• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
প্রজাপতির রঙে ক্যাম্পাস

প্রজাপতি

প্রতিনিধির তোলা ছবি

শিক্ষা

প্রজাপতি মেলা

প্রজাপতির রঙে ক্যাম্পাস

  • শাহিনুর রহমান শাহিন, জাবি
  • প্রকাশিত ০৩ নভেম্বর ২০১৮

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। সবুজে ঘেরা দেশের একমাত্র এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গতকাল শুক্রবার সেজেছিল প্রজাপতির রঙে। ক্যাম্পাসের প্রকৃতিকে বাড়তি রূপে রাঙাতে এখানে অনবরত উড়েছে মন মাতানো নানান রঙের হরেক রকম প্রজাপতি। জালের ভেতর এক গাছ থেকে অন্য গাছে প্রজাপতিগুলোর ওড়াউড়ির দৃশ্য ছিল মনোমুগ্ধকর। জাবিতে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় প্রজাপতি মেলা-২০১৮। প্রজাপতি আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে নির্মল আনন্দ পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী তো বটেই, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নানান বয়সের মানুষও এসেছিলেন এই মেলায়।

নবমবারের মতো এ প্রজাপতি মেলার আয়োজন করে জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা। এ বছরও মেলায় ডানা মেলেছিল ৫০ প্রজাতির প্রজাপতি। ‘প্লেন টাইগার’, ‘কমন ক্রো’, ‘প্লেম জুডি’, ‘ডিঙ্গি বুশ ব্রাউন’, ‘কমন ডাফার’, ‘এপফ্লাই’, ‘পি বু’সহ নানা প্রজাতির প্রজাপতিতে ছেয়ে যায় মেলার অঙ্গন। ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগান নিয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে প্রজাপতি অবমুক্ত করে এবং বেলুন উড়িয়ে এই মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। উদ্বোধনী ভাষণে উপাচার্য বলেন, প্রজাপতি একটা অসাধারণ পতঙ্গ। প্রজাপতির সৌন্দর্যে আমরা মুগ্ধ এবং প্রজাপতির বাহারি রঙ আনন্দে ভরিয়ে দেয় আমাদের মন। প্রজাপতির ডানা ছুঁতে কেউ ছোটেনি এমন মানুষ খুব কম আছে। প্রজাপতি শুধু মানুষকে আনন্দ দেয় তা নয় প্রজাপতি আমাদের অমূল্য সম্পদ। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির অবদান অপরিসীম। আমরা এ রকম একটি মনোমুগ্ধকর মেলার আয়োজন করতে পেরে সত্যিই আনন্দিত।

মেলার উদ্বোধন শেষে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে। মেলা উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র  প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন, অরিগামী, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রামাণ্য ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও পুরস্কার বিতরণ।

রাজধানীর বনশ্রী থেকে পরিবারের সঙ্গে প্রজাপতি মেলায় এসেছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মালবিকা নিপুণ। তার বাবা সিদ্ধার্থ রায় জানান, মেয়ের ইচ্ছে পূরণেই তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রজাপতি মেলায় এসেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিবেশ ও প্রকৃতি খুব ভালো লাগে। এজন্য তিনিও প্রতিবারই এ মেলায় ছুটে আসেন।

সাভার রেডিও কলোনি থেকে মা-বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছে মর্নিং গ্লোরিং স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আবরার রাইমি। সে বলে, ‘দেখে খুব ভালো লাগছে। প্রজাপতিগুলো অনেক সুন্দর। আমি আবার আসব।’

মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন জানান, দেশে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। গাছকাটা, লতাগুল্ম কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন অর্থাৎ অতিবৃষ্টি, অতিরিক্ত গরম— এসব কারণে প্রজাপতির সংখ্যা কমছে। তাই এ প্রজাপতি সংরক্ষণে মানুষকে সহমর্মী ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রজাপতি সংরক্ষণ করতে পারলে আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষা করতে পারব। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতেই এ মেলার আয়োজন।

উল্লেখ্য, প্রজাপতি সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে জাবিতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে দেশের একমাত্র প্রজাপতি মেলা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads