোটের সময় শেষ হয়ে গেছে। ঢাকা-৬ আসনের ৬৩৮  কেন্দ্রে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩১৫ এবং ঢাকা-১৩ আসনে ৮৭০  কেন্দ্রে  মোট ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৫ ভোটার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন সংযোজন ছিল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম। পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয় সারা দেশের ৬ আসনে। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসন। এসব আসনের ৮৪৫ কেন্দ্রের ৫ হাজার ৩৮ ভোটকক্ষে এ মেশিন ব্যবহূত হয়। এসব আসনে ৪৮ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। ৬ আসনের  ২১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৪ ভোটার এই যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৫২, নারী ভোটার ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৫০২।  এসব আসনের ৮৪৫ কেন্দ্রের ৫ হাজার ৪৫ ভোটকক্ষে ইভিএম ব্যবহূত হয়। ইসি জানিয়েছিল, ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ কিংবা চোখের আইরিশ যদি ম্যাচিং না হয়, তাহলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের মাধ্যমে তিনি ভোট দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে ওই ভোটার তার ভোটার আইডি নম্বর নিয়ে গেলে অথবা ভোটার আইডি নম্বর মুখস্থ বলতে পারলে এবং তা সঠিক হলে ভোটকক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই ভোটারের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু ঢাকা-৬ আসনের একাধিক কেন্দ্রে ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা যায়। অনেক ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads