• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
প্রাথমিক শিক্ষকদের নির্বাচনী উপহার

লোগো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষকদের নির্বাচনী উপহার

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৮

প্রধান শিক্ষকদের ঠিক একধাপ নিচে বেতনস্কেল বাস্তবায়নের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা যে আন্দোলন করে আসছিলেন তা নির্বাচনের আগমুহূর্তে এসে অনেকটা ঘুরপথে ‘আংশিক’ বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্তমতে সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের ঠিক পরের গ্রেড নয়, সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিচের গ্রেডে বেতন পাবেন। এর মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের ঠিক পরের গ্রেডে বেতন না পেলেও সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত হচ্ছে। সারা দেশে ৬৫ হাজারের কিছু বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪ লাখের কাছাকাছি প্রাথমিক শিক্ষক রয়েছেন। সহকারী শিক্ষকরা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে খুশি হননি। বরং এই সিদ্ধান্তকে ‘ঠকানোর’ নতুন পরিকল্পনা বলে অভিহিত করেছেন শিক্ষকরা। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি পূরণের মাধ্যমে বেতনস্কেল উন্নীতকরণকে নির্বাচনী উপহার বলেছেন। আগামী এক মাসের মধ্যেই শিক্ষকদের দাবি পূরণ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী। অন্যদিকে, সম্প্রতি চলতি দায়িত্ব নিয়ে পদোন্নতি পাওয়া ১৫ হাজার প্রধান শিক্ষককে স্থায়ী করার কাজও শুরু করেছে মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা পেলেও বেতন পান একাদশ/দ্বাদশ গ্রেডে। দশম গ্রেডে তাদের বেতন পাওয়া কথা। আর সহকারী শিক্ষকরা বেতন পান ১৪/১৫তম গ্রেডে। সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেডে বেতন চান। অর্থাৎ একাদশ/দ্বাদশ গ্রেডে। এ নিয়ে আন্দোলন হলেও সরকার খুব একটা আমলে নেয়নি। কিন্তু নির্বাচন সামনে থাকায় শিক্ষকদের এসব দাবি আমলে নিয়ে কাজ শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এসব বিষয়ে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিতে হবে। এজন্য চলতি সপ্তাহে জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের আলোচনা হবে। সচিব পর্যায়ে বৈঠক ফলপ্রসূ হলে খুব দ্রুত নথির কার্যক্রম শেষ করা হবে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের বেতন গ্রেড ঠিকঠাক করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা কাজগুলো শেষ করতে চাই। তাহলে তো শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়ছে, এটা কি সরকারের তরফ থেকে শিক্ষকদের নির্বাচনী উপহার দেওয়া হচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, না না, নির্বাচনী উপহার নয়। বেতনভাতা নিয়ে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন, আমি নিজে তাদের অনশন ভাঙিয়েছি-বলেছি প্রতিশ্রুতির কথা। সেগুলোই এখন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এতদিন পরে এসে নির্বাচনের আগমুহূর্তে কেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টির সুরাহায় চেষ্টা করছি। এখন কাজটি শেষের দিকে।

তবে মন্ত্রীর ঠিক উল্টো কথা বললেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর কাজটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। পত্রিকায় লেখার মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন পেলে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বেতনের বিষয়ে কী করব? তারা এখন দশম গ্রেডে বেতন পান। সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আর প্রধান শিক্ষকের গ্রেড তো এক হতে পারে না। এ রকম বহু ঝামেলা আছে, দেখি কী করা যায়।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের কাজ এত বেড়েছে যে স্কুলে তাদের সময় দেওয়া কঠিন। এজন্য প্রত্যেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করার কাজ শুরু হয়েছে। আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে- সব নিয়ে একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকা ধরে কাজ শুরু হলেও লেখার মতো কিছু হয়নি এখনো।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এই সপ্তাহে নথিটি জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে যেতে পারে। তিনিও বলেছেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে, মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খুব চটেছেন। তারা এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি করছেন। শিক্ষকদের মধ্যে দুটি ভাগ হয়েছে। এদের একভাগ বলছেন, সরকার যেটা করতে চাচ্ছে করুক। তাতে ঘুরপথে হলেও সহকারী শিক্ষকদের বেতন এক গ্রেড বাড়ছে। আবার অন্যপক্ষ বলছে, সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না করে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়িয়ে দেওয়া হোক। তবে শিক্ষকদের এমন দ্বিচারিতার মধ্যেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, কাজগুলো আমরা এমনভাবে করতে চাই যাতে কোনো পক্ষই অসন্তুষ্ট না থাকে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads