• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
ভারতে নতুন আতঙ্ক হোয়াইট-ইয়েলো ফাঙ্গাস

সংগৃহীত ছবি

ভারত

ভারতে নতুন আতঙ্ক হোয়াইট-ইয়েলো ফাঙ্গাস

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৬ মে ২০২১

করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ভারতে নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (কালো ছত্রাক)। বিরল রোগটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে আসার আগেই দেশটিতে মানবদেহে শনাক্ত হয়েছে আরো দুই ধরনের ছত্রাক হোয়াইট ও ইয়েলো ফাঙ্গাস। এটি হোয়াইট ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়ে আরো বেশি মারাত্মক বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

সবশেষ উত্তর প্রদেশে ইয়েলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণের খবর জানিয়েছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণত বিভিন্ন পোকার শরীরে হলুদ ছত্রাক দেখা যায়।

ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ড. বিপি তিয়াগি জানান, ৪৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তির দেহে একই সঙ্গে কালো, সাদা ও হলুদ ছত্রাকের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, পোকার শরীরে সাধারণত ইয়েলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা যায়। মানুষের শরীরে এ ছত্রাক এর আগে আমি কোনোদিন দেখিনি।

ব্ল্যাক ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের মতোই ‘অ্যাম্ফোটারিসিন বি’ ইয়েলো ফাঙ্গাসেরও ওষুধ। কিন্তু এটি সারতে সময় নেয় অনেক বেশি।  ক্লান্তি ও ক্ষুধা কমে যাওয়া ইয়েলো ফাঙ্গাসের অন্যতম উপসর্গ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক তিয়াগি।

ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ওই রোগীর সন্তান বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে জানান, তার বাবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।  কয়েক দিন ধরে তার চোখ ফুলে উঠছিল এবং হঠাৎই দুই চোখ এক সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তার নাক দিয়ে রক্ত পড়া এবং অনিয়ন্ত্রিত মূত্র ত্যাগ শুরু হয়।

করোনাভাইরাসে প্রাণহানি তিন লাখ ছাড়ানো ভারতে এর মধ্যেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিভিন্ন রাজ্য। এ রোগে আক্রান্তরা প্রাণে বেঁচে গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক বা দুই চোখ, এমনকি চোয়ালও ফেলে দিয়ে বাঁচতে হয় বাকি জীবন। এ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ৯ হাজারের বেশি মানুষের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিহার আর মধ্য প্রদেশে শনাক্ত হয় হোয়াইট ফাঙ্গাস। এটিও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মতোই প্রাণঘাতী। মস্তিষ্ক, শ্বাসতন্ত্র আর পরিপাকতন্ত্রে ছড়ায় এটি। চলমান পরিস্থিতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহূত একমাত্র ওষুধ অ্যাম্ফোটারিসিন বির ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে ভারতে। সংকট মেটাতে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলছে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অর্থাৎ করোনাভাইরাস মহামারির আগে বিশ্বে প্রতি ১০ লাখ মানুষের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ দশমিক ৭। বিরল এসব ছত্রাকের সংক্রমণ সাধারণত ‘মিউকর মোল্ড’ জাতীয় এক ধরনের শ্লেষ্মার সংস্পর্শে এলে হয়।  এই শ্লেষ্মার দেখা মেলে মূলত মাটি, গাছ, সার, পচে যাওয়া ফলসবজিতে, যা সবকিছুতেই ছড়াতে পারে। মাটি ও বাতাসের মাধ্যমে নাক হয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষকেও আক্রান্ত করতে পারে এটি। শীত ও বসন্তের তুলনায় গ্রীষ্ম ও শরৎকালে এ ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।

শ্বাসতন্ত্র অথবা ত্বকের মাধ্যমে একবার এটি মানবদেহে প্রবেশ করলে মুখমণ্ডলজুড়ে ছড়াতে শুরু করে। প্রথমে নাক, কপাল ও গালের পেছন আর দুই চোখের মাঝখানে অবস্থিত সাইনাস বা ‘এয়ার পকেট’, তার পর ত্বক, মস্তিষ্ক, ফুসফুস আর কিডনিতেও ছড়ায় এই ছত্রাক। এক এক করে সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে থাকে এর সংক্রমণে।  ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও এইডসে আক্রান্ত বা দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা খুব দুর্বল, এমন ব্যক্তিদের জন্য প্রাণঘাতীও হতে পারে এই মিউকরমাইকোসিস।

ছোঁয়াচে না হয়েও ভারতে হঠাৎ এসব ছত্রাকের প্রকোপ বাড়ার কারণ নিয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি শনাক্ত রোগীদের সবাই করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠেছেন বলে চিকিৎসকদের ধারণা, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে স্টেরয়েডের ব্যবহারের ফলে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। মানবদেহে প্রাকৃতিকভাবে যেসব হরমোন নিঃসরণ হয়, সেগুলোর কৃত্রিম সংস্করণ হলো স্টেরয়েড।

করোনাভাইরাসের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ওষুধ এখন পর্যন্ত উদ্ভাবন হয়নি। এতে গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে যারা, তাদের ফুসফুসে প্রদাহ কমাতে নানা ধরনের রাসায়নিকের সমন্বয়ে তৈরি স্টেরয়েড ব্যবহার করছেন চিকিৎসকরা। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের ফলে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ক্ষতিও কমাতে সহায়ক স্টেরয়েড। কিন্তু একই সঙ্গে এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে এবং ডায়াবেটিস আছে বা নেই এমন সব রোগীর রক্তেই শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

ধারণা করা হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যধিক দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে মিউকরমাইকোসিসের রোগী বাড়ছে। ডায়াবেটিসের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে, করোনাভাইরাস যা আরো বাড়িয়ে তোলে। এর ওপর করোনার চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করা তা অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে।

সাধারণত সব বয়সি মানুষের এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি না থাকলেও ভারতে মহামারীকালীন রোগটিতে ২৫ বছর বয়সের তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads