• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯

শিক্ষা

কঠোর নিরাপত্তা আবহে জেএসসি জেডিসি পরীক্ষা

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০১৮

ব্যাপক নিরাপত্তায় আসন্ন জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার আয়োজন করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। প্রথমবারের মতো এই পরীক্ষায় সিকিউরিটি খামে প্রশ্নপত্র রাখা হচ্ছে। এছাড়া ব্যর্থতার কারণে ঢাকা মহানগরীতে ৬টি কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস রোধে পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ আলাদা একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করেছে। একই সঙ্গে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোসহ কেন্দ্র সচিবদের ২৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৫ সদস্যের বদলে ৫ সদস্যের পরীক্ষা কমিটি করা হয়েছে। সাড়ে ৯টার পর কোনো পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পরীক্ষার্থীরা শুধু শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পরীক্ষা দেবে। পরীক্ষা সন্ধ্যায় হলেও তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হবে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে। এছাড়া পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হবে। ঢাকা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এবার দুই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২৬ লাখের কিছু বেশি পরীক্ষার্থী। গতকাল সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের মিলনায়তনে কেন্দ্র সচিবদের নিয়ে সভা করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এতে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে ২৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।  পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে পরীক্ষা শুরুর পর থেকে শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকরা দলবেঁধে অবস্থান করতে পারবেন না। এছাড়া পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে এবারের পরীক্ষা দুটি হওয়ায় বেশ কিছু কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্র সচিবদের জানানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বছর পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রের বাইরে ভেন্যু হিসেবে যেসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হতো এবার সেটি একেবারেই বাদ দেওয়া হয়েছে। কোনো ভাড়া বাড়িতে এবার কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র রাখা হয়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য যা যা করা দরকার তার সবই করা হয়েছে। কেন্দ্র সচিবদের বলা হয়েছে সব সময় প্রস্তুত থাকতে। এবার পরীক্ষার ভেন্যু নামে কোনো শব্দ নেই। সবই পরীক্ষার কেন্দ্র।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেছেন, এবারের জেএসসি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো সিকিউরিটি খামে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হবে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয় সেজন্য বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরীকে প্রধান করে ৬ সদস্যের পর্যবেক্ষণ কমিটি করা হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রের সামনে কোনো অভিভাবকদের জটলা কিংবা দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। এজন্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে জারি হওয়া ১৪৪ ধারা কঠোরভাবে বলবৎ করা হবে। এই ১৪৪ ধারা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে।

২৭ দফা নির্দেশনা : জেএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে ২৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কোনো অবস্থাতেই উপজেলা সদরের বাইরে প্রশ্নপত্র রাখা যাবে না। শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে দুই সদস্যের ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হবে। পরীক্ষার সময় একজন থাকবেন কেন্দ্রের ভেতরে, আরেকজন থাকবেন বাইরে। কেন্দ্র সচিব ব্যতীত অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে যেতে পারবেন না। ছবি তোলা যায় না শুধু এমন একটি ফোন কেন্দ্র সচিব ব্যবহার করতে পারবেন। কোনো অবস্থাতেই পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। ১৪৪ ধারা জারি করা চিহ্নিত স্থানগুলোকে লাল পতাকা টানাতে হবে। পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রের বাইরে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক বা অন্য কেউ যাতে জটলা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করতে হবে। 

ছয় কেন্দ্র বাতিল : আসন্ন জেএসসি পরীক্ষায় ঢাকা মহানগরীর ছয়টি কেন্দ্র বাতিল করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এর মধ্যে গ্রিন ফিল্ড কলেজ কেন্দ্র বাতিলের কারণ হিসেবে শিক্ষা বোর্ড বলেছে, গত বছর জেএসসি পরীক্ষা হওয়া এই কেন্দ্রে নানা অব্যবস্থাপনা হয়েছিল। পাশাপাশি পরীক্ষা পরিচালনার নীতিমালা পরিপন্থি কাজও হয়েছিল। এছাড়া বশির উদ্দিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র,  ট্রাস্ট কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র, শ্যামপুর বহুমুখী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র, সেগুনবাগিচা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র এবং নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। 

শনিবার সন্ধ্যায় পরীক্ষা দিতে হবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের : খ্রিস্টানদের মধ্যে ‘সেভেন্থ ডে অ্যাডভান্টিস্ট’ সম্প্রদায়ের সদস্যরা ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে শনিবার দিনে পড়াশোনা কিংবা লেখালেখির কাজ করেন না। এতদিন বাংলাদেশে তাদের কথা চিন্তা করে শনিবার কোনো পরীক্ষা রাখা হতো না। কিন্তু গত বছর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিধিনিষেধ না মেনে শনিবারেও পরীক্ষার আয়োজন করে। এতে বিপদে পড়ে এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা। গতবার পরীক্ষায় এ নিয়ম করে। গত ১৬ অক্টোবর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এক আদেশ জারি করে বলেছেন, এই সম্প্রদায়ের পরীক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে একটি কক্ষে বসে থাকবে। দিনভর সেখানে বসার পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পরীক্ষা দেবে। প্রবেশপত্রের বাইরে এই ১২ ঘণ্টা সময় এই সম্প্রদায়ের পরীক্ষার্থীরা সঙ্গে কিছু রাখতে পারবে না। এমনকি কোনো অবস্থাতেই তারা পরীক্ষা কেন্দ্রের নির্দিষ্ট কক্ষের বাইরে যেতে পারবে না এবং বাইরের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে না।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ওরা এভাবেই অভ্যস্ত। কারণ এত ছোট ছোট বিষয় আমলে নিলে পরীক্ষার আয়োজন সঙ্কটে পড়বে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা এই সময় ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ে। তাদের বাবা-মা খাবার নিয়ে আসেন। কষ্ট হয় না।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads