• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি

সাইবার হামলা

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

সাইবার হামলা

ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি

  • প্রকাশিত ১২ মার্চ ২০১৯

বিশ্বব্যাপী আইটি ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। সাইবার হামলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সাংসদ, শিল্পপতি, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ইমেইল ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যাচ্ছে হরহামেশা। তবে হ্যাকাররা বিশেষ করে আর্থিক খাতকেই তাদের লক্ষ্য করে তুলেছে। আর তাই ব্যাংকিং সেক্টরে এই ঝুঁকি বেশি। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতও এর বাইরে নয়। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বড় ধরনের সাইবার হামলা ঘটলে তা প্রতিরোধে দেশের ২৮ শতাংশ ব্যাংকের সক্ষমতা নেই। ৩৪ শতাংশের রয়েছে আংশিক সক্ষমতা। আর যে কোনো ধরনের সাইবার হামলা ঠেকাতে পুরোপুরি প্রস্তুত ৩৮ শতাংশ ব্যাংক। অতএব দেখা যাচ্ছে, অর্ধেকের বেশিসংখ্যক ব্যাংকই রয়ে গেছে সাইবার হামলার ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় আইটি ও সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকিং খাতের আরো প্রস্তুতির ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে দেশ এখন তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রসরমান। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে টেকসই অবস্থান তৈরি করতে গেলে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা অর্জনও জরুরি। বিআইবিএমের গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০টি জালিয়াতির ঘটনা বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়েছে যে, এটিএম কার্ডের জালিয়াতির ঘটনাই বেশি। প্রায় ৪৩ শতাংশই এটিএম কার্ডের জালিয়াতি। এর পরেই রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। মোবাইল ব্যাংকিং আজ গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে গেছে। নিরাপদে টাকা পাঠানো ও উত্তোলনে এর জুড়ি নেই। কিন্তু বিকাশ, রকেট প্রভৃতি নামের মোবাইল ব্যাংকিংয়েও প্রতারণার ঘটনা জানা যায়। বিশ্বব্যাপী হ্যাকারদের মতো একটি চক্র এর সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা চুরি যাওয়া বড় ধরনের সাইবার হামলারই অংশ। অন্যদিকে অর্থ পাচারের যে ঘটনাগুলো আমাদের সামনে আসে, তা মূলত আমাদের আইটি খাতের দুর্বলতাকেই প্রমাণ করে। 

সুতরাং ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইটি বিশেষজ্ঞ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি বলেই বিবেচিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে আইটি জ্ঞান স্পষ্ট থাকা জরুরি হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ব্যাংকের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সব ক্ষেত্রে কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না; বরং সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোকে নিজেদের উদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একুশ শতকের পৃথিবী তথ্য-প্রযুক্তির পৃথিবী। আর তাই ব্যাংকে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আইটি বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান আছে কি-না তা যাচাই করে নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক বলে মনে করছি। আবার ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার করতে গেলে আইটি খাতেও বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা জোরদারকরণসহ সংশ্লিষ্ট কর্মীকে আইটি খাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে পারদর্শী করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। 

এমতাবস্থায় ব্যাংকিং খাতকে টেকসই করতে গেলে আসছে বাজেটে আইটি প্রযুক্তির উন্নয়নেও বিশেষ প্রণোদনা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টর ও আইটি প্রযুক্তির সমন্বয়ের ভিত্তিতে আসন্ন বাজেটে অর্থছাড়ের জন্য বিশেষ নজর দেওয়া যেতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। আর্থিক খাত হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টরের নিরাপত্তা প্রদান আমাদের প্রধান দায়িত্বের মধ্যে বর্তায়। বিষয়টি বিবেচনার জন্যে সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads