• রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

শীর্ষ অর্থনীতির দেশ

জনগণের অবদানই মুখ্য

  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০১৯

লন্ডনভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) বলছে, ২০৩২ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ। প্রণীত হতে যাওয়া ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল (ডব্লিউইএলটি)-২০১৯ শীর্ষক তালিকার বরাত দিয়ে বাংলাদেশের এই অর্জনের খবর দিয়েছে দৈনিক বাংলাদেশের খবর। দেশের সচেতন নাগরিকদের নিশ্চয়ই মনে পড়ছে আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সেই পুরনো কথাটি— ‘বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি’। না, হেনরি কিসিঞ্জারের সে কথা ২০১৯ সালের শুরুতে সিইবিআর-এর এমন তথ্যে আবারো ভুল প্রমাণ হলো। বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, স্বনির্ভরতার পথে তর তর করে এগিয়ে যাওয়া এক রোল মডেল।

ডব্লিউইএলটি’র তালিকা অনুযায়ী, আগামী ১৩ বছরে অর্থাৎ ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫টি শীর্ষ অর্থনীতির দেশের তালিকায় স্থান করে নেবে। এই তালিকায় চলতি বছর বাংলাদেশের স্থান হতে চলেছে ৪১তম। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চলমান গতির কারণে বাংলাদেশ বেশ দ্রুতই উপরের দিকে উঠে আসবে বলে ডব্লিউইএলটি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এমনকি সিইবিআর আরো জানায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৬ এবং ২০২৮ সালে ২৭তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। বৈশ্বিক আর্থিক গবেষণা সংস্থা সিইবিআর তার ডব্লিউইএলটি নামক প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের এসব অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। 

বাংলাদেশের এই আমূল পরিবর্তনের পেছনে মূল অবদান রেখেছেন দেশের জনগণ। যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপুল উন্নতিতে বাজার অর্থনীতির ছোট-বড় বিনিয়োগ পৌঁছে গেছে একবারে তৃণমূলে। গ্রাম হয়ে যাচ্ছে শহর। কর্মসংস্থান বেড়ে চাহিদা তৈরি হয়েছে ভোগের, তাই গড়ে উঠেছে ব্যবসাকেন্দ্র। দেশের পোশাক শিল্প, কৃষি, ফলফলাদি, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্পসহ সর্বস্তরে বেড়েছে কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যয় সংকোচন হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবন-জীবিকার সর্বক্ষেত্রে। বেড়েছে দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য রফতানির হার। যে কারণে বেড়েছে দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)।

অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বে যোগাযোগের এই আমূল পরিবর্তনেই বদলে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতির চেহারা। শিল্পবান্ধব স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশও এই অগ্রযাত্রার আরেক নিয়ামক। সম্পদের দ্রুত বৃদ্ধির বিবেচনায় বাংলাদেশের এই অভাবনীয় অগ্রযাত্রা সত্যিই আনন্দের ও সুখকর। এই অগ্রযাত্রার পেছনে দেশের ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার ও উৎপাদনমুখী অর্থনীতি, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ভূমিকাই প্রধান কারণ বলে আমরা মনে করছি। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রবাহও আরেকটি উন্নয়ন সূচক হিসেবে চিহ্নিত হবে। মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে বিদেশে শুধু শ্রমিক প্রেরণই যথেষ্ট নয়, প্রবাসী শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারেও সচেষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বৈধ পথে আনতে সরকার সম্প্রতি পেপালের জুম সার্ভিস চালু করেছে, এতে হুন্ডি বা অবৈধ পথে অর্থ আসা বন্ধ হবে বলে আমরা আশা করি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরো বাড়াতে বিদেশে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এটা জরুরি। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক সূচককে করবে সমৃদ্ধ এবং সহায়ক হবে শীর্ষ অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে। তবে এ জন্য প্রবাসী আয় ঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। 

দেশের শিল্পবান্ধব পরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নতির পাশাপাশি সুশাসনের চর্চা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা আরো বহুমাত্রিক উজ্জ্বলতা পাবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এক্ষেত্রে দেশের সাধারণ মানুষের অবদানই মুখ্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads