ষাটোর্ধ ভোটার মো: শাহআলম। নতুন ইভিএম পদ্ধতি কী তা জানেন না তিনি। তবে প্রচণ্ড আগ্রহ আর ভয় ছিলেন এ পদ্ধতি ভোট নিয়ে। এবার ভোটের আগে মক ভোটিং (অনুশীলনমূলক ভোট) দিতে পেরে তিনি খুবই খুশি। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণার আগ থেকেই শোনা যাচ্ছে- এইবার সিল টিপ দিয়ে ভোট হবে না। তাই ভোট নিয়ে রীতিমত চিন্তায় ছিলেন তিনি। মক ভোটিং দিয়ে তার সংশয় দূর হয়েছে।

শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নতুন পদ্ধতি ইভিএম প্রদর্শনীতে ভোট দেওয়া শেখার পর তিনি এসব কথা বলেন।

ভোটার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে ভোটার নং বলে সিল দিয়ে ভোট দেওয়া হতো। তবে ছবি দেখা যেতো না। কিন্তু নতুন এই পদ্ধতিতে মেশিনে আঙুল চাপ দেওয়ার সাথে সাথে আমার ছবি ভাসছে। এরপর একটা জায়গায় প্রার্থীদের প্রতীক আসছে সেই প্রতীকে টিপ দেওয়ার সাথে সাথে ভোট দেওয়া হয়ে যায়। এখানে না আসলে এটা সম্পর্কে কিছুই বুঝতাম না। এই পদ্ধতি খুবই ভালো পদ্ধতি। কেউ আর এখন জাল ভোট দিতে পারবে না।

ভোটার সৈয়দ জগলুল আজিজ বলেন, শুনছি এই পৌরসভা নির্বাচন মেশিনে (ইভিএমএ) ভোট গ্রহন হবে। কোনোদিন মেশিনের মাধ্যমে ভোট দেওয়া হয়নি। এজন্য ভোট দেওয়া নিয়ে অনেক ভয় ছিল। তবে মক ভোটিং (অনুশীলনমূলক ভোট) দিয়ে সব ভয় দুর হয়েছে। তিনি বলেন আসলে এই পদ্ধতি ভোট দেওয়া খুবই সহজ। কোন প্রকার জামেলা নেই বলে জানায়।

মো. টিপু খান বলেন, ভোট নিয়ে সংশয় থাকলে ও আজ তা দুর হয়েছে। এ পদ্ধতি খুবই ভালো একটি পদ্ধতি। নিজের ছবি ও পরিচয় দেখে ভোট দেওয়ার আনন্দ অনেক বেশী।

জানা যায়, ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে এ পৌরসভা গঠিত। পৌর এলাকায় ১১ টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। প্রথমবারের মতো এ পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নতুন এই পদ্ধতির সঙ্গে ভোটাররা অপরিচিত। তাই ভোটারদের ভয় কাটিয়ে তুলতে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের উদ্যোগে পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রে স্থানীয় ভোটারদের অংশগ্রহণে মক ভোটিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে করে স্থানীয় ভোটাররা ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছেন। এ পৌরসভায় মোট ভোটারসংখ্যা ২৮ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ২৩১ জন ও নারী ১৪ হাজার ৬৭৯ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১১টি। মেয়র পদে ৪ জন মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১ জনসহ মোট ৫৫ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের আয়োজন করায় অনেক প্রার্থী নিজের পক্ষে প্রচারের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মগ ভোটিংয়ে অংশ নিতে আহবান জানান।

ৱপৌর এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এলাকায় ‘ভোট চাইতে গেলে সাধারণ ভোটাররা জানতে চান ইভিএম মেশিনে কীভাবে ভোট হবে। মেশিনে কোন ঝামেলা হবে কি না। কিন্তু তবে আজ ভোট প্রদান প্রদর্শনী আয়োজন করায় তাদের সেই ভয় দুর হয়েছে ।

সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রেখা খানম বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে ভোটারদের কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের আয়োজন বেশি দরকার ছিল। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট প্রদান প্রদর্শনী আয়োজন করায় তাদের সেই ভয় যেন অনেকাংশেই দুর হয়েছে । এ পদ্ধতিতে নির্বাচনে কারচুপি বা জাল ভোটের কোন সুযোগ নেই।’

তারাগন সরকারি প্রাথমিক দ্যিালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী বলেন, মক ভোটিংয়ে সকাল থেকেই সাধারণ ভোটারদের ভালো সারা পাওয়া যাচ্ছে। বিকাল পযর্ন্ত চলে এ কার্যক্রম।

উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. জহুরুল আলম বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এ পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী রোববার। আমরা ইভিএম পদ্ধতিতে কিভাবে ভোট প্রদান করা হয় সে সম্পর্কে কেন্দ্রে কেন্দ্রে মগ ভোটিংয়ের আয়োজন করে সাধারণ ভোটারদের ধারণা দেওয়া হচ্ছে।