নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ার শান্তনা মার্কেটে ১০০ স্কয়ার ফুটের একটি দোকান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন স্বপ্নের। শখের বশে রঙ নিয়ে শুরু করেছিলেন যে খেলা, সময়ের স্রোতে রঙের বহতায় ২৬ বছর পেরিয়ে ২৭—তে পা দিয়েছে বিশ্বরঙ। দেশীয় আত্মপরিচয়ের মূল্যবোধ থেকেই মূলত বিশ্বরঙের স্বপ্নযাত্রা। শুরুটা ১৯৯৪ সালের ২০ ডিসেম্বর। শুরুর যাত্রা শুরু করেছিলেন ‘রঙ’ নামেই। ঘাত প্রতিঘাতের পথ বেয়ে ক্রমেই নামটি ছড়িয়ে গিয়েছিল মানুষের কাছে। সীমানা পেরিয়ে। রঙ নিয়ে খেলার শুরুর বিষয়ে বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, ২৬ বছর পেরিয়ে আজকের যে বিশ্বরঙ সেই শুরুটা বলতে গেলে মর্মে রঙ লাগানোর মতোই। কালক্রমে সেই রঙ ছড়িয়েছে কর্মে। ভরিয়েছে সকল গুণগ্রাহির আবরণ এবং মননে।
শুরুর গল্প
শুরুরকালে চারুকলার শিক্ষক মরণ চাঁদ পালের কাছ থেকে তার তৈরী সিরামিকের সামগ্রী এনে বিক্রি করতেন। বিক্রি হলে দাম দিয়ে আবার নতুন সামগ্রী কিনে আনতেন। এভাবেই চলতে থাকে সিরামিকের মাধ্যমে পথযাত্রা। সঙ্গে বিয়ে বাড়ির ষ্টেজ ও আল্পনার কাজ। ভাগ্যক্রমে বেড়ে চলে এসবের চাহিদা। তখনও দোকানে কাপড়ের প্রবেশ হয়নি। কাপড় প্রবেশে সময় লেগেছিল আরও কিছুটা সময়।
স্বপ্নরা যখন পাখা মেলে
১৯৯৫ সালে সিরামিকের আর্টপিসগুলোর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান পণ্যের তালিকায় স্থান পায় শাড়ি। পুঁজির অভাবে ঈদের সময় বেশি কাপড় কেনা বা কাজ করতে পারতেন না। তখন পরিচিত কাছের মানুষেরা পুঁজি নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর সেই পুঁজিতে ঈদের সময় বিক্রির জন্য রঙ—এ কাপড় তোলা হতো। পণ্যের তালিকায় রঙ—এর প্রাথমিক সাফল্য এসেছিল পাঞ্জাবির মাধ্যমে। তারপর শখ বা আবেগ থেকেই নতুন এক বোধের জন্ম নেয় বিপ্লব সাহার মনে ও মননে এবং দায়িত্ববোধে। কারণ ততদিনে রঙ—এর কর্মকান্ডের সঙ্গে সরাসরি শত শত মানুষ জড়িয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়েছে শত শত তাঁতী পরিবার। বিপ্লব সাহা মনে করেন, তাঁতীরাই রঙের শিল্পবোধ ও রুচির বাস্তবায়নের প্রধান কারিগর।
দেশীয় ঐতিহ্যের আঁতুড়ঘর
ভিন্নধর্মী কাজের জন্য বিশ্বরঙ সব সময়ই ফ্যাশন সচেতনদের অন্তঃপ্রাণ। শখের হাঁড়ি, মুখোশ, নকঁশী পাখা, কবিগুরু, পটচিত্র, বাংলা পঞ্জিকা, ঐতিহ্যে বাংলা সিনেমা, পানাম নগর, কান্তজী মন্দিরের টেরাকোটা, রিক্সা মোটিফসহ আল্পনার মতো দেশিয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মোটিফকে পোশাকের অলংকরণে ব্যবহার করেছেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মিশেলে দেশীয় ফ্যাশনকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমৃদ্ধির শিখড়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। সেই সুবাধেই প্রদর্শন করেছেন আমেরিকা, ভারত, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ ফ্যাশন সচেতনদের দেশে। পোশাকে অতি উজ্জল রঙের অনুভব, টাঙ্গাইলের মলিন তাঁতের শাড়িকে আধুনিক ফ্যাশনের অনুসঙ্গ করে উপহার দিয়েছেন ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রিকে। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবসে পোশাকের বর্ণিলতা বিশ্বরঙের মাধ্যমেই শুরু হয়ে আজও অভিন্ন এক রীতিতে প্রচলিত।
বিশ্বময় ছড়াতে নবযাত্রা
উদ্যোক্তা হিসেবে আপাদমস্তক শিল্পসত্ত্বায় বারবার পরিপূর্ণ হতে চেয়েছেন বিপ্লব সাহা। মুক্তবাজার অর্থনীতির অস্থির সময়েও শেকড়ের সন্ধানে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে দেশিয় তাঁতকে সব সময় প্রাধান্য দিয়েছেন। দেশিয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যেকে বিশ^ব্যাপী মূল্যায়ণেই বিশ্বরঙের দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পথচলা। রঙ যেন মোর মর্মে লাগে রবি ঠাকুরের এই অনুভবকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতেই ২০১৫ সালে রঙ—এর পথচলা শুরু হয় নতুন নামে। নতুনত্বের সোপানে। রঙ থেকে পথচলায় সঙ্গী হয়ে উঠে বিশ্বরঙ।
নতুনত্বে সহযোগী ব্র্যান্ড
বিশ্বরঙ’র সৃষ্টিশীলতা সবসময়ই সুস্পষ্ট এবং স্বতন্ত্র। স্থানীয় কারিগর, তাঁতি, সূচীশিল্পী, কারুশিল্পীদের সাথে কাজ করেন সব সময়। ফ্যাশন প্রেমীদের অভিন্ন চাহিদাকে প্রাণবন্ত সংগ্রহের পরিসীমায় অতিক্রম করার চেষ্টা করেন। নতুন সব ভাবনার আয়োজনে পরিবারের শ্রদ্ধাভাজন ব্যাক্তির জন্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে এনেছেন বিশ^রঙের সহযোগী ব্র্যান্ড ‘শ্রদ্ধা’। সেই ধারাবাহিকতায় দেশিয় ঐতিহ্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চলের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে টিনএজদের জন্য বাহারি নকশা ও বৈচিত্র্যতায় উপস্থাপন করেছেন ‘ফেইসরঙ’, ‘বিশ^রঙ মেনজ’। এনেছেন শিশুদের জন্য ‘বিশ্বরঙ কিডস’।
সামাজিক দায়বদ্ধতা
২০১০ সালে জাতীয় জাদুঘরে প্রথমবারের মত প্রাত্যাহিক জীবনে রঙের উপস্থিতি নিয়ে ‘রঙধনু’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিপ্লব সাহা বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কখনো সরে আসিনি। দেশীয় বুটিক শিল্পকে রক্ষায় সময়ের প্রয়োজনে রাজপথেও সরব ছিলাম।’ শিশুদের মেধাবিকাশের লক্ষ্যে মা দিবসে আয়োজন করেন ‘আমার রঙে আমার মা’ শীর্ষক এক ব্যাতিক্রমধর্মী প্রতিযোগীতা ও প্রদর্শনী। শিশুদের আকাঁ প্রাণবন্ত চিত্রকলাকে ফ্যাশনের উপাত্ত হিসেবে ব্যবহার করে দিয়েছেন ভিন্নমাত্রা। ২০ বছর পূর্তিতে আরটিভির সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করেন ‘টোয়েন্টি—টোয়েন্টি কালার্স’ নামে প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া প্রতিবছর আয়োজন করেন ‘শারদ সাজে বিশ্বরঙের দিদি’। এ বিষয়ে বিপ্লব সাহা বলেন, ‘সারাদেশের টিনএজারদের মধ্য থেকে প্রতিভাবানদের বাছাই করে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদেশের মিডিয়াকে প্রতিবছরই একঝাঁক নতুন মুখ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছি। যাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করছে প্রতিনিয়ত।’
বিশ্বরঙের শাখা
১। সানরাইজ প্লাজা, ৩য় তলা, ব্লক—এ, লালমাটিয়া, ঢাকা। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (রবিবার বন্ধ)। ২। অর্চাড পয়েন্ট, ৩য় তলা, রোড—৭, ধানমন্ডি, ঢাকা। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (মঙ্গলবার বন্ধ)।
৩। বনানী হাউজ—২৬, ৩য় তলা, রোড—১১, বনানী, ঢাকা। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (রবিবার বন্ধ)। ৪। উত্তরা হাউজ—৯৬, লেক ড্রাইভ রোড, সেক্টর—৭, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা—১২৩০। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (বুধবার বন্ধ)।
৫। মিরপুর প্লট—সি, রোড—১, ব্লক—ক এবং খ, সেকশন—৬ মিরপুর—২, ঢাকা—১২১৬। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (রবিবার বন্ধ)।
৬। বেইলী রোড বেইলী ফিয়েস্টা, ৩য় তলা, বেইলী রোড, ঢাকা। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার বন্ধ)।
৭। ওয়ারী ৪১, স্ট্রীট, ওয়ারী, ঢাকা। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (রবিবার বন্ধ)।
৮। যমুনা ফিউচার পার্ক জি—সি—০১৪ এ, নিচ তলা, জোন—সি, প্রগতি সরণি কুড়িল। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (বুধবার বন্ধ)।
৯। বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, লেভেল—৩, ব্লক—ডি (টাওয়ার পার্ট), পান্থপথ, ঢাকা। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (মঙ্গলবার বন্ধ)।
১০। বনশ্রী হাউজ নং—সি, ব্লক—সি, ২য় তলা, বনশ্রী মেইন রোড, রামপুরা।
১১। দোহার আহমেদ শপিং কমপ্লেক্স, জয়পাড়া, দোহার।
১২। চাষাড়া সান্তনা মার্কেট, একতলা ও দুই তলা, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (শুক্রবারে বন্ধ)।
১৩। ফতুল্লা পশ্চিম লামাপাড়া, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (শুক্রবারে বন্ধ)।
১৪। পাঁচলাইশ এ এফ এম আই প্লাজা (৪র্থ তলা), ১/এ বায়েজীদ বোস্তামী রোড, পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (রবিবারে বন্ধ)।
১৫। কান্দিরপাড়, নজরুল ইসলাম এভিনিউ (ট্রমা হাসপাতালের কাছে), কুমিল্লা। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ।
১৬। পূর্ব জিন্দাবাজার আসগর স্কয়ার (২য় তলা), বারুতখানা পয়েন্ট পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (শুক্রবারে বন্ধ)।
১৭। মুক্তাপাড়া লন্ডন ম্যানশন, ট্রাফিক পয়েন্ট, মুক্তাপাড়া, সুনামগঞ্জ। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (শুক্রবারে বন্ধ)।
১৮। রাজশাহী শহীদুল্লাহ টাওয়ার, ৩য় তলা, হোল্ডিং—৭৫০০ রাণীবাজার, ঘোড়ামারা, রাজশাহী। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (শুক্রবারে বন্ধ)।
১৯। ময়মনসিংহ কবির কমপ্লেক্স ৯০, সি কে ঘোষ রোড, ময়মনসিংহ। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
শো—রুম ছাড়াও অনলাইনে পণ্য কিনতে যোগাযোগ করতে পারেন ওয়েবসাইট www.bishworang.com ও ফেসবুক bishworangfanclub।