• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
সরকারের কৌশলী পদক্ষেপ ব্যর্থ 

আন্দোলনের ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় ‘হযবরল’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

সরকারের কৌশলী পদক্ষেপ ব্যর্থ 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৮

এক সপ্তাহের আন্দোলনে শিক্ষাব্যবস্থায় ‘হযবরল’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা দেশের সড়ক নিরাপত্তায় যে নয় দফা দাবি জানিয়েছে, তা সরকার মেনে নিয়ে দ্রুত সময়ে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রায় সব মহল থেকেই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কারো কথায় কর্ণপাত না করে দিব্যি রাস্তায় সড়ক নিরাপত্তার কাজে ব্যস্ত রয়েছে।

শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী কিছুদিন পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা শুরু হবে। দুই মাস পর শুরু হবে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি)। কিন্তু পরীক্ষার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত সাত দিন ধরে ক্লাস বন্ধ। পরীক্ষার প্রস্তুতিও বন্ধ। এ অবস্থায় শিক্ষাব্যবস্থায় হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার এক দিনের জন্য সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল। সরকার ভেবেছিল, স্কুল বন্ধ ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা ঘর থেকে বেরোবে না। ফলে তাদের আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে যাবে। কিন্তু সরকারের কৌশলী এই পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন গুজবে সয়লাব হয়েছে ঢাকাসহ সারা দেশ। গুজবের কারণে শিক্ষার্থীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলেও যাচ্ছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কী করছে? সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, শিক্ষা প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি সামাল দিতে ঘন ঘন বৈঠক করছেন। তবু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন গতকাল শনিবার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দরকার নেই। তাদের সকল দাবি সরকার মেনে নিয়েছে। এখন তাদের ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত। তবু যদি তারা রাস্তায় থাকে তাহলে নানা বিপদ হতে পারে। আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হোক। শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে প্রধান শিক্ষক কিংবা পরিচালনা পর্ষদকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না ওইভাবে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, বাচ্চাদের মোটিভেট করে ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তবে ঢাকার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এ আদেশ মানছেন না। বরং উসকে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে করণীয় জানতে এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরত পাঠাতে আগামীকাল সোমবার সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে ঢাকার স্কুলপ্রধান, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সদস্য এবং অভিভাবকদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছেন। এ ছাড়া ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরত আনতে করণীয় নির্ধারণে আজ রোববার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে।

জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভিকারুননিসায় ক্লাস স্থগিত রাখা হয়েছে। এখন সরকার সড়ক নিরাপত্তায় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ায় তাদের ক্লাসে ফেরত আনতে আজকের সভায় বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি খবু তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠানের সকল শাখা প্রধান এবং ক্লাস ক্যাপ্টেনদের নিয়ে আরেকটি সভা করা হবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সাত দিনের আন্দোলনে বিভিন্ন গুজবে ভেসেছে রাজধানী ঢাকা। এরমধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতন, রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল থেকে ৪১ জন শিক্ষার্থীকে ‘টিসি’ দেওয়া, দুই শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলাসহ নানা গুজব ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু কোনোটাই সত্য নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কে বা কারা এসব গুজব রটিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছে।

এসব গুজবের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, এই গুজবের কারণে শিক্ষার্থীরা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমি চাই না, আমার কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হোক। রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের সভাপতি শিক্ষা সচিব নিজে টিসি দেওয়ার বিষয়ে বলেন, এটা সম্পূর্ণ অপপ্রচার। কোনো শিক্ষার্থীকেই ‘টিসি’ দেওয়া হয়নি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়া এবং যথারীতি ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সারা দেশের সকল জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রধান শিক্ষকদের চিঠি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সংঘটিত বাস দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুজন শিক্ষার্থী নিহত ও কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশপূর্বক সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল জীবনের কথা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম যথারীতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম ও উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জানান, শিক্ষা প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন খুব ‘সফ্টলি’ দেখা হচ্ছে। সকল শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।

তবে সরকার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর সব মহল যেখানে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছেন সেখানে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম গতকাল শনিবার এক বিবৃতি দিয়ে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল কবীর দুলু এবং সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্দোলনরত শিশু-কিশোররা সড়ক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা হাতেনাতে ধরিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সর্বত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। নেতারা বিবৃতিতে কালক্ষেপণ না করে প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন রাষ্ট্রপতির অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে জারি করে দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads