• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
দেশে ফেরার আকুতি ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের

প্রতীকী ছবি

ভারত

দেশে ফেরার আকুতি ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের

চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া অর্থ শেষ

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২০

এক সপ্তাহ ধরে ভাত চোখে দেখেননি আবদুল্লাহ আল মাহবুব। শুধু ফলমূল আর চিড়া-বিসু্কট খেয়ে দিন কাটছে ক্যানসার আক্রান্ত মাহবুব ও তার স্ত্রীর। গত ২ মার্চ ক্যানসারের থেরাপি নিতে তিনি কলকাতা যান। সেখানে যাদবপুর এমআরআই ক্যানসার হাসপাতালে চলছে তার চিকিৎসা। থাকেন হাসপাতালের কাছেই একটি আবাসিক হোটেলে। রোববার ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা হয় আবদুল্লাহ আল মাহবুবের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এখানকার খাবার হোটেলগুলো বন্ধ। তাই গত এক সপ্তাহ ধরে ভাত-তরকারি চোখে দেখিনি। হোটেলের পাশেই একটি মুদি দোকান ও ফলের দোকান প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সেখান থেকে শুধু ফলমূল আর চিড়া-বিসু্কট দিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর আহার চলছে।

তিনি বলেন, কলকাতার রাস্তাঘাট জনশূন্য। শুধু চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাইরে বের হওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিরা।

এক যুগের সংসারে সন্তান না হওয়ায় স্ত্রী লিপিকে নিয়ে গত মাসের ২৩ তারিখে ভারতের মাদ্রাজ যান মানিকগঞ্জের আবু সাইদ খোকন। সেখানে সিএমসি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তারা। গত ৭ মার্চ চিকিৎসক দেখানোর পর পুনরায় ২০ মার্চ চিকিৎসক অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেন। ২৩ মার্চ তাদের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ভারতজুড়ে লকডাউনের কারণে আটকা পড়েন তারা। ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে নেওয়া টাকা-পয়সাও শেষ। এখন কী খাবেন, কোথায় থাকবেন, কে তাদের সাহায্য করবেন-সেই চিন্তায় অস্থির খোকন। তিনি জানান, মাদ্রাজের সিএমসি হাসপাতালে ১৫০ জন বাংলাদেশি লকডাউনের কারণে আটকা পড়েছেন। লোকাল থানা তাদের তথ্য কালেক্ট করেছে। একটা ফরম ফিলাম করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের কোনো খোঁজ নেয়নি। তারা অসহায় হয়ে আল্লাহর ওপর খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। বাংলাদেশ থেকে টাকা নেওয়ারও কোনো রাস্তা পাচ্ছেন না তারা।

শাহজাহান বাদশা শুভ নামে এক যুবক জানান, তিনি তার বোনকে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে লকডাউনে আটকা পড়েছেন তারা। এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে কোনো সিন্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ দূতাবাস। হোটেল থেকে জানানো হয়েছে দূতাবাসে তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ভারতে চলছে টানা ২১ দিনের লকডাউন। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। লকডাউনের ফলে ভারতে আটকে গিয়েছেন অসংখ্য বাংলাদেশি নাগরিক। যাদের বেশির ভাগ ভারতে চিকিৎসা জন্য গিয়েছিলেন। অনেকের চিকিৎসা শেষ হলেও ফিরতে পারছেন না তাদের নিজ দেশ। দেশে ফিরতে না পেরে এবং আর্থিক সংকটে পড়ে দিশেহারা তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতে গেছেন কেউ পিতার, কেউ স্ত্রীর, কেউ ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য। প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে রয়েছেন পরিবারের একাধিক সদস্য। কলকাতা ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন শহরে তারা চিকিৎসার জন্য গিয়ে আর দেশে ফিরতে পারছেন না। এদের সবার কথায় অসহায় আর্তি। 

কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় হোটেলবন্দি হয়েছেন অনেক বাংলাদেশি। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আটকে রয়েছেন অনেকে।  কলকাতায় বিভিন্ন গেস্ট হাউজে আটকে রয়েছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। এদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তবে কেউ কেউ বেড়াতেও এসেছেন। তাদের সবার মধ্যে আতঙ্ক কীভাবে দ্রুত দেশে ফিরবেন তা ভেবে। কলকাতায় ঘুরতে এসে বাংলাদেশের আটজনের একটি দল গেস্ট হাউজেই বন্দি রয়েছেন। এই দলের সদস্য রাইফাত হোসেন জানিয়েছেন, কলকাতায় ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু করোনার জন্য সব জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। ফিরতেও সমস্যা হচ্ছে। রাইফাতের দাদাও পরিবারসহ আটকে পড়েছেন কলকাতায়। ঝিনাইদহের বাসিন্দা শামীম আহমেদ স্ত্রী নার্গিস আখতারের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। ২৮ মার্চ চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট। কিন্তু দেখানো যাবে কি না তা নিয়ে তিনি যেমন চিন্তিত, তেমনিভাবে দেশে ফিরবেন তা ভেবেও কোনো কূল পাচ্ছেন না। গাজীপুরের জেসমিন আখতার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসে এমন সংকটে পড়বেন তা ভাবতেও পারেননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের তরফে মুখ্য প্রেস সচিব মোফাকখারুল ইকবাল জানান, ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার আবেদন জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের তরফে তাদের বিশেষভাবে বৈধ উপায়ে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠানোর যাবতীয় রকমের ব্যবস্থা করা হবে। কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকরা ৪০১২৭৫০০ নম্বরেও যোগাযোগ করতে পারেন। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-দূতাবসে যোগাযোগ করা যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads