• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

সিরিয়া সংকট বদলে দিতে পারে মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট

  • প্রকাশিত ০৬ মার্চ ২০২১

জাফরুল ইসলাম

 

 

পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে এক দেশের প্রতি অন্য দেশের আগ্রাসন নীতি পরিলক্ষিত। ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক প্রয়োজনে এক দেশ অন্য দেশের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে আসছে। আর এসব আক্রমণের মাধ্যমে জয়লাভ করার ফলে বিজিত রাষ্ট্রে বিজয়ী রাষ্ট্র শাসনকার্য পরিচালনা করত। আর এই ধারার শেষ পর্যায়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমরা পূর্বের এমন নীতিই দেখতে পাই, যেখানে অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তির সক্ষমতা পরিলক্ষিত হয়। এ সক্ষমতার ফলে বিশ্ব বিভীষিকাময় অবস্থা দেখতে পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তি পরাজয়ের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে দুটি দেশ অন্যতম প্রধান পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। একটির নাম যুক্তরাষ্ট্র এবং অপরটির নাম সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই দুই পরাশক্তির মধ্য স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকে ১৯৯১ সালের আগপর্যন্ত। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট অনেকাংশে পরিবর্তন হয়। বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য বিরাজ করছে। এমন আধিপত্যের জের ধরে যুক্তরাষ্ট্র তার সক্ষমতা প্রদর্শন করতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র সবচাইতে বেশি আধিপত্য বিস্তার করে মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যের এমনই একটি সংকটময় দেশের নাম সিরিয়া। সিরিয়া সংকট শুরু হয় মূলত ২৬ জানুয়ারি ২০১১ সালে, যেদিন তিউনিসিয়ার মতো হাসান আলী আকলেহ নামক এক সিরিয়ার নাগরিক নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দেন। এতে ২০১১ সালের মার্চে সরকারবিরোধী বিদ্রোহ শুরু হয়। সরকারি বাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর গুলি চালায়। অনেক লোক হতাহত হয়। কিছু সেনাসদস্য বিদ্রোহীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করলে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এসব বহিষ্কৃত সেনা সদস্যই পরে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি গঠন করে। আর এ বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল আসাদ পরিবার কর্তৃক সিরিয়ায় ৫০ বছর একনায়ক শাসনতন্ত্র। এই গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয় দুটি গ্রুপের মধ্যে। একদিকে আসাদ সরকার, অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ। আর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো দুটো মেরুতে অবস্থান করে। একদিকে আসাদ সরকারকে সমর্থনদানকারী রাশিয়া, চীন, ইরান অবস্থান করে। আর অন্যদিকে সরকারবিরোধীদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স, ব্রিটেনের অবস্থান। এমন অবস্থানের কারণেই সিরিয়া সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীসময়ে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব আমরা সিরিয়া সংকটে দেখতে পাচ্ছি।  ভৌগোলিকভাবে রাশিয়া হলো সিরিয়ার নিকটতম দেশ। রাশিয়া কখনো চাইবে না অন্য কোনো পরাশক্তি সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তার করুক। এ ছাড়া সিরিয়ার সাথে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিরাজমান। অন্যদিকে আমেরিকা ও তার মিত্ররা কখনো সিরিয়াকে হাতছাড়া করতে চাইবে না। কারণ ভৌগোলিকভাবে সিরিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও আমেরিকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ লাভ করেছে। বর্তমানে এই দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপট কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন এই দ্বন্দ্বটা রাশিয়ার দিক থেকে ঘুরে ইরানের দিকে মোড় নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আমেরিকার সিরিয়ায় হামলার ফলে ১৭ জন নিহত হয়েছে। এই হামলার নাম হয়েছে আমেরিকা-ইরান দ্বন্দ্ব। এই হামলার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উল্লেখ করেছেন, এই হামলাটা হলো ইরানের জন্য একটা সতর্কবার্তা। আর তা ছাড়া ইরান বরাবরই সিরিয়া সরকারের সমর্থক। তারা সিরিয়া সরকারকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করে, যা সিরিয়া সরকার গৃহযুদ্ধে ব্যবহার করে। বর্তমানে ইরান পারমাণবিক ইউরেনিয়ামও উৎপাদন করছে। এতে আমেরিকা কিছুটা উদ্বিগ্ন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এ ছাড়া ট্রাম কর্তৃক ড্রোন হামলার মাধ্যমে কাশেম সুলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার জবাব হিসেবে এই হামলা করা হয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উল্লেখ করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাইডেন যে ইরানের সাথে পরমাণু সমঝোতা চুক্তিতে ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা কতটা পূর্ণ হবে? সিরিয়া সংকট সমাধানে কতটা সফল হবে জাতিসংঘ এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। যেখানে বিশ্বের বৃহৎ পরাশক্তিগুলোর শক্ত অবস্থান সেখানে শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আর তা ছাড়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ফলে সিরিয়ায় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলো ঘাঁটি স্থাপন করেছে। যেমন আইএস, আল-কায়েদা ইত্যাদি সংগঠনের ঘাঁটি স্থাপনের কারণে আমেরিকা তার সন্ত্রাস দমন নীতি অব্যাহত রাখবে সিরিয়ার ভূমিতে এমনটা বলা যায়। সিরিয়া সংকটকে কেন্দ্র করে পরাশক্তিগুলোর এমন অবস্থান বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় কি না সেটা এখন চিন্তার বিষয়।

 

লেখক : শিক্ষার্থী,  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads