• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

নির্বাচন

দুই সিটির ভোট পেছাচ্ছে না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জানুয়ারি ২০২০

সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ পরিবর্তন নিয়ে দাবি উঠলেও সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে আগামী ৩০ জানুয়ারিই এই দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি আদালতেও গেছে। কিন্তু আদালত নির্বাচন পেছানোর কথা বলেননি। আমরাও আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছি না। নির্বাচন ৩০ জানুয়ারিই থাকছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, সিটি নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কমিশনে কোনো প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়নি। ফলে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। এটা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। তবে আদালত যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেন তাহলে সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আদালতের কোনো নির্দেশনা না এলে সিটি নির্বাচন পেছানো কোনো সুযোগ নেই।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল শাখা নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের জন্য একটি পত্র দাখিল করা হয়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিবের কাছে সেই চিঠি দিয়েছেন ডিএসসিসি’র রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন। চিঠিতে আগামী ৩০ জানুয়ারি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ওই পূজা লগ্ন বা তিথির মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। তাই পূজার তারিখ পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করা হয়। 

ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অধিভুক্ত এলাকাসমূহে ব্যাপক সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকের বসবাস। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ পূজামণ্ডপ রামকৃষ্ণ মিশন অবস্থিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলও ওই এলাকাতে অবস্থিত। রামকৃষ্ণ মিশন ও জগন্নাথ হলে এলাকার আশপাশের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পূজা উপলক্ষে প্রচুর সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকের সমাগম ঘটে।

এ ছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে যেসব প্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেহেতু পুরাতন ঢাকা একটি ঘন জনবসতি সংকীর্ণ এলাকা, তাই ওই এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া পূজা পালন করা অনেকাংশেই সম্ভবপর হবে না। সার্বিক বিবেচনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় কাজ সুচারুভাবে পালন করার স্বার্থে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করার সুপারিশের যৌক্তিকতা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আবেদনপত্রটি মহোদয়ের কাছে পাঠানো হলো।

এদিকে সরস্বতী পূজার দিন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ হওয়ায় তা পুনর্বিবেচনার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। গত শনিবার ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানান।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একই দিনে সরস্বতী পূজা ও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখরতায় বিঘ্ন ঘটা ও নির্বাচন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ এর একটি সুস্পষ্ট, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুন্দর সমাধান চায়। শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছে।

এর আগে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এই নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছিল। তাদের এ দাবি আমলে নেয়নি ইসি। এই নির্বাচনের তারিখ পেছাতে হাইকোর্টে রিটও করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আদেশ দেন।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ বলেন, রিটটি এই আদালতের এখতিয়ারভুক্ত না হওয়ায় তা কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলেছেন আদালত। সে হিসেবে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটি উপস্থাপনের জন্য মেনশন স্লিপ জমা দেওয়া হয়েছে। কাল সোমবার এই বেঞ্চের কার্যতালিকায় আবেদনটি আসতে পারে।

গত শুক্রবার থেকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর দুই সিটির প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে নেমেছে।  আগামী ৩০ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ চলবে। পুরো ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads