• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় শিক্ষা ও শিক্ষক

  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০২১

প্রফেসর ড. আবদুল খালেক

 

 

 

শিক্ষাদান একটি সৃজনশীল কর্ম এবং এই শিক্ষাদানের মানের ওপরই নির্ভর করে আগামী দিনের শিক্ষিত জনসম্পদের গুণাগুণ। এজন্য সমাজের সর্বাপেক্ষা প্রতিভাবান এবং সৃজনশীল ব্যক্তিগণকে শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করা প্রয়োজন। শিক্ষকতাকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে উপযুক্ত মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে উন্নয়ন প্রচেষ্টা সফল হবে না।

স্বীয় যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষকের বেতন ও সামাজিক মর্যাদা লাভ করা উচিত। শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিকল্পে বঙ্গবন্ধু সরকার অনেক মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন শিক্ষকেরা যাতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আত্মসম্ভ্রম রক্ষার উপযোগী একটি নির্দিষ্ট মান বজায় রেখে চলতে পারেন, সেজন্য তাদেরকে এমন বেতন দিতে হবে যাতে তারা মান-সম্মান নিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারেন।

 

পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি

দেশে শিক্ষার মান এবং পরীক্ষা পদ্ধতি একে অপরের পরিপূরক। শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত উন্নতির মান বা মূল্য নিরূপণ যে কোনো শিক্ষাব্যবস্থার একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ। শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের জন্য পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্যাবলির সঙ্গে ওই সমস্ত স্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর পাঠ ব্যবস্থা এবং তার ফলাফল কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে, উন্নতমানের পরীক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির মাধ্যমে তা বহুলাংশে নিরূপণ করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু সরকার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত পরীক্ষা গ্রহণের যে রূপরেখা তৈরি করেছিলেন, সে সম্পর্কে দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে।

প্রাথমিক স্তরে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন বিদ্যালয়ে তার বছরব্যাপী লেখাপড়া, শ্রেণিকক্ষে কর্মদক্ষতা এবং আচার-আচরণের ওপর নির্ভর করবে। এ পর্যায়ে শিক্ষকগণ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ক্লাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন। বছরের শেষে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াও প্রতি বছর অন্তত তিনটি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। মূল্যায়নের বিভিন্ন ফল সঞ্চয় রেকর্ডে লিপিবদ্ধ করতে হবে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শেষে বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন জেলাভিত্তিক হতে হবে, তবে পরীক্ষা হবে স্কুলভিত্তিক। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শেষে বর্তমান বৃত্তি পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকবে। প্রত্যেক স্কুল থেকে অন্তত শতকরা ১০ ভাগ শিক্ষার্থী যাতে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমিক স্তরেও প্রাথমিক স্তরের মতো অন্তত পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। বাড়ির কাজ, টিউটোরিয়াল, শ্রেণিকক্ষে সাময়িক পরীক্ষা, প্রাকটিক্যাল ও প্রয়োগমূলক ইত্যাদি কাজ ছাড়াও এ স্তরে প্রতি বছর অন্তত চারটি আন্তঃপরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আন্তঃপরীক্ষার ফল নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ এবং প্রোগ্রামে রিপোর্ট লিপিবদ্ধ করতে হবে।

দশম শ্রেণির শেষে বর্তমান প্রচলিত এসএসসি পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণির শেষে এইচএসসি পরীক্ষা সংস্কার সাপেক্ষে চালু থাকবে। এসব পরীক্ষায় প্রত্যেক বিষয়ে ১০% নম্বর মৌখিক পরীক্ষার জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সার্টিফিকেটে প্রত্যেক বিষয়ের অন্তঃপরীক্ষা ও বহিঃপরীক্ষার নম্বর প্রদর্শিত হবে। মাধ্যমিক স্তরের মতো প্রথম ডিগ্রি পর্যায়ের পাস কোর্সে ও অন্তঃপরীক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। পাস ডিগ্রি পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে এবং এজন্য প্রতি বিষয়ের পূর্ণ নম্বরের শতকরা দশভাগ সংরক্ষিত হবে।

অনার্স ডিগ্রি এবং মাস্টার্স ডিগ্রি পরীক্ষার ফলাফল অন্তঃপরীক্ষা ও বহিঃপরীক্ষার সমন্বিত ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল হবে। শিক্ষকগণ টিউটোরিয়াল ক্লাসে, প্রায়োগিক এবং গবেষণামূলক কাজ ইত্যাদির জন্য নম্বর প্রদান করা ছাড়াও প্রতি বছর তিনটি আনুষ্ঠানিক অন্তঃপরীক্ষা গ্রহণ করে নম্বর প্রদান করবেন। মানবিক, বাণিজ্যিক এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়সমূহের প্রত্যেক পেপারে শতকরা ২৫ নম্বর শিক্ষকের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য সংরক্ষিত হবে। আর বিজ্ঞানের বিষয়সমূহের প্রত্যেক পেপারে শতকরা ১৫ নম্বর শিক্ষকের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ থাকবে এবং প্রত্যেক পেপারে শতকরা ২৫ নম্বর প্রাকটিক্যাল কাজের জন্য সংরক্ষিত করা হবে। অনার্স ডিগ্রি ও মাস্টার্স ডিগ্রির শিক্ষার্থীগণকে একটি মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে এবং তার জন্য পূর্ণ নম্বরের শতকরা ১০ নম্বর বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার নম্বর হবে শতকরা ৬০ বা তার বেশি, দ্বিতীয় শ্রেণির নম্বর হতে হবে শতকরা ৬০ থেকে কম অথচ শতকরা ৫০ নম্বর অথবা তার অধিক। শতকরা ৫০ নম্বরের কম অথচ শতকরা ৪০ বা তার অধিক নম্বরপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থীরা শুধু ‘পাস’ বলে পরিগণিত হবে। শতকরা ৪০ এর নিচে যারা নম্বর পাবে, তারা ‘অনুত্তীর্ণ’ বলে পরিগণিত হবে। এভাবে শিক্ষার প্রতি শাখা এবং স্তরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফলাফল প্রদানের নীতিমালা তৈরি করে দেয় বঙ্গবন্ধুর সরকার।

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার

বঙ্গবন্ধু মনে করতেন গ্রন্থাগার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হূৎপিণ্ডস্বরূপ। যে কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কী ধরনের গ্রন্থাগার থাকবে, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু সরকার অত্যন্ত উন্নতমানের রূপরেখা দিয়ে রেখেছিল। বইয়ের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি, বইয়ের প্রতি মর্যাদাবোধ জাগানো এবং পাঠাভ্যাসের বীজ বপনের জন্য ছোটদের হাতে বই তুলে দেওয়ার দায়িত্ব প্রথমে অভিভাবকের এবং পরে স্কুলের ওপর বর্তায়। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ অভিভাবক এ ব্যাপারে উদাসীন। বঙ্গবন্ধু গঠিত শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছিলো— ‘অবিলম্বে গণগ্রন্থাগারের মাধ্যমে প্রাথমিক স্কুলে বই পরিবেশনের যথাসম্ভব ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য দেশের প্রত্যেকটি থানা সদরে একটি গণগ্রন্থাগার স্থাপন করতে হবে। প্রাথমিক স্কুলে বই পরিবেশন এ গ্রন্থাগারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হবে। প্রত্যেক ইউনিয়নের এক বা একাধিক নির্বাচিত প্রাথমিক স্কুলকে ভ্রাম্যমাণ বইয়ের শিবিররূপে ব্যবহার করতে হবে। থানা গ্রন্থাগার থেকে বই প্রেরণ করা হবে এ শিবিরে। এখান থেকে এলাকাভুক্ত প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকগণ নিজেদের স্কুলের চাহিদা অনুযায়ী বই সংগ্রহ করবেন এবং ব্যবহারান্তে এখানেই ফেরত দেবেন। অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী প্রাথমিক স্কুলে থানা গ্রন্থাগার থেকে সরাসরি এই পরিবেশন চলবে।

থানা গ্রন্থাগার স্থাপনের ব্যয়ভার বহন করবে জাতীয় সরকার। আমাদের জাতীয় লক্ষ্য হতে হবে দেশের প্রত্যেকটি প্রাথমিক স্কুলে গ্রন্থাগার স্থাপন। প্রাথমিক স্কুলের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে উন্মুক্ত সেলফে শিক্ষার্থীদের জন্য বইপুস্তক রাখার ব্যবস্থা বাঞ্ছনীয়। এসব শ্রেণির শিক্ষকরা শিক্ষার্থীর কাছে বইপুস্তক পরিবেশন করবেন।’ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য যে পাঠাগারের রূপকল্প বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, আজো তা পূরণ হয়নি।

মাধ্যমিক স্কুলের গ্রন্থাগারের ব্যাপারেও বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ছিল সুদূরপ্রসারী। বঙ্গবন্ধু গঠিত শিক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সে পরামর্শ প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুরই মনের কথা। রিপোর্টে বলা হয়েছে— ‘মাধ্যমিক স্কুলের গ্রন্থাগারগুলো নানা কারণে অচল হয়ে পড়েছে। মাধ্যমিক স্কুলের গ্রন্থাগারে বহু পুরাতন জরাজীর্ণ, কীটদৃষ্ট অকেজো বইয়ের গাদায় পড়ে নতুন বইগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। স্থান বা আলমারির অভাবে অকেজো বইগুলো আলাদা করা সম্ভব হয় না। কমিশন মনে করে মাধ্যমিক স্কুলের গ্রন্থাগার মামুলি উন্নয়ন বা জোড়াতালির ব্যাপার নয়, একে সম্পূর্ণরূপে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে।’

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার একটি অবশ্যম্ভাবী বিষয়। বঙ্গবন্ধু গঠিত শিক্ষা কমিশনের মতে, কলেজ গ্রন্থাগারগুলোর দৈন্য মূলত মাধ্যমিক স্কুল গ্রন্থাগারের দৈন্যের মতোই। এখানেও স্থানাভাব প্রকট। কলেজ গ্রন্থাগারের উন্নয়নের নিম্নতম মান সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ ছিলো— ‘কলেজ গ্রন্থাগারের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ অপরিহার্য। কলেজ গ্রন্থাগার সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু গঠিত শিক্ষা কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রন্থাগার নিয়েও তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। কমিশন অভিমত ব্যক্ত করেছিল— ‘বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গ্রন্থাগার উন্নয়নের ব্যাপারে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।’ কমিশন বলেছিল— ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বই, সাময়িকীর বরাদ্দ বাড়াতে হবে, গবেষণা কর্মকে জোরদার করার জন্য রেফারেন্স বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে এবং বিদেশি বই, ফিল্ম ইত্যাদি আমদানির জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা ও সরকারি আনুকূল্যের প্রয়োজন হবে।’ ভালো গ্রন্থাগার করতে হলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উন্নতমানের গ্রন্থাগারিক প্রয়োজন। চাহিদা পূরণের পক্ষে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। কমিশনের সুপারিশ ছিল— ‘যোগ্যতাসম্পন্ন গ্রন্থাগারিকদের পদমর্যাদা ও পারিশ্রমিকের ব্যাপারে শিক্ষকদের পর্যায়ভুক্ত করা উচিত।’

শিক্ষা সৌকর্যের গরজে শিক্ষাঙ্গনে মিউজিয়ামের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় জীবনের ও ঐতিহ্যের বিবর্তনের রূপরেখা মিউজিয়ামে যথাসম্ভব বিবৃত হয়। তাই শিক্ষাঙ্গনে মিউজিয়ামের সাহায্যে শিক্ষাদান পর্ব অধিকতর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

 

শিক্ষাক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার সমতাবিধান

বঙ্গবন্ধু গঠিত শিক্ষা কমিশন থেকে বলা হয়েছিল, দেশে শিক্ষা বিস্তারের বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষা ক্ষেত্রে শ্রেণিবৈষম্য দূর করে সুযোগ-সুবিধার সমতা বিধান করতে হবে। পিতা-মাতার আর্থিক অবস্থা, বাসস্থান, ধর্ম প্রভৃতি কারণে যেন কারো প্রতিভার যথাযথ বিকাশ ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ ব্যাহত না হয়, তা শিক্ষা ব্যবস্থায় নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার সমতা বিধানের লক্ষ্য অর্জনে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হলে বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের প্রেরণের জন্য মাতা-পিতার যে অতিরিক্ত ব্যয় হবে, তা লাঘব করার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য স্বল্পমূল্যে পাঠ্যপুস্তক, অতি প্রয়োজনীয় শিক্ষা-উপকরণ ও স্কুল ইউনিফর্ম ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে। তাছাড়া স্বল্পমূল্যে দুপুরে টিফিনের ব্যবস্থা করলে তাতে একটা ভালো ফল পাওয়া যাবে।

ছাত্রছাত্রীদের প্রতিভা, প্রবণতা ও আগ্রহের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহারের জন্য মাধ্যমিক স্তর থেকে বহুমুখী শিক্ষাক্রমের ব্যবস্থা থাকবে। তাই মাধ্যমিকে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক এবং এ স্তর থেকে বহুমুখী শিক্ষাক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। উচ্চতর শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ফলাফলের সঙ্গে উৎপাদনমুখী শ্রম-অভিজ্ঞতা ও সমাজসেবার অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

যাদের মেধা ও প্রতিভা উচ্চমানের তাদের জন্য উপযুক্ত উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে সরকারকে মাধ্যমিক স্তর থেকে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য ব্যাপক হারে বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে, গ্রামাঞ্চলে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান-সন্ততি যাতে উচ্চতর বা পেশাগত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য মেধাবী গরিব শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবাসের সম্পূর্ণ ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও রাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে সকল শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা-উপকরণ এবং শিক্ষাদানের মানের যে বিশাল বৈষম্য বিদ্যমান, তা দূর করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যতদিন সম্পূর্ণ জাতীয়করণ ও রাষ্ট্রায়ত্তকরণ সম্ভব না হয়, ততদিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মানের উন্নয়নের জন্য অধিকমাত্রায় রাষ্ট্রীয় সাহায্যের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যার সাথে সঙ্গতি রেখে এবং জাতীয় প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশেষত মেয়েদের মধ্যে দ্রুতহারে শিক্ষা বিস্তার অতীব প্রয়োজন সমাজের কল্যাণের স্বার্থে। বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে দেশের সর্বস্তরে সমমানের শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য যথাযথ অগ্রাধিকার নির্ণয় করে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, যাতে ১৯৮৫ সালের মধ্যে দেশে উচ্চতম স্তর পর্যন্ত সমমানের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের নিরক্ষরতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার বয়স্ক শিক্ষা ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন; নারীশিক্ষা, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির মধ্যে কোনোরকম সমন্বয় ছিল না। ছুটির ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন করা হয়।

 

শিক্ষক প্রশিক্ষণ

বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন জাতীয় জীবনে উপযুক্ত শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত উৎকর্ষ শিক্ষকের সুষ্ঠু পেশাগত শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল। উন্নত রাষ্ট্রসমূহে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষক-শিক্ষণের যে সকল আধুনিক রীতি ও পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে, সেগুলোকে প্রয়োজনমতো প্রয়োগ করে আমাদের দেশের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বঙ্গবন্ধু প্রায়ই বলতেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে শিক্ষক-শিক্ষণের যাবতীয় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য তিনি একটি জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ থেকেই উপলব্ধি করা যায় শিক্ষক-শিক্ষণের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কতটা সচেতন ছিলেন!

 

বঙ্গবন্ধুর গণমুখী শিক্ষাভাবনা  

গণমুখী শিক্ষা বলতে সাধারণভাবে জনগণের জন্য জনগণের প্রয়োজনীয় শিক্ষাকে বোঝায়। এর প্রধান লক্ষ্য, দেশের শিক্ষাদানযোগ্য প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে ন্যূনতমপক্ষে নিরক্ষরতা থেকে মুক্ত করা বা স্বাক্ষর করে তোলা এবং সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা। উপরন্তু লব্ধ শিক্ষা যাতে ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদা যেমন জনকল্যাণ, দেশ ও জাতির উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং উৎকর্ষ সাধনে নির্দেশিত হয়, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা। তাই ব্যক্তির ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, সমাজ-চাহিদা ও জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষিত বা ‘এলিট’ সৃষ্টি এ শিক্ষা নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী— যেমনটি ছিল ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন আমলে ভারতে Meaulay-এর প্রবর্তিত শিক্ষা নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন করার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শুধু জাতীয় মুক্তি বা রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনই ছিল না, তা ছিল বাঙালি জাতির সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে নির্দেশিত। অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে জনগণের রাষ্ট্র। এর সমুদয় নীতি বা কর্মকাণ্ড জনস্বার্থে বা জনকল্যাণে পরিচালিত হবে। ১৯৭১ এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সে আকাঙ্ক্ষাকে গণচেতনায় পরিণত করে। তাই আমাদের নতুন রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নামে ‘গণ’ শব্দের প্রয়োগ। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ) অনুযায়ী এই রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি অবশ্যই গণমুখী হওয়ার কথা। বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানে এর সর্বোচ্চ স্বীকৃতি আমরা দেখতে পাই। এ সম্পর্কে সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্র— ক. একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; খ. সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; গ. আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।

গণমুখী শিক্ষা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি ছিল অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। ‘সবার জন্য শিক্ষা’ ব্যতীত আমাদের উন্নতি অগ্রগতির যে উপায় নেই, তা তিনি যথার্থই উপলব্ধি করেছিলেন। শিক্ষা বঙ্গবন্ধুর কাছে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তিনি একে ‘উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ’ হিসেবে দেখেছেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বেতার-টেলিভিশন বক্তৃতায় শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু যে কথাগুলো বলেছিলেন, সে বিষয়ের প্রতি একটু দৃষ্টি দেয়া যাক।

‘সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলবার জন্য শিক্ষাখাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না। ১৯৪৭ সালের পর বাংলাদেশের প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এটা ভয়াবহ সত্য। আমাদের জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ অক্ষরজ্ঞানহীন। প্রতি বছর ১০ লাখেরও অধিক নিরক্ষর লোক বাড়ছে। জাতির অর্ধেকেরও বেশি শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শতকরা মাত্র ১৮ জন বালক ও ৬ জন বালিকা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। জাতীয় উৎপাদনের শতকরা কমপক্ষে ৪ ভাগ সম্পদ শিক্ষা খাতে ব্যয় হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কলেজ ও স্কুল শিক্ষকদের, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। নিরক্ষরতা অবশ্যই দূর করতে হবে। পাঁচ বছর বয়স্ক শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য একটা ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালু করতে হবে। দ্রুত মেডিকেল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দারিদ্র্য যাতে উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাবী ছাত্রদের অভিশাপ হয়ে না দাঁড়ায় সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’ (মিজানুর রহমান মিজান সম্পাদিত, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, নবেল পাবলিকেশনস, ১৯৮৯, পৃ. ২৮)

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার গণমুখী শিক্ষার বিষয়কে শুধু সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েই থেমে থাকেনি বরং নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ লক্ষ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, ১১ হাজার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ। জাতির জন্য একটি গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা যে কত আবশ্যক তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আমাদের জন্য শিক্ষাই উন্নতি ও অগ্রগতির একমাত্র সোপান। আমাদের দেশে সম্পদের অভাব রয়েছে। জনসংখ্যা প্রচুর। বঙ্গবন্ধু শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন।

দীর্ঘ মেয়াদে এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে, সে কথা মাথায় রেখে শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ড. মুহম্মদ কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে যে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন, ১৯৭৪ সালের মে মাসে এই কমিশন বঙ্গবন্ধুর কাছে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করেন। এই রিপোর্টের পাতায় পাতায় ছিল বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনার বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনাই প্রতিফলিত হয়েছে খুদা শিক্ষা কমিশনে। বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক রিপোর্টটি গৃহীত ও অনুমোদিত হয়েছিল। বলা যায় এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা।  বঙ্গবন্ধুর  শিক্ষাভাবনার সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হলো। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন— শিক্ষায় সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; শিক্ষার ব্যয়ভার মূলত সরকারকেই বহন করতে হবে; ছাত্রছাত্রীদের চরিত্র গঠন, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি এবং তাদেরকে মানবতাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে; শিক্ষাদানের মাধ্যম হতে হবে মূলত মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষা; শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে; বিজ্ঞান, কৃষি ও প্রকৌশল শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে; এবং শিক্ষায় ব্যয় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শুরুতে দেশের মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ৫ ভাগ এবং ভবিষ্যতে তা ৭ ভাগে উন্নীত করতে হবে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুই প্রথম শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করেন। তিনি প্রায় ৩৮ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৬২ হাজার শিক্ষককে জাতীয়করণের অনুমতি দিলে অর্থমন্ত্রী অর্থসংকটের কথা বলেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।’ শিক্ষকরা হলেন ‘সোনার মানুষ’ গড়ার কারিগর। শিক্ষকদের পেটে ক্ষুধা রেখে সোনার মানুষ তৈরি করা সম্ভব নয়। যেখান থেকে পারো, টাকার ব্যবস্থা কর। শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে। মানুষ যখন অশিক্ষিত হয়ে থাকে, তখন সে জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আর মানুষ যখন শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করে, তখন সে মানবসম্পদে পরিণত হয়।’

বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি করা সম্ভব নয়। তার ভাষায়— ‘শিক্ষা হচ্ছে বড় অস্ত্র যা যে কোনো দেশকে বদলে দিতে পারে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলতেন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরের মতো প্রাকৃতিক সম্পদবিহীন দেশ শুধু মানবসম্পদ সৃষ্টি করে যদি উন্নত দেশ হতে পারে, তাহলে বাংলাদেশও একদিন উন্নত দেশ হবে। আর সে জন্যই তিনি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর সেসব উদ্যোগের কিছু ছিল তাৎক্ষণিক আর কিছু ছিল দীর্ঘমেয়াদি। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হতে না হতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে দুর্ভাগ্যক্রমে স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে শুরু হয় সামরিক শাসন। জেনারেল জিয়া শাসন ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ১৯৭২ সালের সংবিধান যেমন স্থগিত করে দেয়, পাশাপাশি ১৯৭২ সালের সংবিধানের আলোকে বঙ্গবন্ধু দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, সে শিক্ষা ব্যবস্থাকেও স্থগিত করে দেয়া হয়। ফলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বলা যেতে পারে পাকিস্তানি ধারায় ফিরে যায়। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ নতুন শিক্ষা কমিশন গঠনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মহাবিপদের মুখে ঠেলে দেয়। পাকিস্তান আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করা হয়। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনাকে পুনরায় কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনার ২০১০ সালের শিক্ষা নীতির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনার ব্যাপক প্রতিফলন ঘটেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার দেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভিশন ২০২১, ভিশন ২০৪১ এবং সর্বশেষ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন এবং প্রত্যেকটি ভিশন সফলভাবে বাস্তবায়নে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা জাতিকে পথ দেখাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads