• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
দিল্লির পার্ক ও মাঠে পোড়ানো হচ্ছে মরদেহ

সংগৃহীত ছবি

ভারত

দিল্লির পার্ক ও মাঠে পোড়ানো হচ্ছে মরদেহ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৮ এপ্রিল ২০২১

শ্মশানে লাশের স্তূপ। শহরে আর মৃতদেহ সৎকারের জায়গা নেই। পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত কাঠ, সৎকার কাজের লোকবলেরও সংকট দেখা দিয়েছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। দিল্লির শ্মশান ও কবরস্থানে দৈনিক গড়ে যে সংখ্যক মরদেহের সৎকার করা হয়, গত এক সপ্তাহে তা ৩-৪ গুণ বেড়ে গেছে। শ্মশান সংকট হওয়ায় পার্ক ও মাঠে অস্থায়ী শ্মশান তৈরি করে তাতে মৃতদেহ পোড়ানো হচ্ছে। 

বর্তমানে দিল্লির সরাই কালে খান শ্মশানে প্রতিদিন ৬০-৭০টি দেহ সৎকার হচ্ছে। শ্মশানের কাছে পার্কেও শতাধিক মৃতদেহের সারি দেখা যায়। আইনত কোনো শ্মশানে দিনে ২০টির বেশি দেহ সৎকার করা যায় না। কিন্তু মহামারীর জন্য সেটা তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে।

দিল্লি শহরে ২৫টি স্থায়ী শ্মশান আছে। শ্মশানে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃতদেহের চাপ বাড়ায় আরো ২০টি অস্থায়ী শ্মশান তৈরি করা হয়েছে। আরো ৮০টির প্রস্তুতি চলছে। দিল্লি শহরের সবচেয়ে বড় শ্মশান নিগমবোধ ঘাট থেকে ওঠা ঘনকালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে আকাশ। আগে ওই শ্মশানে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি দেহ পোড়ানো হতো। এখন দৈনিক ৩০টির বেশি দেহ পোড়ানো হচ্ছে। মৃতের সৎকার করার জন্য আত্মীয়দের অপেক্ষা করতে হচ্ছে চার-পাঁচ ঘণ্টা।

একই পরিস্থিতি কবরস্থানেও। করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃতদেহ অনেক বেশি সংখ্যায় আসতে থাকলে আর কিছু দিন পরই কবর দেওয়ার জায়গা শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দিল্লির কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণকারীরা। দিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর সড়কের পেছনে কবরস্থানের কর্মী মোহাম্মদ নাসের জানান, আগে দিনে দুই বা তিনটি মৃতদেহ আসত। এখন দিনে ২০ থেকে ২৫টি করে মৃতদেহ আসছে। গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। এখানে আর কবর দেওয়ার মতো জায়গা নেই বললেই চলে।

এদিকে ভারতে সুস্থ হওয়া অধিকাংশ করোনা রোগীর দেহেই তৈরি হচ্ছে না অ্যান্টিবডি। যাদের দেহে তৈরি হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৫-৬ মাসের মধ্যে দুর্বল বা অকার্যকর হয়ে পড়ছে এই প্রতিরোধী শক্তি। কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) নামের একটি ভারতীয় গবেষণা সংস্থার সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। সিএসআইআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতে করোনার অতি উচ্চ সংক্রমণের অন্যতম কারণ এটি।

সংস্থাটির গবেষক শান্তনু সিংহ বলেন, মানবদেহের নিউক্লিওক্যাপসিড প্রোটিনই মূলত সার্স-কোভ-২ ভাইরাস বা করোনার মূল প্রতিরোধী শক্তি। অনেকের দেহে সহজাতভাবেই এর শক্তিশালী উপস্থিতি থাকে, আবার অনেকের দেহে এই প্রোটিন যথাযথ কার্যকর হয় করোনায় প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার পর। স্বেচ্ছাসেবীদের সবারই করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ১০ দশমিক ১৪ শতাংশের দেহে করোনা প্রতিরোধী প্রোটিন নিউক্লিওক্যাপসিডের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, নিউক্লিওক্যাপসিড প্রোটিনের উপস্থিতি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ২০ শতাংশের দেহে এই প্রতিরোধী প্রোটিন আছে দুর্বল বা প্রায় অকার্যকর অবস্থায়।

অন্যদিকে ভারতের চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নিয়মিত মাস্ক পরার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো যথাযথভাবে না মানলে একজন করোনা রোগী থেকে এক মাসে ৪০৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। গত সোমবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইসিএমআরের গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম মহাসচিব লব আগারওয়াল। তবে আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে অযথা ভিড় বাড়ানো উচিত নয়। 

তিনি বলেন, ছয় ফুট দূরত্ব থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকলেও এমন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর মাস্ক না পরলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ৯০ শতাংশ। ভারতের উন্নয়ন নীতি বিষয়ক ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে পরিচিত সংস্থা নিতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিভাগের সদস্য ভি কে পাল বলেন, সামাজিক দূরত্ব বিধি যদি ৫০ শতাংশও মেনে চলা হয়, করোনা রোগী থেকে মাত্র ১৫ জন সংক্রমিত হতে পারেন। দূরত্ব বিধি যদি ৭৫ শতাংশ মেনে চলা হয়, সে ক্ষেত্রে একজন রোগী থেকে মাত্র আড়াই জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই সবাইকে তাই অনুরোধ করছি, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। বাড়িতেও মাস্ক পরুন। মনে রাখবেন করোনাকে হারানোর একটাই উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মাস্ক এবং পরিচ্ছন্নতা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads