• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

নিয়ন্ত্রণহীন দেশের ওষুধ বাজার

সক্রিয় হোক ওষুধ প্রশাসন

  • প্রকাশিত ০৯ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের অধিকাংশ মানুষই রোগে আক্রান্ত। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ওষুধ অপরিহার্য। কিন্তু এই জনগোষ্ঠী ওষুধ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ দেশের ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায় রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত ওষুধের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। যেভাবে পারছে ঠকানো হচ্ছে ক্রেতাদের।

দেশব্যাপী বৈধ-অবৈধ প্রায় ২ লাখ খুচরা ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দামে ওষুধ বিক্রি করছেন। তাদের এ কাজে সহায়তা করেন ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা। তাদের সহযোগিতায় বিক্রেতারা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে এবং ওষুধের প্যাকেটে উল্লেখ থাকা খুচরা মূল্যে বিক্রি না করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চড়া দামে বিক্রি করছেন।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, রাজবাড়ীতে ১২ টাকা মূল্যের একটি ইনজেকশন ৮০০ টাকায় বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারে ব্যবহূত সেলাই সুতার দাম ১৫-২০ টাকা। রাজধানীর শাহবাগের একটি দোকানে এই সুতার দাম নেওয়া হয় ৬০০ টাকা। যশোরে একটি দোকানে বমির ওষুধ কিনতে গেলে দাম রাখা হয় ১৯০০ টাকা। অথচ ওষুধের প্রকৃত দাম মাত্র ৬০ টাকা। এ ধরনের ঘটনা দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রতিনিয়ত ঘটছে।

ওষুধের দাম প্রতি পাতায় (ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলের ক্ষেত্রে) লেখা থাকে না। লেখা থাকে ৫ পাতা বা ১০ পাতার একটি বাক্সে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতা প্যাকেটের গায়ের দাম দেখার সুযোগ পান না। অন্যান্য পণ্যের মতো ওষুধের দাম সম্পর্কে রোগীদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রোগীদের মুখ দেখেই একশ থেকে দুইশ গুণ দাম বাড়াতেও দ্বিধা করে না অসাধু বিক্রেতারা।

এই চক্র দেশের সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যসন্ত্রাস চালালেও নির্বিকার সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিপণন খরচ মেটাতে সময়-অসময় দাম বাড়ায় ওষুধ কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো— মাত্র ১১৭টি ওষুধ ছাড়া বাকিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই প্রশাসনের। ফলে কারণে-অকারণে ওষুধের দাম বৃদ্ধির নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।

অবশ্য ১১৭টি ওষুধ সরকারের কাছে রেখে বাকি ওষুধগুলোর মূল্য নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো— এমন প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সোমবার হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি জানান, দ্য ড্রাগস (কন্ট্রোল) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২ মতে, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার; যেখানে মাত্র ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার। বাকি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোম্পানির। এটা তো আইনের ব্যত্যয়।

দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সরবরাহকারী ও বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কোনো ওষুধের দাম বাড়ায়নি কোম্পানিগুলো। তবে ডিসেম্বরের আগে বেশকিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বিদেশি ওষুধের কারণেও দামের তারতম্য দেখা যায়। যেমন ক্যানসারের কেমোথেরাপির ওষুধের দাম সম্প্রতি বেড়েছে।

১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশে যে কোনো ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের ছিল। কিন্তু বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ নেই কেন? তা ছাড়া প্রশাসনের কাজ চালাতে প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় দেশের সব ওষুধের দোকানের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয় না— সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন অজুহাতও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ওষুধ প্রশাসন ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হবে— এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads