• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য বর্জন করুন 

  • প্রকাশিত ২৪ জুন ২০২১

শেখ শাহরিয়ার হোসেন

 

মানুষের সভ্যতার অগ্রগতির পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানের অসীম অবদান। কিন্তু এই বিজ্ঞান মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্টের কারণ হয়ে ওঠে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো প্লাস্টিক বর্জ্য। প্লাস্টিক সহজে বহনযোগ্য এবং দামে অপেক্ষাকৃত সস্তা হওয়ায় দৈনন্দিন প্রায় সব কাজেই এটি ব্যবহার করা হয়। জীবনযাত্রায় এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিক পণ্য। কিন্তু এই দ্রব্যটি অপচনশীল হওয়াতে প্রকৃতির জন্য হয়ে উঠেছে হুমকিস্বরূপ। কারণ কোমল পানীয়ের বোতল, টুথব্রাশ, বিভিন্ন খেলনা প্রভৃতি প্লাস্টিকের দ্রব্য প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত অপাচ্য থাকে। এছাড়া বাজারে পণ্য বহনের সুবিধার্থে যে প্লাস্টিকের ব্যাগ পাওয়া যায় সেটি প্রায় ২০০ থেকে ৫০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। এ কারণে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালে প্লাস্টিক পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনীহা এবং আইন কার্যকরের অভাবে এর প্রয়োগ সম্ভব হয়নি।

প্রতিদিন শুধু রাজধানী ঢাকাতেই গড়ে ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। সারা দেশে এর মাত্রা আরো ভয়াবহ। এই পরিমাণ বর্জ্য প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত ঠাঁই পাওয়ার ফলে চাষের জমিগুলো হয়ে পড়ছে অনুর্বর। নদীতে প্লাস্টিকের পুরু স্তর জমে গিয়ে জলজ প্রাণির জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। প্লাস্টিক পদার্থে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক রঞ্জক মেশানো হয়। এসব রঞ্জক কারসিনজেন হিসেবে কাজ করে এবং মানুষের এন্ডোক্রিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মানুষ ছাড়াও উদ্ভিদকুল, দ্বীপ অঞ্চলের প্রাণিরা প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে নর্দমা ভরাট হয়ে বৃষ্টির পানি প্রবাহে বাধা পেয়ে সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতার। মাটিতে প্লাস্টিকের ভাঙনের মাধ্যমে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। এই মিথেন এক প্রকার গ্রিনহাউস গ্যাস যেটি পৃথিবীর উষ্ণতার জন্য দায়ী।

এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্লাস্টিক দূষণ রোধকল্পে প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। এই দ্রব্যের পরিপূরক দ্রব্য তথা পাটজাত এবং অন্যান্য দ্রব্য ব্যবহারের ব্যাপারে জনগণকে সচেষ্ট হতে হবে। তাছাড়া যেখানে সেখানে এসব বর্জ্য না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। প্লাস্টিক দ্রব্যের পুনর্ব্যবহার কারুশিল্পেরই একটা অংশ। তাই এই দ্রব্যটি দ্বারা কৃত্রিম ফুল, খেলনা, উদ্যান ভাস্কর্যসহ অনেক কিছু তৈরি করা সম্ভব যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এবং সৌন্দর্যবর্ধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কয়েক বছর আগেও প্লাস্টিকের চালের বস্তার পরিবর্তে পাটের বস্তার ব্যবহার করার জন্য আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করা হয়েছে। ঠিক তেমনি অন্যান্য দ্রব্যের ক্ষেত্রেও একই আইন প্রণয়ন করলে প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্লাস্টিক দ্রব্য রিসাইকল করে নতুন রূপ দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

বর্তমানে যেভাবে প্রতিনিয়ত প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে এই সমস্যার সমাধান করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। এভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে এই পৃথিবী মানুষসহ অন্যান্য প্রাণির বসবাসের জন্য হয়ে উঠবে অযোগ্য। তাই প্লাস্টিকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে সরকারের সহোযোগিতা এবং জনসচেতনতা একান্ত জরুরি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads