• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই

জ্ঞানলাভের প্রেরণা হোক

  • প্রকাশিত ০৩ জানুয়ারি ২০১৯

নতুন বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের কমবেশি সাড়ে চার কোটি কোমলমতি শিক্ষার্থীর হাতে। বিনামূল্যে ছেলেমেয়েদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম ২০১০ সালে শুরু হলেও সূচনায় যথেষ্ট সুসমন্বিত ছিল না। সীমাবদ্ধতা ছিল নানারকম। বই পৌঁছাতেও বিলম্ব হয়ে যেত কোনো কোনো বছর। এখন সেসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভবপর হয়েছে অনেকটাই। নতুন বছর ২০১৯-এর ১ জানুয়ারি ছিল তাই শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন এক মিলন মেলা।

আজিমপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিক পর্যায়ের শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আয়োজন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই বই উৎসব গতকাল সারা দেশে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত উদযাপিত হয়। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটাই নতুন বাংলাদেশ। আর এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন।

বাস্তবিক পক্ষেই শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন উৎসাহব্যঞ্জক। সবক্ষেত্রে সবশ্রেণির মানুষের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া সহজ-সম্ভব করে তোলা হয়েছে অনুপ্রেরণামূলক বিবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে। পৌর এলাকার বাইরে চালু রয়েছে উপবৃত্তি কর্মসূচি। অতীতে এ কর্মসূচিটি ছিল কেবল মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্যে। এখন সেই ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে। সরকারি ফ্রি প্রাইমারি স্কুল পর্যায়েও মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হয়। পিছিয়ে থাকা প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও স্কুলগামী ছেলেমেয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। স্কুলও স্থাপিত হয়েছে প্রায় সব গ্রামেই। মাঝপথে ঝরে পড়ার হারও অনেক কমে এসেছে। অগ্রসরমানতার এই ধারা ধরে রাখতে হবে অবশ্যই।

এই অগ্রসরমানতার পরিধিও বেড়েছে। কেননা আমরা এও জানি যে, পাহাড়ি জনপদে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে তাদের নিজ ভাষার পাঠ্যবই। চাকমা ও মারমাসহ পাঁচটি ভাষায় বই সরবরাহ করা হয়েছে দেশের ২৪টি জেলায়। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাও তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যবই পাবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অডিওসহ ব্রেইল পদ্ধতির বই দেওয়া হচ্ছে আগে থেকেই। স্বল্পোন্নত বিশ্বের আরো অনেক দেশে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব থেকে এগিয়ে।

এ বছর দেশের ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মোট ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি পাঠ্যবই। আর ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিতরণ করা হয়। তবে এবারই প্রথম শিক্ষানুরাগী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণিতে সম্পূরক কৃষিশিক্ষা পাঠ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে আর কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আমরা মনে করি কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুল পর্যায় থেকেই কৃষিশিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা জীবনের শুরু থেকেই এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনে সক্ষম হয়। এটি তাদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনেও ভূমিকা রাখবে। সর্বোপরি এই বই উৎসব শিক্ষার্থীদের জ্ঞানলাভের অনুপ্রেরণা হিসেবে ধরা দিক, এই কামনা করি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads