• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

আধুনিক কৃষির রূপকার বঙ্গবন্ধু

  • প্রকাশিত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আব্দুল্লাহ আল নোমান

 

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়িয়েছেন স্বদেশকে। আর তাই যখনই যেখানে গেছেন, মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন, বলেছেন সাধারণ মানুষের কথা, কৃষি ও কৃষকের কথা, শ্রমিকের কথা। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। সবুজ-শ্যামল এই বাংলার প্রকৃতিতে মিশে আছে কৃষি। এই দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বাংলার অর্থনীতি প্রায় কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এই কৃষিকে দেখে দেখেই বেড়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধু।

ফসলের জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম; পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়; সবজি উৎপাদনে তৃতীয়; চাল, চা ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ; আম উৎপাদনে সপ্তম এবং আলু উৎপাদনে অষ্টম। এসব অর্জনের পেছনে যার সবচেয়ে বেশি অবদান, যার সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। আমাদের এমন এক সময় ছিল বিদেশ থেকে চাল পাওয়া যেত না। মানুষ জানত না কীভাবে ধানের চাষ করতে হয়। এমন সময় কৃষকরা হতদরিদ্র, আধপেটা, এভাবেই লালিত হচ্ছিল কৃষকদের জীবন। কৃষকদের বিপ্লব বা উন্নতি ছাড়া এই দেশের উন্নতি কোনোদিন সম্ভব নয়। এই একটি আশা শেখ মুজিবুর রহমান মনে মনে ভালোভাবে লালন করেছিলেন। ত্রিশ লাখ জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্ত এ বাংলাদেশকে সোনালি ফসলে ভরপুর দেখতে চেয়েছিলেন। সে কারণেই স্বাধীনতার পর তিনি ডাক দিয়েছেন সবুজ বিপ্লবের। কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে এমন একটি উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল। ঠিক এমন সময় বাঙালির ত্রাতা শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করেন কৃষিজগতের আধুনিকায়ন। স্বাধীন বাংলাদেশের কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশের খাদ্যঘাটতি ছিল প্রাথমিক হিসাবে ৩০ লাখ টন। ছিল না ফসল আবাদ করার প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক। সেচসহ কৃষি উপকরণের ঘাটতিও ছিল প্রকট। ঘাটতি পূরণে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক আমদানির মাধ্যমে এবং স্বল্প মেয়াদে উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং কৃষিঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার ও খাসজমি বিতরণ করে কৃষিক্ষেত্র উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের চেষ্টা করেন।

সদ্য স্বাধীন দেশের খাদ্য উৎপাদন ক্ষেত্রকে করেছিল বিপর্যস্ত। নয় মাস যুদ্ধের কারণে কৃষক মাঠে ফসল ফলাতে সমস্যায় পড়তে হয়। বহু কৃষককে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হয় বলে অনেকেই চাষাবাদ করতে পারেনি। মানুষের মুখে রোজ দুবেলা আহার জোগানো ছিল সে সময়ের এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু ভাবতেন সবার আগে দরকার খাদ্যের। খাদ্যের নিশ্চয়তা না দিতে পারলে সব উন্নয়ন কার্যক্রম বিফলে যাবে। এমতাবস্থায় তিনি কৃষি উন্নয়নের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করা। খাজনা মওকুফের ফলে কৃষকরা মনের আনন্দে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু এক ব্যক্তির নামে ১০০ বিঘার বেশি জমি রাখতে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি সুষম বণ্টন শিখিয়েছেন। অতিরিক্ত জমি ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টন করে ভূমিহীনদের চাষাবাদ করার সুযোগ তৈরি করে দেন। এভাবে কৃষি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছেন। পুঁজিবাদী সাম্যব্যবস্থা নিরুৎসাহিত করেছেন। গ্রামীণ কৃষকদের সাহায্যের জন্য মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রায় ২২ লাখের বেশি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছিলেন। কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে তিনি প্রথম বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। বাজেটে ভর্তুকি দিয়ে বিনামূল্যে কীটনাশক ও সার সরবরাহ করেন। ফলে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে কৃষি উৎপাদন অতীতের যেকোনো সময় থেকে অনেক বেশি উৎপাদিত হয়েছিল। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মী নিয়োগ করেছিলেন। কৃষিপণ্য বিশেষ করে ধান, পাট, তামাক আখের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ন্যূনতম ন্যায্যমূল্য বেঁধে দিয়েছিলেন। গরিব কৃষকদের রেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সবুজ বিপ্লব কর্মসূচির আওতায় খাদ্যঘাটতি কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকসুর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিদদের চাকরি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার এক ঐতিহাসিক ঘোষণা প্রদান করেন। ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই রাগ করবেন না, দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাল কিনতে পারি না। চাল পাওয়া যায় না। যদি চাল খেতে হয় আপনাদের চাল উৎপাদন করে খেতে হবে। শতকরা ৯০ জন কৃষক গ্রামে বাস করেন। গ্রামের দিকে যেতে হবে। আমরা ইকোনমি যদি গণমুখী না করতে পারি এবং গ্রামের দিকে যদি না যাওয়া যায়, সমাজতন্ত্র কায়েম হবে না, কৃষিবিপ্লব হবে না। কৃষিনির্ভর মানসিকতা গড়তে বঙ্গবন্ধুর অবদান সবচেয়ে বেশি, এটি যেকোনো নিরপেক্ষ মানুষ সহজেই মেনে নেবেন।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads