• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
মানে পিছিয়ে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা

লোগো বিশ্বব্যাংক

ছবি : সংগৃহীত

শিক্ষা

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

মানে পিছিয়ে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশে প্রায় শতভাগ শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতিতে সাফল্য এলেও শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে। শিক্ষার নিম্ন মানের কারণে অনেকেই পড়া, লেখা ও গণিতের মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করার দক্ষতা অর্জন না করেই বিদ্যালয় ত্যাগ করছে। ফলে চাকরির বাজারে তারা কোনো কর্ম পাচ্ছে না। বাংলাদেশের মতো অন্যান্য নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশেও এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এ সঙ্কট মোকাবেলায় শিক্ষা খাতে সরকারকে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিনিয়োগের অর্থ ব্যয়ে মান নিশ্চিতেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর বব সাম, লিগো ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা বুচি, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি হেলসি রোগাস্টাস, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ক্রিশ্চিয়ান এডো। এতে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় মানের দিক

দিয়ে যথেষ্ট পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রাথমিকে ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশের শিশুরা যা  শেখে, তা অন্যান্য দেশের শিশুরা সাড়ে ছয় বছরে শিখতে পারে। এ হিসাবে বাংলাদেশের শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করলেও সাড়ে চার বছর পিছিয়ে থাকছে।

উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তৃতীয় শ্রেণির শিশুদের বাংলা পাঠের অবস্থা খুবই করুণ। তাদের ৬৫ শতাংশ বাংলা ভাষা পড়তে পারে না। তৃতীয় শ্রেণির ৩৫ শতাংশ শিশু কোনোরকমে বাংলা পড়তে পারে। অন্যদিকে পঞ্চম শ্রেণি পাস শিশুরা গণিতের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে না। তাদের মাত্র ২৫ শতাংশ নিজেদের শ্রেণির উপযোগী গণিতের সমাধান করতে পারে। শিশুদের প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মসূচির অভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। তা ছাড়া নিম্ন মানের শিক্ষাপদ্ধতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং গণশিক্ষায় অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের বিনিয়োগের কারণেও শিক্ষার মান বাড়ছে না বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, গত আট বছরে বাজেটে শিক্ষা খাতে ব্যয় ৫ গুণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা খাতে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ খাতে বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ ক্রমেই মানসম্মত শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের জন্য বিদ্যালয়গুলো আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। মেধাবীরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে। গত এক বছরে দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বব সাউম বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তিতে সমতা অর্জনকারী হাতে গোনা কয়েকটা দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এখানে মেয়েদের প্রাথমিকে ভর্তির হার ছেলেদের তুলনায় বেশি। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে সমসাময়িক বিশ্বের শ্রমবাজারের উপযোগী মানবসম্পদ তৈরির সুযোগ বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষায় সরকারি বিনিয়োগের হার দক্ষিণ এশিয়ার গড় হারের চেয়ে কম।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষায় বাংলাদেশে সরকারি বিনিয়োগের হার এ খাতে মালয়েশিয়ার সরকারের বিনিয়োগের হারের অর্ধেক। তবে শিক্ষায় বিনিয়োগের পরিমাণটাই বড় কথা নয়। বিনিয়োগের অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হয়ে থাকে, সে বিষয়েও বিশেষ নজর দিতে হবে। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের অর্থ প্রকৃত অর্থেই শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজে লাগছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের শিক্ষাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক জেমস শীভদ্র বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনগুলো প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারছে না। শিশুদের শিক্ষার মান বাড়াতে দেশগুলোর উচিত বিনিয়োগ বাড়ানো। দরিদ্র ও সুযোগবঞ্চিত শিশুরা পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে ছয় মাস বয়সেই পিছিয়ে পড়ছে। বয়স বাড়লেও এ ক্ষতি তারা পুষিয়ে উঠতে পারে না। শিশুকালে উন্নয়ন কর্মসূচির অভাবে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশের শিশুরাও।

বাংলাদেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে তিনটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের শিক্ষার মান মূল্যায়ন করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষকদের মান বাড়াতে হবে। তা ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads