• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

৫০ বছরে বাংলাদেশের সিনেমা

সংকটের মধ্যে সম্ভাবনার হাতছানি

  • প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মো. হারুন-অর-রশিদ

 

 

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের সিনেমার অর্জন কী? কোন পথে কতদূর এগিয়েছে? যাচ্ছেই-বা কোথায়? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর-প্রত্যুত্তর কিংবা সিনেমা সংশ্লিষ্ট যে-কোনো আলোচনা সাধারণত অতীত-ইতিহাস প্রধান হয়ে থাকে। এবং সেই বিচারে ভবিষ্যৎ চিন্তায় অন্ধকার নেমে আসার প্রবণতা দেখা যায়। গতানুগতিক এসব আলোচনা হয়তো সিনেমায় আগ্রহীদের জানা। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে বদলেছে সিনেমার রংঢং। বিস্তৃত হয়েছে পরিধি। বিশেষ করে গত দুই দশকে দেশের সিনেমায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। স্বাধীন ধারার নির্মাতারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিয়ে ব্যাপক পরিচিতি-পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করছে। সিনেমাহলের বিপরীতে গড়ে উঠছে সিনেপ্লেক্স সংস্কৃতি। গড়ে উঠছে নতুন এক ‘ইমেজ-পাগল’ প্রজন্ম। এই সময়ে দেশীয় ইন্ডাস্ট্রি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার একটা চাপা কষ্ট থেকে গেলেও নানা সংকট-সম্ভাবনাকে সঙ্গী করা এসব পরিবর্তন পর্দায় নতুন আলো ফেলার ইঙ্গিত করে।

অবশ্য স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে ঘিরে নানা ধরনের সিনেমা নির্মাণ হতে থাকে। বাণিজ্য প্রধান ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার সমান্তরালে একটা ভিন্ন ধারাও পরিলক্ষিত হয়। এসব কিছু পুরোপুরি এফডিসিকেন্দ্রিকই ছিল। বিপত্তি ঘটে ১৯৭৬ সালে হারুনর রশীদ ‘মেঘের অনেক রং’ নির্মাণের পর। সিনেমাটি হলে মুক্তির মাত্র তিন দিনের মাথায় প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৭৯ সালে মসিহ্উদ্দিন শাকের-শেখ নিয়ামত আলীর ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। সিনেমাটি নাটোরের একটি সিনেমাহলে মুক্তি পেলেও ঢাকায় মুক্তি পেতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। যদিও সেটি প্রথম সরকারি অনুদানে নির্মিত হয় এবং স্বাধীন দেশের সিনেমাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেখান থেকেই মূলত পরিবর্তনের শুরুটা হয়েছিল। কেননা স্বাভাবিকভাবে পর পর দুটো সিনেমার প্রদর্শন সংকট এবং তা বাণিজ্য প্রাধান্যশীল বা গতানুগতিক সিনেমার ক্ষেত্রে না ঘটায় একটু ভিন্ন-চিন্তক মানুষজনের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে সংকটের পেছনে প্রদর্শক সমিতির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই প্রধান কারণ ছিল। এবং প্রযোজক-পরিবেশক-হল মালিকদের নিয়ন্ত্রণাধীন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে ভিন্ন চিন্তার সেই মানুষগুলো সিনেমা নির্মাণ ও প্রদর্শন বিষয়ে বিকল্প চিন্তা করতে থাকে। এরপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সালে সংসদ কর্মীদের হাতে জন্ম নেয় বিকল্পধারা নামের আন্দোলন। যে ধারার সঙ্গে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, সাংগঠনিক নেতৃত্ব, কিছু সচেতন ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচিও লক্ষ করা যায়। যার অন্যতম ছিল স্বল্প ব্যয়ে সিনেমা নির্মাণ ও নিজেদের মতো করে প্রদর্শন। সেই লক্ষ্যে ১৬ মিমি ফরম্যাট বেছে নেওয়া। তবে স্টুডিওবিমুখতার মধ্য দিয়ে শুরু থেকেই এই আন্দোলন হয়ে ওঠে স্বাধীন ধারার পরিপূরক।

এই ধারায় ১৯৮৪ সালে প্রথম ‘আগামী’ নির্মাণ করেন মোরশেদুল ইসলাম। এরপর নির্মিত হয় ‘হুলিয়া’, ‘শরৎ ’৭১’, ‘আদম সুরত’ ইত্যাদি। এসব সিনেমা প্রদর্শন করা হয় দেশের বিভিন্ন মিলনায়তন, পাবলিক লাইব্রেরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ, এমনকি খোলা মাঠে; ব্যক্তি উদ্যোগে সহজে বহনযোগ্য প্রজেক্টরের মাধ্যমে। সেখান থেকেই মূলত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের সিনেমা। একদিকে এফডিসি সংশ্লিষ্ট লোকজন প্রতিষ্ঠানটিকে আঁকড়ে ধরে থাকার চেষ্টা করলেও পরবর্তীসময়ে নানা কারণে তারা পরিস্থিতি সামলাতে না পারার সুযোগে তা পরিণত হয় সংবেদনহীন প্রতিষ্ঠানে। আর মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, তারেক মাসুদের পাশে নাম লেখায় তারেক শাহরিয়ার, সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকী, মানজারে হাসান মুরাদ, জুনায়েদ হালিম, আবু সাইয়ীদ, জাহিদুর রহমান অঞ্জন, সৈয়দা নিগার বানু, নূরুল আলম আতিক, গোলাম রাব্বানী বিপ্লব প্রমুখ নির্মাতা। ৯০ দশক পর্যন্ত আন্দোলনের এই ধারা টিকে থাকলেও শূন্য দশকে এসে নানা কারণে তা সমান প্রভাব রাখতে পারেনি। এতে করে স্বাধীন ধারা উদ্ভব হলেও দেশের সিনেমার অবক্ষয়ের শুরুটাও আশির দশকে বলা যায়। কারণ ওই আন্দোলনই এফডিসি তথা দেশীয় চলচ্চিত্রের পাইপলাইনটাই দ্বি-খণ্ডিত করে ফেলে। সংসদকর্মীরা স্টুডিও ত্যাগ করায় স্বাভাবিকভাবে সেখানকার মেধা ভাগ হয়ে যায়। আবার আন্দোলনের শুরুতে সিনেমা নিয়ে তাদের সংগঠিত মনোভাব থাকলেও একটা সময় পর তা ব্যক্তিগত প্রত্যাশায় পরিণত হয়।

তবে অন্যভাবে হলেও সেই উত্তরাধিকার ধরে রেখেছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, তৌকির আহমেদ পরবর্তী সময়ে এনামুল করিম নির্ঝর, কামার আহমাদ সাইমন, রুবাইয়াত হোসেন, ফখরুল আরেফীন, নিয়ামুল হাসান মুক্তা, ইমতিয়াজ আহমেদ বিজনরা। কৌশলগত কারণে এদের অনেকেই স্টুডিও-নির্ভর সিনেমা নির্মাণ করছে, ফিরেছে ৩৫ মি.মি. ফরম্যাটেও। তারপরও মনন ও চিন্তায় তারা স্বাধীন ধারাকেই ধারণ করছে। তাদের হাত ধরেই দেশের সিনেমা বড় বড় সব আন্তর্জাতিক উৎসবে যাচ্ছে। প্রশংসা-পুরস্কার পাচ্ছে। এই সম্ভাবনার জায়গাটি ‘আগামী’ দিয়ে তৈরি হলেও মোরশেদুল ইসলামের ‘চাকা’ (১৯৯৩) আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি এনে দেয়। এরপর ‘মাটির ময়না’র হাত ধরে কান উৎসবসহ বড় বড় সব উৎসবে দেশীয় সিনেমার পরিচয় ঘটে। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে ‘স্বপ্ন ডানায়’, ‘টেলিভিশন’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’, ‘শুনতে কি পাও’, ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’, ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’, ‘জালালের গল্প’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘হালদা’, ‘কমলা রকেট’; স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘কবি স্বামীর মৃত্যুর পর আমার জবানবন্দি’, ‘টোকাই ২০১২’, ‘আ লেটার টু গড’, ‘নোনা জলের কাব্য’।

যদিও এই নির্মাতারা দেশে সিনেমা মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে কেনো জানি খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। তাদের আগ্রহ বরং বিদেশি ফান্ড নিয়ে সিনেমা করায়। আবার বিভিন্ন উৎসবে সিনেমা মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারেও তারা দারুণ উৎসাহী! কেবল উৎসবকে মাথায় রেখেও সিনেমা নির্মাণ করা হয়। তাদের সিনেমার প্রিমিয়ার হয় আন্তর্জাতিক কোনো উৎসবে। দেশের সিনেমাহলে মুক্তি পায় নানা উৎসব ঘুরে আসার পর। আবার সব সিনেমাই যে দেশে মুক্তি দেওয়া হয় তা-ও নয়। হাতেগোনা দু—চারটি মুক্তি পেলেও সীমিত পরিসরে, বিশেষ কোনো সিনেপ্লেক্সে, দায়সারা ভাবে মুক্তি দেয়া হয়; কখনোবা নির্দিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলে। যদিও স্বাধীন নির্মাতাদের অনেক সিনেমাই এখন অবধি দেশের কোনো সিনেমাহল বা অন্তর্জালে মুক্তি পায়নি। এর ফলে শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত শ্রেণির অপেক্ষাকৃত সচেতন দর্শক, যারা সিনেমা নিয়ে একটু অন্যভাবে চিন্তা করে, তাদের একটা অংশ হয়তো কিছু সিনেমা দেখার সুযোগ পায়; তবে বেশিরভাগই সেই সুযোগ পায় না। এর বাইরে এফডিসির সিনেমা নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের নাক উঁচু ভাব। অবশ্য এই ধারার নির্মাতাদের ক্ষেত্রে এসব প্রবণতা নতুন নয়। এর আগেও এমনটা ছিল। বিশেষ করে সিনেমা সংসদকর্মীদের যারা শুধু নির্মাণের পাশাপাশি সমালোচনাও করত, ৬০-৭০ দশকে তাদের সেই আলোচনায় দেশীয় সিনেমা স্থান পায়নি বললেই চলে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো, এফডিসি নির্ভর ও স্বাধীন নির্মাতাদের বাইরে গত এক দশকে প্রযুক্তির সুবিধা-সহজলভ্যতায় একেবারে নতুন একটি প্রজন্ম গড়ে উঠেছে। যারা সামান্য মোবাইল ফোন, ছোট ছোট ক্যামেরা থেকে ডি এস এল আর, হাতের নাগালে যা পাচ্ছে তা-ই দিয়ে প্রচুর ভিডিও নির্মাণ এবং প্রচার করছে। এর শুরুটা ‘ইউটিউব’ কেন্দ্রিক হলেও পরবর্তী সময়ে তা ফেইসবুক ও ওয়েবভিত্তিক নানা প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। এ দৃশ্য এখন শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র। তবে প্রযুক্তি সর্বস্ব হলেও সিনেমা নিয়ে কিন্তু এই প্রজন্মের আগ্রহের কমতি নেই। বরং এটি এমন এক প্রজন্ম যাদের সামনে প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রযুক্তি হাজির হয়ে থাকে। দিনে দিনে প্রযুক্তি-ব্যয়ও হাতের নাগালে চলে আসে। সিনেমা করাটা আজ আর কঠিন কোনো বিষয় নয়। দিনকে দিন প্রযুক্তিই সেই পথ সহজ করে দিয়েছে। অবশ্য এফডিসির বাইরে যাওয়া অংশটির মধ্যে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে একধরনের চিন্তা ছিল/আছে। সাংস্কৃতিক দায় নিয়েই তারা স্বাধীনভাবে সিনেমা নির্মাণ শুরু করে। সেদিক থেকে নতুন প্রজন্মটি বলতে গেলে এফডিসির আবহই পায়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তাদের কোনো ধরনের চিন্তা নেই বললেই চলে। তারা নিজেদের মত করে সিনেমা নিয়ে ভাবে, নির্মাণ করে। হয়তো স্বাধীন নির্মাতারা তাদের সেই অনুপ্রেরণা-উৎসাহের যোগান দেয়। তবে এরা মোটেই তাদের উত্তরাধিকার নয়। আবার নতুন এই প্রজন্ম গড়ে ওঠার পেছনে কেবল প্রযুক্তির সহজলভ্যতা কাজ করছে তা-ও নয়। বরং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এখানে সিনেমার নতুন ঢেউ সৃষ্টি হতে চলেছে। প্রচ্ল রকমের ইমেজ পাগল এই প্রজন্মের চোখে এক ধরনের আগ্রহ লক্ষ করা যায়। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেলেও তারা কিন্তু অনেকগুলো প্রবণতার বাইরে গিয়ে কাজ করছে। তারা উৎসবে অংশ নিলেও তা প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠেনি। যদিও এফডিসি নিয়ে নাক উঁচু ভাবটা এখনও কাটেনি।

ভাবার বিষয় হলো, হাল আমলের নির্মাতারা এমন সব বিষয় নিয়ে হাজির হচ্ছে, যা গতানুগতিক পর্দায় দেখানো হয় না। এসব সিনেমা দর্শক-সমালোচক-ব্যবসা সব দিক সমানভাবে সামাল দিয়ে চলছে। এর ফলে বৈচিত্র্যময় কন্টেন্টের এসব সিনেমায় গতানুগতিক একক নায়ক হয়ে ওঠার ব্যাপারটি একেবারে থাকছে না। বরং গল্পই হয়ে উঠছে নায়ক। সেকারণে অভিনয়শিল্পীদেরও নায়কের কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। আবার, কন্টেন্টের প্রভাবে নায়কের কাঠামোগত যে পরিবর্তন হচ্ছে/হয়েছে, তাতে করে সিনেমা হয়ে উঠছে/উঠেছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের প্ল্যাটফরম। হারিয়ে যেতে বসেছে/গেছে চলচ্চিত্রের গণবিনোদনের চরিত্র। এক সময়ের বনেদি জমিদারের হাবভাব ছেড়ে গণমানুষের কাতারে দাঁড়ালেও সাম্প্রতিক সিনেমা ও তার কন্টেন্ট তা-ই বলছে।

প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতায় মোবাইল বা কম্পিউটারের ছোট্ট পর্দায় সিনেমা দেখার সুযোগ তৈরি হলেও তা অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। কেননা সিনেমার তো একটা দর্শন-সুখ রয়েছে। যা সিনেমাহলের আলো-আঁধারি পরিবেশে বসে একটা ঘোরের মধ্যে চলে না গেলে ঠিক পাওয়া যায় না। যদিও সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক স্থল, শিল্প-সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র সেই সিনেমাহলই আজ বিলুপ্তপ্রায়। তবে স্বস্তির জায়গা তৈরি করেছে একক পর্দার বিপরীতে যাত্রা করা সিনেপ্লেক্স, যা একই ছাদের নিচে একাধিক সিনেমা দেখার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিপণন বাণিজ্যে নিয়ে এসেছে নতুনত্ব। সেদিক বিবেচনা করেও এই সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর ফলে সংকট যে দেখা দেয়নি তাও নয়। কেননা সিনেমাহলের শীতল অন্ধকার ছেড়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আরামে চলে যাওয়া সিনেমার দর্শন-সুখ কেনার সামর্থ্য সব দর্শকের থাকছে না। এক্ষেত্রে শ্রমিক, রিকশাচালক তথা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটা অদৃশ্য ‘প্রবেশ নিষেধ’ বোর্ড ঝোলানো থাকছেই। এছাড়া আন্তর্জাতিক উৎসব প্রচলিত কাঠামোর বাইরে গিয়ে হয়তো সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়ায় একজন নির্মাতাকে পরিশীলিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে; আন্তর্জাতিক পরিসরে মুক্তির মাধ্যমে লগ্নির অর্থ সহজে ফিরে পাওয়ারও সুযোগ থাকে; কিন্তু নিজস্ব বিনোদনশিল্পকে উপেক্ষা করে তো আর কোনোকিছুর সামগ্রিক বিকাশ সম্ভব নয়। বরং সীমিত পরিবেশনা বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থেকে সিনেমাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে।

পৃথিবী এক হলেও সর্বত্র এক রূপ নয়। সব পরিবর্তন একই রকম হবারও নয়। এদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে, সিনেমা আর সাধারণ মানুষের নেই। সিনেমাহলের সঙ্গে সিনেমার গণবিনোদনের চরিত্রটিও হারিয়ে গেছে/যাচ্ছে; হয়ে উঠেছে শিক্ষিত মধ্য-উচ্চবিত্তের বিনোদন মাধ্যম। পরিবর্তনের এই ধারা ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজে অনুমেয় নয়। তবে এতো সব সংকট-সম্ভাবনার মধ্যেও প্রযুক্তি-সময়-পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়িয়ে অন্তত একটি বিষয় নিশ্চিত বলা যেতে পারে, সিনেমা চলবে সিনেমার নিয়মেই। নানা সংকট-সংক্রান্তি অতিক্রম করে সিনেমা বেঁচে আছে/থাকবে।

 

লেখক : চলচ্চিত্র সমালোচক

harunmcj25@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads