• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও কাগজ শিল্পের সঙ্কট

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন

  • প্রকাশিত ০৫ এপ্রিল ২০১৯

বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন - বিপিএমএ’র পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে, দেশীয় কাগজ শিল্প টিকিয়ে রাখার স্বার্থে গ্যাসের দাম বাড়ানো ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অপরিণামদর্শী’। সংগঠনের লিখিত বিবরণে বলা হয়েছে, বর্তমানে গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে টনপ্রতি কাগজের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে ১০-১৫ হাজার টাকা। এই খরচ বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বাজারে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা। এমতাবস্থায় সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি যেন বাস্তবায়ন না করা হয়। তাদের মতে, এটি হবে শিল্পের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সঙ্গত কারণে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। তখন মানুষ বিদেশি পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকে পড়বে। আর তারই প্রভাব পড়বে দেশীয় কাগজ শিল্পের ওপর। তাই গ্যাসের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ থেকে সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদানে প্রানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছে কাগজ শিল্পের সংগঠন বিপিএমএ’র নেতারা। আমরাও মনে করি শিল্পের স্বার্থে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে শিল্পসহায়ক স্থিতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেবেন।

একথা স্বীকার করে নিতে হবে যে, দেশীয় কাগজ মিলগুলো নিজেদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে কাগজ শিল্পকে স্বয়ংসম্পূর্ণ খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশের বিনিয়োগকারীরা এই শিল্পের বিকাশে নতুন প্রযুক্তি সংযোজন করছেন। দেশীয় কাগজ শিল্পের উদ্যোক্তারা এই খাতে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বহুমুখী প্রচেষ্টার ফলে উৎপাদন বেড়েছে। আবার গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কাগজ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশের কাগজ উৎপাদকরা যুক্তিসঙ্গত কারণে ইউরোপের বাজারে কাগজ রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সুবিধা দাবি করছে। কিন্তু আশ্চর্য লাগল সরকার যখন দেশীয় কাগজ শিল্পের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে, তখনই নানান জটিলতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ শিল্পে দেখা দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। আমরাও মনে করি, একটি শিল্প যখন অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সমৃদ্ধির স্বপ্নে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায়, তখন এর গতিসঞ্চারে সরকার আরো সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়াটাই উন্নয়নবান্ধব নীতি হওয়ার কথা। কিন্তু এখন গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্পটি সন্দেহাতীতভাবে বাধা ও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, শুল্ক ফাঁকি ও বিদেশে টাকা পাচারসহ অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রকদের কারসাজিতে  হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ইসিজি পেপারের ঘোষণা দিয়ে থার্মাল ও কার্বনলেস পেপার আমদানি করছে। ‘শুল্কমুক্ত সুবিধা’ নিয়ে বিদেশ থেকে সাদা কাগজ, আর্ট কার্ড ও সুইডিশ বোর্ড আনা হচ্ছে। খোলাবাজারে এসব পণ্য বেচাকেনার ফলে দেশীয় কাগজ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিযোগ আছে, দেশীয় কাগজ বাজারজাত করতে বিএসটিআইর মান নিয়ন্ত্রণ সনদ বাধ্যতামূলক থাকলেও আমদানি করা কাগজের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই! এসব প্রতিবন্ধকতা অবিলম্বে দূর করা দরকার।

তথ্যমতে, দেশে কাগজের বাজার প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার। চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের কাগজ কলগুলো প্রায় ৩০টি দেশে রফতানি করছে। যার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে বাংলাদেশ। দেশের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দেওয়ার সাফল্যের পেছনে দেশীয় কাগজের উৎপাদন ও সরবরাহ বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ এবং পরোক্ষভাবে ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। কাগজ শিল্পকে  কেন্দ্র করে দেশে প্রায় ৩০০টির অধিক সহায়ক শিল্প গড়ে উঠেছে। তাই কাগজ উৎপাদনের অন্যতম মূল উপাদান গ্যাস ও বিদ্যুতের অপ্রতুলতা, দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি এবং সংযোগের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতার কারণে কাগজ উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়, এ বিষয়ে সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads