• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর: উৎপাদনের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

শিল্প

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর: উৎপাদনের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে

  • প্রকাশিত ৩১ আগস্ট ২০২০

ইকবাল হোসেন জীবন, (মিরসরাই) চট্টগ্রাম:::

দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পার হলেও এখনো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের কোথাও একটি কারখানাও উৎপাদনে যায়নি। তবে দুটি কারখানার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং বেশ কটি কারখানার নির্মাণ কাজ চলছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

ধারণা করা হচ্ছে, সাগরপাড়ের সুপার ডাইক আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে দুই লেনের সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্যোক্তারা উৎপাদনে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এতে দেশের বৃহত্তম এ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প উৎপাদনের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

অবশ্য এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় দুই দুইটি শিল্প কারখানা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। এগুলোর একটি চাইনিজ মালিকানাধীন জেনিয়ান কেমিকেল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। পরে করোনার প্রাদুর্ভাবে তারা উৎপাদনে যেতে পারেনি। তবে শীঘ্রই দুটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাবে। তার আগে শিল্প উদ্যোক্তাদের যেসকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা পূরণ করতে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৪ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প আছে। এটির অধীনে এসব সুযোগ সুবিধা শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, ‘ বসুন্ধরা, এশিয়ান পেইন্ট, ম্যাগডোনাল স্টিল, মর্ডাণ সিনট্রেকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা নির্মাণের কাজ করছে। তারা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। কারণ এখানে বিদ্যুত গ্যাসের বিষয় রয়েছে। গ্যাসের লাইন টানতে হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আর্থিক খাতে প্রায় ৪ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট আছে। এটির অধীনে আমরা এসব সুযোগ সুবিধা শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিব।’

কাজের অগ্রগতি:

বেজার সহকারী প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস ওয়াহিদ (সিভিল) জানান, ইতোমধ্যে এখানে সম্পন্ন হয়েছে ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাকা সড়কের কাজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া বাজার থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ইপিজেড এলাকা পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে দুই লেনের সড়ক। যার দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়ন করছে সওজ। বর্তমানে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ড সমুদ্র তীর ঘেঁষে তৈরি করছে সাড়ে ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সুপার ডাইক নামে নতুন একটি দৃষ্টিনন্দন ভেড়িবাঁধ। যা যুক্ত হবে মেরিন ড্রাইভ সড়কের সঙ্গে। আগামী জুন মাসে এটি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

বেজার এ প্রকৌশলী আরো জানান, জাতীয় গ্রীড থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত গ্যাস সম্প্রসারণ লাইন সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা একটি শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ দিয়েছি। গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন স্থাপন করছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এখানে স্থাপন করছে ১শ ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র।

এখানে শিল্পকারখানা স্থাপনের অগ্রগতি সম্পর্কে ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, জেনিয়ান কেমিকেল, বসুন্ধরা গ্রুপ, এশিয়ান পেইন্ট, মেগডোনাল নিপ্পন স্টিলসহ বেশ কিছু কোম্পানী এখানে কারখানা নির্মাণ করছে। তার মধ্যে জেনিয়ানসহ দুইটি কারখানার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তারা শীঘ্রই উৎপাদনে যাবে।

সরেজমিন:

এদিকে সরেজমিন মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় গেলে দেখা যায় মহাসড়ক থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়কের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ১৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের জমি অধিগ্রহণ, কালভার্ট নির্মাণ ও মাটি ভরাট করতেই পার হয়ে গেছে প্রায় তিন বছর।

অবশ্য এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার জানান, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। আমরা আগামী মাসেই (সেপ্টেম্বর) পুরোপুরি কাজ শেষ করবো। বর্তমানে এ সড়কের সাড়ে ৭২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

বন্যা ও জলোচ্ছাস থেকে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুরক্ষার জন্যে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে সাড়ে ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দৃষ্টিনন্দন সুপার ডাইক নামে একটি সড়ক। যা যুক্ত হবে মেরিন ড্রাইভ সড়কে। এটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের শেষের নাগাদ। প্রথমে ৩ কিলোমিটার অংশ বাস্তবায়ন করে বেজা কর্তৃপক্ষ। বাকি সাড়ে ১৯ কিলোমিটারের দায়িত্ব বত্যায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ওপর। এটির বাস্তবায়নের কাজ করছে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় সাড়ে ২২ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। তবে বর্তমানে সাগর ঘেঁষে থাকায় এ সড়কটির দৃষ্টিনন্দন রূপ যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে।

প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে পাউবোর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনিস হায়দার খান জানান, ২০১৭ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ১৬শ ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এ সুপার ডাইক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করছে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। আশা করা হচ্ছে আগামী জুনের মধ্যে এটির কাজ সম্পন্ন হবে।

পরিকল্পনা:

মোট ৫০ হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে ৫০টিরও বেশি বিশেষায়িত অঞ্চল স্থাপিত হবে। নির্মিত হবে বিমান বন্দর ও নদী বন্দর।

প্রকল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের উন্নয়নে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। পণ্য আমদানি রপ্তানীর জন্য এখানে একটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হবে। যার সম্ভাব্যতা যাছাই ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এছাড়া ফেনীর সোনাগাজী অংশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের আদ্যেপান্ত:

২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গভর্নিং বোর্ডের সভায় মিরসরাইয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে এখানে মোট ৩০ হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে ৫০টিরও বেশি বিশেষায়িত অঞ্চল স্থাপিত হবে। ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এখানে বেপজা ইকোনমিক জোন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৯ সালে মিরসরাই-সীতাকুণ্ড ও ফেনীর সোনাগাজী এলাকায় বর্ধিত করা হয় দেশের বৃহত্তর এ শিল্পাঞ্চল। এটির নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। যার আওতায় থাকবে মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও সোনাগাজী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads