• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
শিক্ষা কর্মকর্তাদের অপকর্ম অদক্ষতা বেয়াদবি

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লোগো

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

শিক্ষা কর্মকর্তাদের অপকর্ম অদক্ষতা বেয়াদবি

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং দুর্নীতি ও অসদাচরণ বন্ধ করা যাদের কাজ সেই প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অপকর্মের খবর আসছে। এ কারণে শুধু এক দিনেই ১৫ জন শিক্ষা কর্মকর্তাকে শাস্তি দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। তারা সবাই ‘শিক্ষা অফিসার’ পদে নিযুক্ত আছেন। একই সঙ্গে আরো ২০ জনকে শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে গত ২৮ আগস্ট ১৫ জন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৬ জন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউইও), ৬ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং একজন হিসাব সহকারী ও একজন উচ্চ মান সহকারী রয়েছেন। এর মধ্যে একজন বরখাস্ত হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে কাউকে ‘লঘুদণ্ড’ আবার কাউকে ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে। এ ছাড়া কারো ইনক্রিমেন্ট বাতিল এবং কারো বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের শাস্তির এ খবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ গতকাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অন্যান্য বিভাগের চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে লোকবল বেশি। কাজেই মোটা দাগে বলা যায় এখানে ‘অপকর্ম’ও বেশি থাকবে। তিনি বলেন, যেসব শিক্ষা কর্মকর্তা শাস্তি পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলো কী- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে ‘স্লিপে’র টাকা মেরে দেওয়া, কারো বিরুদ্ধে সমাপনী পরীক্ষার ফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ বেয়াদবিও করেছেন। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরই তারা শাস্তির কোপে পড়েছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, অভিযোগ আসামাত্রই কোনো কর্মকর্তার শাস্তি হয় না। অভিযোগ পাওয়ার পর সরকারি বিধি মোতাবেক তদন্ত হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বক্তব্য নেওয়া হয়। করা হয় ব্যক্তিগত শুনানি। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি ভোগ করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মাঠ পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সব খবর পাওয়া যায় না। কাজেই মন্ত্রণালয় চাইলেও সারা দেশে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজ করতে পারে না। যাদের নামে অভিযোগ জমা হয়, শুধু তাদের বিষয়ে খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তারা যদি নিজের থেকে না শোধরান, তাহলে এই দুর্নীতি বন্ধ হবে না। বিশেষ করে স্লিপের টাকা মেরে খাওয়া এবং টাকার বিনিময়ে সমাপনী পরীক্ষার ফল পাল্টে বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার মতো বহু অপকর্মে শিক্ষা কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়েছেন।

শাস্তি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম মুন্সীকে অদক্ষতা এবং অসদাচরণের দায়ে ‘তিরস্কার’ দণ্ড দেওয়া হয়েছে। নারী নির্যাতনের মামলায় জেল খাটার কারণে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম ‘সাময়িক বরখাস্ত’ হয়েছেন। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনএম শরীফুল ইসলাম খন্দকারের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ‘সতর্ক’ করা হয়েছে। তিনি ভবিষ্যতে আর এমন কাজ করবেন না বলে স্বীকারোক্তি দেওয়ায় তাকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নওগাঁর রানীনগরের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বেয়াদবির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত শুনানি এবং তার অতীত রেকর্ড পর্যালোচনা করে ‘লঘুদণ্ড’ হিসেবে তার বেতন স্কেল ‘অবনমন’ করা হয়েছে। আগামী এক বছর তিনি এই শাস্তি ভোগ করবেন। নীলফামারীর ডোমারের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অসদাচরণের দুই অভিযোগই ছিল। তবে তার অতীত কর্মকাণ্ড কিঞ্চিৎ ভালো থাকায় তারও বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা আগামী দুই বছর কার্যকর থাকবে। নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাছিমা আক্তার অদক্ষতার দায়ে ‘তিরস্কার’ দণ্ড পেয়েছেন।

বরিশালের বাবুগঞ্জের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোমান্স আহমেদকে ভুল কাজের জন্য ‘সতর্ক’, দুর্নীতির দায়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেনের দুই বছরের জন্য একটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, মাগুরার মহম্মদপুরের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এনামুল হকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার দুই বছরের একটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সরকার মো. রিয়াজুল ইসলামকে কৃতকর্মের জন্য ‘সতর্ক’ করা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মাগুরার মহম্মদপুরের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের এক বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি আটকে গেছে। অদক্ষতার কারণে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নূরজাহান বেগম ‘তিরস্কার’ দণ্ড পেয়েছেন। একই উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমানকে অদক্ষতার অভিযোগে ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেনও অদক্ষতার দায়ে তিরস্কৃত হয়েছেন। চরম অদক্ষতার কারণে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ ফারুখ হোসেনের বেতন বৃদ্ধি ২ বছরের জন্য আটকে গেছে। অদক্ষতা ও অসদাচরণের অভিযোগে সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরা পারভীনেরও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত হয়ে গেছে। একই উপজেলার উচ্চমান সহকারী এস এম আবু বকর সিদ্দিকও একই অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এজন্য তার বেতন বৃদ্ধিও এক বছরের জন্য বন্ধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads