• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ট্রাম্প কি ‘ওভার ট্রাম্পে’ সফল হবেন

  • মহিউদ্দিন খান মোহন
  • প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ‘ওভার ট্রাম্প’ করার চিন্তাভাবনা করছেন। ভোটের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার মনস্থির করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচনী ফলাফলকে নিয়ে ট্রাম্প যে ওভার ট্রাম্প খেলতে যাচ্ছেন, তাতে তিনি সফল হতে পারবেন কি না। রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল এক্ষেত্রে ট্রাম্পের জন্য কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। তারপরও ট্রাম্প তার অবস্থানে এখনো অনড় আছেন।

ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজয়কে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিপুল ব্যবধানে ধরাশায়ী করেছেন জো বাইডেন। ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে বাইডেন তার ঝুলিতে তুলেছেন ২৯০টি। আর ট্রাম্পের থলেতে পড়েছে ২১৪টি। আলাস্কা ও নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাষ্ট্র দুটিতে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও তাতে তার ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা ওই দুটি অঙ্গরাষ্ট্রে ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে ১৮টি, যার সবকটি ট্রাম্প পেলেও ভোটের ফলাফলে কোনো হেরফের হবে না।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। এমনিতেই এবারের নির্বাচন বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল নানাবিধ কারণে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভিন্ন উক্তি, পদক্ষেপ গত চার বছর ধরে ছিল আলোচিত-সমালোচিত। নির্বাচনপূর্ব বেশ কয়েকটি জরিপে এবারের নির্বাচনে মার্কিন জনগণের প্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছিল। এমনকি ভোটের আগে দুই দফা অনুষ্ঠিত সরাসরি বিতর্কেও বাইডেন এগিয়ে ছিলেন অনেক ব্যবধানে। ফলে শুধু মার্কিন জনগণ নয়, বিশ্ববাসীর অনেকেই নির্বাচনে ট্রাম্পের ভরাডুবির আশঙ্কা করেছিলেন। নির্বাচনে ট্রাম্পবিরোধীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাইডেন শুধু ইলেকটোরাল ভোটে নয়, পপুলার ভোটেও ট্রাম্পের চেয়ে একচল্লিশ লাখেরও বেশি ভোটে অগ্রগামী রয়েছেন। অবশ্য ট্রাম্পও সাত কোটির উপরে পপুলার ভোট পেয়েছেন। আর এর ফলেই এবারের মার্কিন নির্বাচনটি পরিণত হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদার গণতন্ত্রের দেশ হিসেবেই পরিচিত। গণতন্ত্র সেখানে আক্ষরিক অর্থেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বিশেষ করে ভোটের প্রশ্নে মার্কিন জনগণের আচরণ গণতন্ত্রের প্রকৃষ্ট উদাহরণ বটে। তারা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নীরবে-নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে থাকে। সেখানে কোনো জোর-জবরদস্তির অবকাশ নেই। কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার সুযোগ নেই, ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে ফলাফল উল্টে দেওয়ারও উপায় নেই। সেখানে নির্বাচন হয় নির্বাচনের সূত্র মতোই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশনে কাজ করা লোকগুলো অন্য কোনো গ্রহ থেকে যে আসেনি তা বলাই বাহুল্য। তারা ওই দেশটিরই নাগরিক। কিন্তু কমিশনের শিরদাঁড়া এতটাই মজবুত যে, সরকার বা ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের তাদের ওপর প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগই নেই। কমিশন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করে বলেই মার্কিন জনগণের ভোটাধিকার অক্ষুণ্ন আছে এবং তারাও কমিশনের প্রতি আস্থাশীল। আর তারা আস্থাশীল বলেই পরাজয়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে তাড়স্বরে চিৎকার চেঁচামেচি করলেও জনগণ তাতে কোনোরকম সাড়া দেয়নি। এমনকি ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই মনে করেন কারচুপি সংক্রান্ত ট্রাম্পের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তারা ট্রাম্পকে নিরস্ত করতে ও ফলাফল মেনে নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন বলেও সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হলো পরাজিত প্রার্থীর ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি। অতীতে সব নির্বাচনেই পরাজিত প্রার্থী বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানানোর রেওয়াজ থাকলেও এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। পরাজিত প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী প্রার্থী জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো তো দূরের কথা, নির্বাচনের ফলাফল কোনোমতেই মেনে নিতে রাজি নন। নির্বাচনের বিষয়ে যেসব অভিযোগ তিনি তুলেছেন, সেগুলো আদালতে মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত তিনি ফলাফল মেনে নেবেন না এবং হোয়াইট হাউস ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। গত ৯ নভেম্বর টুইটারে এক বার্তায় ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমরা মনে করি এ লোকগুলো চোর। যন্ত্রগুলো সব দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা চুরির নির্বাচন।’ ফলে এটা পরিষ্কার যে, যিনি গোটা নির্বাচনকে একটি চৌর্যবৃত্তির প্রক্রিয়া মনে করেন, তিনি সে নির্বাচনের ফলাফল সহজে মেনে নেবেন না। তবে মার্কিন রাজনীতি ও নির্বাচনের যারা পর্যবেক্ষক তারা বলছেন, ট্রাম্প যতই হম্বিতম্বি করুন না কেন, শেষ পর্যন্ত তাকে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যেতেই হবে।

এদিকে ট্রাম্প কেন পরাজিত হলেন এবং বাইডেন কেন এমন চমক লাগানো বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হলেন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পর্যবেক্ষকরা ট্রাম্পের পরাজয়ের এবং বাইডেনের বিজয়ের পাঁচটি করে কারণ চিহ্নিত করেছেন। ট্রাম্পের পরাজয়ের কারণ হিসেবে পর্যবেক্ষকরা যে পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছেন সেগুলোর মধ্যে প্রধান হলো— করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষায় ব্যর্থতা। প্রাকৃতিক এই মহামারীতে ইতোমধ্যেই সেখানে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। দেশ করোনাভাইরাসের দ্বারা ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছিলেন একরকম নির্বিকার। বরং করোনাকে তিনি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন এবং এর প্রতিরোধকল্পে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ছিলেন উদাসীন। করোনা মোকাবিলায় তার এ ব্যর্থতা এবার ভোটারদের ট্রাম্পের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয়ত, বর্ণবাদ ইস্যু ট্রাম্পকে বেকায়দায় ফেলেছিল সাংঘাতিকভাবে। বিশেষত পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লায়েডের মৃত্যু ট্রাম্পবিরোধী আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করেছে। এছাড়া নিজের ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যের আয়কর সঠিকভাবে না দেওয়া ট্রাম্পকে সচেতন আমেরিকাবাসীর কাছে রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত করেছে। অধিকন্তু অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা এবং জলবায়ু আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন।

অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন নেমেছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী কৌশল নিয়ে। সিনেটর হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির পথঘাট ভালোভাবেই চিনিয়েছিল। তদুপরি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই মেয়াদে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে লব্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি অল্প কথায় কিস্তিমাতের কৌশল নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ট্রাম্পের বাকসর্বস্ব উথাল-পাথাল নির্বাচনী প্রচারণার বিপরীতে অনেকটাই ধীর-স্থির ও নমনীয় প্রচারণায় বাইডেন জনগণের সমর্থন আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বাইডেনের বিজয়ের নেপথ্যে যে পাঁচটি কৌশলের কথা বলছেন, তার প্রথমেই আছে করোনাভাইরাস। করোনা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথাবার্তার বিপরীতে বাইডেন জনগণকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, সংকটময় এ সময় একজন প্রেসিডেন্টের আচরণ ও পদক্ষেপ কী ধরনের হওয়া উচিত। অতিকথন দোষে দুষ্ট ব্যক্তিরা যে স্বল্প বা মৃদুভাষী ব্যক্তিদের কাছে কুপোকাত হন, ট্রাম্পের পরাজয় তার আপাত সর্বশেষ উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সম্পর্কে তিনি ট্রাম্পের মতো প্রগলভ হয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলেননি। ওইসব বিষয়ে তার অত্যন্ত সুচিন্তিত বক্তব্য মার্কিন নাগরিকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। তাছাড়া টেলিভিশন প্রচারণায় বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন বিষয় ও কৌশল নির্ধারণে দক্ষতার কারণে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে পরাজিত ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি কী মার্কিন জনগণের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, না অল্পদিনেই হারিয়ে যাবেন। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর ট্রাম্প যেসব কথাবার্তা বলেছেন, তাতে মার্কিন জনগণের কাছে তার ভাবমূর্তি আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথা অনুযায়ী বিজয়ী প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন না জানিয়ে তিনি প্রথা ভঙ্গকারী হিসেবে নিন্দা কুড়িয়েছেন। অবশ্য তিনি ফলাফল নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তাতে ফলাফল তার অনুকূলে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। রীতি অনুযায়ী বাইডেন শপথ না নেওয়া পর্যন্ত ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকতে পারবেন। আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। আইন অনুযায়ী তার আগেই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে হবে ট্রাম্পকে। না হলে ওইদিনের পর তিনি সেখানে অবৈধ অবস্থানকারী হিসেবে চিহ্নিত ও অভিযুক্ত হবেন। তেমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মোতাবেক কর্তৃপক্ষ তাকে জোরপূর্বক হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেবেন। তবে সে ধরনের লাঞ্ছনার মুখোমুখি ট্রাম্প হতে চাইবেন কি না সেটা একটি প্রশ্ন। প্রেসিডেন্টের গদি হারানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসম্মান হারানোর অমন ঝুঁকি নেওয়ার মতো বোকামি হয়তো ট্রাম্প করবেন না। প্রাথমিক যন্ত্রণাটা কমে এলেই তিনি সুবোধ বালকের মতো ওই সাদাবাড়ি থেকে নিষ্ক্রান্ত হবেন বলেই ধারণা অনেকের।

এদিকে পরাজয়ের পর ট্রাম্পের সংসারেও উঠেছে ঝড়। তার ছেলেরা এবং বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে চাপ দিচ্ছেন পরাজয় মেনে যথাসময়ে হোয়াইট হাউস ত্যাগে সম্মত করাতে। কিন্তু ট্রাম্প নাকি তাদের কোনো কথাতেই কর্ণপাত করছেন না। এ অবস্থায় স্ত্রী মেলানিয়া ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আর ট্রাম্পের সঙ্গে সংসার করবেন না। অচিরেই ডিভোর্সের পথে হাঁটবেন তিনি। মেলানিয়া যদি তার এ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তাহলে তা হবে ট্রাম্পের জন্য দ্বিতীয় বিপর্যয়। প্রেসিডেন্ট পদের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী হারানোর বেদনা ট্রাম্প সামাল দিতে পারবেন কি না সেটাও একটা প্রশ্ন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত হবেন কি না তা নিয়েও চলছে পর্যালোচনা। সংবাদমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, পরাজিত ট্রাম্প ২০২৪ সালে শিরোপা পুনরুদ্ধারের জন্য আবারো নির্বাচনী রিংয়ে নামতে চান। তবে চার বছর পর যখন তার বয়স হবে ৭৮ বছর, তখন তার স্বাস্থ্য তাকে সে লড়াইয়ে অনুমতি দেবে কি না এটাও একটি বড় প্রশ্ন। এ বিষয়ে কেউ কেউ ৭৭ বছর বয়সে জো বাইডেনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং জয়ী হওয়ার উদাহরণ টেনে বলতে চাচ্ছেন, সে হিসাবে এক বছর বেশি বয়স নিয়ে ট্রাম্প কেন লড়তে পারবেন না? এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফস মি. মিক মুলভানি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট অবশ্যই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবেন। ২০২৪ সালেও তিনি থাকবেন (নির্বাচনে) বলে মনে করি। তিনি হারতে একদমই পছন্দ করেন না।’ ডোনাল্ড ট্রাম্প পছন্দ করুন আর না করুন, তিনি হেরেছেন এবং অনেকটাই শোচনীয়ভাবে। নির্বাচনে তার এ পারফরম্যান্স বিপুলসংখ্যক রিপাবলিকানকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে বলে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ফলে ২০২৪ সালে তিনি পুনরায় রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন হাসিল করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

এদিকে হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ট্রাম্পের আইনি জটিলতার আবর্তে পড়ার আশঙ্কার কথা বলছেন অনেকে। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা অ্যাডম এরলি সৌদি নিউজ চ্যানেল আল-আরাবিয়াকে বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন, ট্যাক্স ফাঁকিসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের যেসব অপরাধ, আদালতে সেগুলোর মামলা রয়েছে। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট থাকার কারণে তিনি দায়মুক্তি ভোগ করছেন বলে তাকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।’ মি. অ্যাডম এরলির এ মন্তব্য থেকে অনুমান করা যায়, হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার পর ভিন্ন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সে পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তার অবস্থান ধরে রাখা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

প্রেসিডেন্সির চার বছরে কথা এবং কাজের দ্বারা নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস ত্যাগের পরও কি তিনি আলোচনায় থাকবেন? যদি আইনি জটিলতায় পড়েন, তাহলে তিনি আলোচিত হবেন সন্দেহ নেই। তবে সে আলোচনা তার জন্য সুখকর হবে না নিশ্চয়ই। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেসিডেন্টই তাদের প্রেসিডেন্সির সময়কালের স্মৃতিকথা লিখেছেন। সেসব বইয়ে তারা হোয়াইট হাউসে থাকার সময়ের নানা অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি সেরকম বই লিখে পাঠকদের মাঝে বেঁচে থাকবেন, নাকি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবেন? সময়ই বোধকরি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।

 

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads