• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

সোনার বাংলা গড়তে চাই দেশপ্রেম

  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০২০

মু. সায়েম আহমাদ

 

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। বহু আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা। বুক ভরা আশা নিয়ে এ দেশের সর্বস্তরের মুক্তিকামী মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করার পর ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ৪৯ বছর হয়ে গেল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে সুজলা-সুফলা প্রকৃতিতে ঘেরা প্রিয় বাংলাদেশের অর্জন কিন্তু কম নয়। শিক্ষা থেকে শুরু করে অর্থনীতি শিল্প-বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ সব সেক্টরে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশকে বদলে দিতে বা এগিয়ে নিতে এদেশের মানুষের অবিরাম অন্তহীন প্রচেষ্টা স্মরণযোগ্য। আর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তরুণ-যুবারা। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছরে কেমন বাংলাদেশ চাই, এ প্রশ্ন থেকে যায়।

নিশ্চয়ই এ দেশের মানুষ সামাজিক বন্ধন শিথিল হোক, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক তা চায় না। আর চায় না বলেই, আমরা কোনো নারীর অপমান, ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, সব ধরনের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশকে দেখতে চাই। অথচ সম্প্রতিকালে এ দেশে নারীরা যেন নিরাপদ নয়— না গৃহে, না পথে, না কর্মক্ষেত্রে। অথচ একটি স্বাধীন দেশে এরূপ ঘৃণিত কাজ মোটেই কাম্য ছিল না। স্বপ্ন দেখি মানুষের নিরাপত্তা দেবে এই রাষ্ট্র। আমাদের দেশের নারীরা এবং প্রত্যেক জনগণ পাবে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা। সেই বাংলাদেশ চাই, যেখানে চাঁদাবাজি, মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ ঘৃণিত কার্যক্রম সংঘটিত হবে না। আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, সুশাসনের অধিকার পাক প্রতিটি জনগণ। এ দেশের মানুষের একতা ও দেশপ্রেম হবে উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার।

একথা সত্য, দেশপ্রেম ছাড়া উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন সাধনে সর্বদা সচেষ্ট। ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন ঘটানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার। তাই একজন নাগরিক হিসেবে আশাবাদী, ওই পরিকল্পনাগুলো খুব শীঘ্রই বাস্তবে রূপ নেবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তরুণদের কাঁধে ভর করে এগিয়ে যাবে প্রিয় স্বদেশ। কারণ আজকের তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। এ দেশের কর্ণধার। এমন একটি বাংলাদেশ জনগণ আশা করে, যেখানে অস্ত্র নয় মেদাই হবে প্রধানতম হাতিয়ার। শিক্ষার মাধ্যমে এ দেশের প্রত্যেক নাগরিক আলোকিত দেশ এবং উন্নয়ন দেশ হিসেবে গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অথচ খুব বেদনার সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদেরও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও ঘৃণার দাবি রাখে। শিক্ষকরা হচ্ছেন এ দেশের আলোকবর্তিকা। শিক্ষকদের সঠিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সমাজে যখন সামাজিক বন্ধন শিথিল হতে থাকে, তখনই এমন সব বর্বর ঘটনার জন্ম হয়। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। আগামীর প্রজন্মকে সেই নৈতিক শিক্ষায় গড়ে তুরতে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। তখন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না। অনাহারে থাকবে না একজন পথশিশুও। আজ আমাদের প্রয়োজন ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়। আর তার জন্যে বেকারত্বের অভিশাপ থেকেও আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিনিয়োগ, শিল্পকারখানা স্থাপন, চাকরির বাজার সম্প্রসারণ, নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে এদেশ উন্নত রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে যেতে পারবে।

মূলত দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তির অজ্ঞানতা এবং ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের অভাব থাকায় সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। বর্তমান সরকারকে এসব সমস্যা সমাধানে নিতে হবে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। যেমন দুর্নীতির ক্ষেত্রে নিয়েছেন জিরো টলারেন্স নীতি। কেননা দুর্নীতি একটি দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। সাম্প্রতিকালে আমাদের দেশে অনেক ধরনের দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে, করোনাকালীন সময়ে সরকারি সহায়তা (ত্রাণ) দুর্নীতি। করোনা পরীক্ষায় নকল সার্টিফিকেট প্রদান করে প্রবাসীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি। যার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই দুর্নীতি একটি দেশের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই দুর্নীতিকে পরিহার করতে পারলে দেশের উন্নয়ন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। আর এই দুর্নীতির কবলে পড়ে ঢাকা শহর আজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। ঢাকা শহরকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে চাই সুনিপুণ পদক্ষেপ।

সবশেষে বলবো, আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে, কিন্তু শিক্ষার গুণগতমান বাড়েনি। তাই শিক্ষার প্রকৃত মান বাড়াতে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্ধন, পরিমার্জন জরুরি। পাশাপাশি যানজটমুক্ত রাজধানী গড়তে প্রয়োজন সুপরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি নগর পরিকল্পনা। সুতরাং দুর্নীতিমুক্ত, ধর্ষণমুক্ত, মাদকমুক্ত, যানজটমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রতিটি নাগরিককে হতে হবে দেশপ্রেমিক। সেই দেশপ্রেমের অত্যুজ্জ্বলে গড়ে তুলতে হবে আগামী প্রজন্মকে। তবেই পৃথিবীর মানচিত্রে শান্তি-শৃঙ্খলার বাংলাদেশের জন্ম হবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads