• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

একজন নিষ্পাপ নিরহংকার রাজনীতিবিদের প্রতিচ্ছবি

  • আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত ১১ অক্টোবর ২০২১

আমাদের প্রিয় বন্ধু বাবুল আর আমাদের মাঝে নেই। সন্ত্রাসীর কালো পিস্তলের নিচে নিথর নিস্তব্ধ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ওবায়দুল হক বাবুল। তাঁর মতো আদর্শের প্রতি অবিচল, নিষ্ঠাবান, নিরহংকার ও সৎ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদকে এমন নির্মমভাবে কোনো কায়েমি স্বার্থবাদীমহল হত্যা করতে পারে, যারা বাবুলের সজ্জন তারা কোনোমতে এ কথা মেনে নিতে পারে না। মানুষ জন্মিলে মরিতেই হবে। আমাদের পবিত্র কোরআন শরিফে বলা আছে-কুল্লুন নাফছুন জাইকাতুল মউত। কিন্তু সেই মৃত্যু যদি এমন যন্ত্রণাদায়ক, বেদনাবিধুর হয়; যে মৃত্যু স্বজনদের হূদয়ে রক্তক্ষরণ করে, সে মৃত্যুকে সহজে মেনে নেওয়া যায় না।

বাবুল ছিলেন ভোলা জেলার ঐতিহ্যবাহী মোল্লা পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা মরহুম সোলাইমান মোল্লা কেবল ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন না, তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একনিষ্ঠ আদর্শের সৈনিক। আমি আমার রাজনীতিবিদ চাচা (হিজলা বিশহর ভূঁইয়াবাড়ির) ফজলুল হক ভূঁইয়ার মুখে শুনেছি, যখন ’৪৭ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তখন পশ্চিম পাকিস্তানি কায়েমি স্বার্থবাদী নেতারা অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে ঠেকানোর জন্য এক ফরমান জারি করলেন। যাদের পূর্ব পাকিস্তানে বাড়িঘর নেই, তারা পাকিস্তানে ঢুকতে পারবে না। সোহরাওয়ার্দী সাহেব তখন কলকাতা থেকে স্টিমারে এসে বুড়িগঙ্গায় অবস্থান করছেন। তার ঢাকায় কোনো বাড়িঘর ছিল না। তখন সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কয়েকজন অনুরক্ত ভক্ত মিলে তার নামে রেজিস্ট্রি করে একটি জায়গার বন্দোবস্ত করলেন। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের পাশে এখনো সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সেই বাড়িটি আছে। তখন যারা বিপুলভাবে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে স্টিমার থেকে বুড়িগঙ্গার তীরে নামিয়ে এনেছিলেন সরব স্লোগান দিয়ে, মরহুম সোলায়মান মোল্লা ছিলেন তাদের অন্যতম। এজন্যই যতবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভোলায় এসেছিলেন, প্রথমেই তিনি মোল্লাদের বাড়িতে গিয়ে উঠতেন। সোলায়মান মোল্লা সাহেবের কবর জিয়ারত করে তার অন্য কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।

আমি যখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার কারণে দীর্ঘদিন জেল খেটে বের হলাম, তখন নানা অজুহাত ও প্রবঞ্চনার মাধ্যমে আমাকে বিএম কলেজে ভর্তি হতে দেওয়া হয়নি। কারণ বিএম কলেজে আমি তখন ম্যাগাজিন সেক্রেটারি ছিলাম। ডিগ্রিতে ভর্তি হলেই আমি ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি হতাম। আমার সাথে ভিপি প্রার্থী ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল নরম মনের মানুষ পটুয়াখালীর নিজাম ভাই। শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে আমি ভোলা কলেজে স্নাতক বিজ্ঞানে ভর্তি হলাম। নিজাম ভাই বিএ চতুর্থ বর্ষে ভর্তি হলেন। আমি ওই সময় ওবায়দুল হক বাবুলকে তেমন করে পাইনি। কারণ সে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অনার্সে পড়ত। তবে তার আপন চাচাতো ভাই ফজলুল কাদের চৌধুরী ওরফে মজনু মোল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল। সেই সুবাদে মোল্লাবাড়িতে অধিকাংশ সময়ই আমাদের থাকা-খাওয়া হতো। বাবুলের শ্রদ্ধেয় মাতা ও বড় বোন অরুণা আপা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাবুল এবং আমি দুজনেই বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ), যা সর্বাধিকভাবে মুজিব বাহিনী হিসেবে পরিচিত, সেই বাহিনীর সদস্য হিসেবে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভারতের দেরাদুনস্থ টান্ডুয়া মিলিটারি একাডেমিতে গিয়েছিলাম। সেখানেও বাবুলের সাথে আমার দেখা হয়নি। কারণ বাবুল আমাদের চেয়ে দুই ব্যাচ আগেই ট্রেনিং নিয়ে ফিরে এসেছে। তারপর আমি যখন ট্রেনিং নিয়ে আমার ট্রুপস নিয়ে ভোলায় আসলাম, তখন রণাঙ্গনের সহযোদ্ধা হিসেবে বাবুলের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয় রামদাশপুরে রতন চৌধুরী ভাইয়ের বাড়িতে। তিনিও ইতঃপূর্বে আমার সাথেই ভারতে গিয়েছিলেন ট্রেনিং নিতে, তবে সেখানে দুভাগ হয়ে আমরা দেরাদুনে যাই। আর রতন ভাইয়েরা হাফলং থেকে ট্রেনিং নিয়ে ফিরে আসে। ভোলায় এসে বাবুল ভোলা মুজিব বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করে। আর রতন চৌধুরী ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। বাবুলদের সাথে আমার রিক্রুট করা মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী প্রবৃত্তি অঞ্চলের কয়েকজন ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুজিব বাহিনীর সদস্য ছিলেন। বাবুল ও রতন ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করে আমরা ঠিক করলাম যেহেতু হিজলা মেহেন্দীগঞ্জে কোনো মুজিব বাহিনী নেই, তাই আমরা আমাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জে গিয়ে ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করলাম।

এরপর দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলে একুশে জানুয়ারি ’৭২ সালে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে আমাদের অস্ত্র জমা দেই। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন মুজিব বাহিনীর চার অধিনায়ক-সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মণি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ।

অস্ত্র জমা দেওয়া শেষে বাবুলের হাত ধরে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস ফজলুল হক হলের দিকে যাত্রা করি। বাবুল থাকতেন ২৬২ নম্বর রুমে। এই রুমটি ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে বরাদ্দ থাকত। রাজ্জাক ভাইও এই রুমে থাকতেন একসময়। বাবুল তখন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরের বছর সভাপতি ছিলেন। আমরা ওই রুমেই থাকতাম এবং বাবুল চলে আসার পরেই আমি ছাত্রলীগের হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওই রুমের বরাদ্দ পাই এবং কার্জন হল ও আর্টস ফ্যাকাল্টির শিক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি ওই ২৬২ নম্বরেই ছিলাম।

এই সময় দুটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই আমরা। প্রথমটি ছিল প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সংসদ নির্বাচন। আমি আর বাবুল একই ক্লাসে পড়তাম। আমি বিএসসি পাস করে জিওলজি বিভাগে স্নাতকোত্তর প্রিলিমিনারিতে ভর্তি হই আর বাবুল সম্মান শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতকোত্তর ক্লাসে আমার সহপাঠী হয়। ওই সময় বিভাগীয় সংসদ নির্বাচনে বাবুলকে আমরা মনোনয়ন দেই। তবে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কোরবান আলীর নাতি পরিচয় দিয়ে একজন বাবুলের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় নামলেন। বাবুল ছিল খুবই সাদাসিধে সজ্জন ছাত্রনেতা। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল একজন ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ প্রার্থী। ভয়ভীতি দিয়ে জেতার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিভাগের সর্বজনশ্রদ্ধেয় এবং বন্ধুদের প্রিয় বাবুলকে শেষ পর্যন্ত হারাতে পারেনি। বাবুল জয়লাভ করেছিল। এর ক’দিন পরেই বাবুলের রুমে বসে হলের এক ক্ষুদ্রাকার কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম ভাইসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেদিন আমি এমন এক তুমুল বক্তৃতা দিয়েছিলাম, তখনই সিদ্ধান্ত হলো আমাকে ছাত্রলীগ হল শাখার সাধারণ সম্পাদক বানানো হবে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে কনফারন্স করে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রায় একই সাথে শুরু হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ফজলুল হক ছাত্র সংসদের ভিপি হিসেবে মনোনয়ন পান ওবায়দুল হক বাবুল। তবে সে বছর নির্বাচনের ফলাফল গণনাকালে ব্যালট বাক্স হাইজ্যাক হওয়ায় প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করা যায়নি।

বাবুল তখন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক। এই সময় বঙ্গবন্ধু দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে স্বাধীন দেশের উপযোগী করে আধুনিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার জন্য একটি কমিশন গঠন করেন। তবে কমিটির কাজ অতি ধীরগতিতে চলতে থাকায় আমাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ছাত্রলীগই একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধুর কাছে পেশ করবে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওবায়দুল হক বাবুলকে আহ্বায়ক করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। রাতদিন পরিশ্রম করে আমরা সেই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে বঙ্গবন্ধুর সাথে  সাক্ষাৎ করি এবং দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মাদরাসা বোর্ড প্রমুখ গঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে খোলামেলা আলোচনা করি। সেদিন বঙ্গবন্ধু এ সম্পর্কে আমাদের যা বুঝিয়েছিলেন ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন আজ প্রায় ৪৭ বছর পর এসে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ কত সঠিক, সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবধর্মী ছিল তা আমরা অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারছি। 

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একত্রে পড়াশোনা করাকালে একটি বড় জাতীয় দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছিলাম। ’৭২ সালে বিজ্ঞাপন বেরুল। সরকার বিভিন্ন জাতীয় প্রতীক-যেমন জাতীয় ফুল, জাতীয় ফল, জাতীয় পাখি প্রভৃতি নির্ধারণ করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিল। আমাদের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাকির হোসেন। তিনি উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আমাকে এবং বাবুলকে তাঁর চেম্বারে ডেকে নিয়ে স্যার বললেন, ‘জাতীয় পাখি হিসেবে যেন দোয়েল পাখির নাম নির্ধারণ করা হয়।’ আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে গেলাম তোফায়েল ভাইয়ের বাসায়। তোফায়েল ভাইকে আমরা জাকির হোসেন স্যারের অনুরোধের কথা বললে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি নিশ্চয়তা দিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন। পরে যখন ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত হলো জাতীয় পাখি দোয়েল, আমরা ছুটে গিয়ে জাকির হোসেন স্যারকে বললে স্যার সেদিন কতই না উৎফুল্ল হয়েছিলেন।

যথাযথভাবে লেখাপড়া শেষে বাবুল তার একান্ত বন্ধু খোকনকে নিয়ে জেসো ইন্টারন্যাশনাল (বা এন্টারপ্রাইজ) নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলে। আমি যোগ দেই সাংবাদিক হিসেবে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায়। আমার অফিস পুরানা পল্টনে আর বাবুলের অফিস ছিল দিলখুশায়। বাবুলের কড়া নির্দেশ ছিল, দুপুরবেলায় যেন একত্রে লাঞ্চ করি, আর তাই করতাম। আমার যখন ছেলে হয় তখন বাবুল সোনার চেইন দিয়ে আমার পুত্রকে আশীর্বাদ করেছিল। আর বাবুল যখন পিতা হয় আমিও তাই করেছিলাম। বাবুলের মা আমাকে পুত্রস্নেহে ধন্য করেছিলেন। আমার আর্থিক অবস্থা তেমন একটা সুবিধাজনক ছিল না। তবে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বাবুল বেশ সচ্ছল ছিল। প্রায়ই দেখতাম বাবুলের বাসা থেকে খালাম্মা ভারত থেকে আনা এক পেটি আঙুর ও কিছু ফল আমার মোহাম্মদপুরের বাসায় পাঠিয়ে দিতেন। অত দামি আঙুর ও আপেল কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা আমার ছিল না।

আস্তে আস্তে বাবুল ব্যবসায় সফল হয়ে উঠল। অনন্যা নামে একটি গার্মেন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠা করল মিরপুরে আর গাজীপুরে ছিল একটি টরটয়েস নামে তোয়ালে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। দেখতে দেখতে বাবুল একজন মেধাবী রাজনীতিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল। আর ভোলাবাসীর কাছে সে ছিল নন্দিত জননেতা। ’৯৬-এর নির্বাচনে তোফায়েল ভাই ভোলার দুটি আসন থেকে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন। নিয়ম অনুযায়ী তোফায়েল ভাইকে একটি আসন ছেড়ে দিতে হয়। সে আসনটি ছিল ভোলা সদরের আসন। আমি একদিন হঠাৎ কাচের ফাঁক দিয়ে দেখি, একজন পরিচিত লোক বাসস অফিসে ঢুকছে। কাছে আসতেই দেখলাম সদা হাস্য বাবুল আমার রুমে ঢুকে আমাকে জড়িয়ে ধরল। সে আমাকে সবসময় শুধু ভূঁইয়া বলে ডাকত। গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ভূঁইয়া, আজ থেকে তোমার চাকরি শেষ, তুমি ছুটি নাও। আমাকে ভোলার আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমার ঢাকার বন্ধুরা দলবল নিয়ে লঞ্চে করে মনোনয়নপত্র জমা  দেবে। আর নির্বাচনি বিজয় মিছিল শেষে আমরা ঢাকায় ফিরে আসব। আমি ভালো বক্তৃতা দিতে পারতাম। ভোলার মানুষও আমাকে চিনত, আদর করত। আমি রাজি হলাম, তোমার নির্বাচন পর্যন্ত আমি তোমার সাথে থাকব। এর ক’দিন পরেই বাবুল আমাকে তার ধানমন্ডির বাসায় দাওয়াত দিল এবং বলল তোমাকে নিয়ে তোফায়েল ভাইয়ের বাসায় যাব। সেখানে নির্বাচনি কৌশল নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। এর দুদিন পরেই আমাদের কাছে এলো সেই সর্বনাশা মৃত্যুসংবাদ। মিরপুরের নিজ প্রতিষ্ঠান অনন্যার সামনে ঘাতকের গুলিতে বাবুল প্রাণ হারিয়েছে। সেই দুঃস্বপ্নের বার্তা আমাদের হূদয়ের স্পন্দনকে থামিয়ে দিয়েছিল রুদ্ধশ্বাসে। আমি ভাবলাম, এটাও কী বিশ্বাসযোগ্য! দেখতে দেখতে আজ ২৫টি বছর চলে গেল। এখনো বাবুলের কথা মনে পড়লে চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে-‘বাবুল, তুমি আমাদেরকে এমনভাবে কাঁদিয়ে না গেলেই পারতে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads