• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

অশুভ বিশ্বরাজনীতির শিকার শিশু আমাল

মানবাধিকার নিশ্চিত করুন

  • প্রকাশিত ০৫ নভেম্বর ২০১৮

মানুষের ইতিহাস যত প্রাচীন, যুদ্ধের ইতিহাসও তত পুরনো। সত্য ও মিথ্যার কিংবা ন্যায় ও অন্যায়ের লড়াই সব যুগেই প্রচলিত ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গণহত্যা, গৃহযুদ্ধ ও সন্ত্রাস— বিশ্বের এক তালগোল পাকানো জটিলতা। দুটি মহাযুদ্ধের ক্ষত বহনকারী এই পৃথিবীর বুকে এখনো যুদ্ধের বিভীষিকা ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটে চলেছে। মানবিক দিকশূন্য হয়ে পড়েছে আজ রাষ্ট্র ও বিশ্বনেতারা। তারই উদাহরণ গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত ইয়েমেনের সাত বছরের শিশু আমালের অসহায় মৃত্যু।

ইয়েমেনের এই দুরবস্থা মূলত সৌদি আরব ও ইরানের ছায়াযুদ্ধ। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে হুথি বিদ্রোহীরা মনসুর আল-হাদির সরকারকে উৎখাত করতে রাজধানী সানায় প্রবেশ করে। ফলে শুরু হয় মধ্যপ্রাচ্যের সব থেকে দরিদ্র দেশ ইয়েমেনে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ। সৌদি আরব মনে করে বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা থেকে সৌদি আরব হাদির সমর্থনে ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। সেই থেকে প্রলম্বিত হয়েছে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ। বাড়িঘর ছেড়েছে হাজার হাজার ইয়েমেনি। শরণার্থী শিবিরে দুর্ভিক্ষের শিকার অসহায় নর-নারী ও শিশু। শিশু আমালের মৃত্যু তাই বিশ্ববিবেককে করেছে ক্ষতবিক্ষত।

বর্তমানে আরব নেতারা নিজেদের ক্ষমতার বলয়কে নিশ্ছিদ্র করতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে করে তুলেছেন টালমাতাল। আরববিশ্বে ইসরাইল ও মার্কিন পরাশক্তি তাদের প্রভাববলয় সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কৌশলে সৌদি আরবকে দিয়ে নানারকম কাজ করিয়ে আসছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশে দেশে জাতিগত দ্বন্দ্ব ও গৃহযুদ্ধ। আর এই উদ্দেশ্যকে কার্যকর করার জন্য অকার্যকর করে রাখা হয়েছে আরব লিগ ও ওআইসির মতো সংস্থাকে। আরববিশ্বের অনৈক্যের এই সঙ্কট ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধকে শুধু প্রলম্বিত করেনি, দেশটিকে বিপর্যয়ের খাদে ফেলে দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদকে কেন্দ্র করে কাতারের সঙ্গে এবং কথিত পরমাণুু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ইরানের উত্থানে সৌদি আরবের দ্বন্দ্ব এতদাঞ্চলকে করেছে অস্থিতিশীল। উপরন্তু সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ কিংবা আরব বসন্তের নামে মিসরে অস্থিতিশীলতায় আরববিশ্বের নীরবতা এই অনৈক্যকে দীর্ঘায়িত করেছে। অন্যদিকে বর্তমান সৌদি শাসক দুর্নীতির নামে নিজের মসনদকে নিষ্কণ্টক করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কিন্তু নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা এবং জাতিসংঘকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের উত্থানে আরববিশ্বকেও বুঝতে হবে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি কতটা জরুরি। আর এক্ষেত্রে নিজেদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরব বিশ্বের একযোগে কাজ করা এখন সময়ের দাবি। সাম্প্রতিক সময়ে পুতিন-ট্রাম্পের জবরদখলের পররাষ্ট্রনীতি, চীনের কৌশলী পদক্ষেপ এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তির

অন্তরালে পৃথিবীব্যাপী বিশ্বমোড়ল আর আঞ্চলিক মোড়লদের এই স্নায়ুযুদ্ধ যদি মহাযুদ্ধের দিকে পৃথিবীকে ঠেলে দেয়, তাহলে মানবজাতির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠবে। বিশ্বে নিরপরাধ মানুষ হত্যার জবাবদিহিতা তখন বিশ্ববিবেক বলে খ্যাত জাতিসংঘকেই করতে হবে। পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ এর পরিত্রাণ দেখতে চায়। আর তা করতে হবে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads