• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

আইন-আদালত

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ২ বছর পূর্তি আজ

৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট চূড়ান্ত

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০১ জুলাই ২০১৮

গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার দুই বছর পূর্তি আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ ওই হামলার চার্জশিট প্রস্তুত। কিছু আনুষ্ঠানিকতা সেরে চলতি সপ্তাহেই এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করার কথা।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম গতকাল শনিবার মোবাইল ফোনে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। দ্রুততম সময়ে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। চার্জশিটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ২২ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে আসামি হচ্ছেন ৮ জন। হামলায় অংশগ্রহণকারী ৫ জঙ্গি ঘটনাস্থলে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন অপারেশনে ৯ জন নিহত হয়েছে। অভিযানে জড়িত বাকি ৮ জনের মধ্যে ৬ জন কারাগারে ও ২ জন পলাতক। কারাগারে থাকা আসামিরা হলো— রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ ও আবদুস সামাদ ওরফে মামু। পলাতক দুই আসামি হচ্ছে- শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন।

নিহত ১৪ আসামির মধ্যে হলি আর্টিজানে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গি ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডো অভিযানে নিহত হয়। এরা হচ্ছে- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে আরো ৯ জন নিহত হয়। তারা হলো- তামীম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান। তবে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হাসনাত করিমকে মামলার চার্জশিটে আসামি করা হবে কি না- সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কানাডা প্রবাসী তাহমিদ হাসিব খানকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। ফলে তার নামও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। চার্জশিটে হলি আর্টিজানে হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তামিম আহমেদ চৌধুরী, অর্থ জোগানদাতা হিসেবে ব্যাংকার তানভির কাদেরী, অপারেশনাল কমান্ডার হিসেবে নুরুল ইসলাম মারজান, সমন্বয়ক হিসেবে রাজীব গান্ধী ওরফে রিগ্যান ও প্রশিক্ষক হিসেবে মেজর (অব.) জাহিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। গাইবান্ধার নিভৃত চরে প্রশিক্ষণ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও যশোরের সীমান্ত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক আনার বিষয়টিও চার্জশিটে উল্লেখ থাকছে।

ঘটনার দুই মাস পর ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিম চৌধুরী, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে মারজান, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রূপনগরে মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ জাহিদ এবং ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে রায়হান, ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তানভির কাদেরী এবং ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানে নিহত হয় সারোয়ার জাহান।

চার্জশিটে আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রমাণ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এটা একটা ‘হোমগ্রোন’। হামলাকারীরা দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠী। এর প্রধান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। সে কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসে পুরনো জঙ্গিদের একটা অংশকে নিয়ে নব্য জেএমবি গঠন করে।

জব্দ তালিকা : মামলায় আলামত হিসেবে জব্দ অস্ত্র, গুলি, গুলির খোসা, ছোরা, চাপাতির একটি তালিকাও সংযুক্ত করা হয়েছে।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা যা বললেন : চার্জশিট চূড়ান্ত তবে ভয়াবহ ও স্পর্শকাতর এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংস্থার একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মেজর (অব.) জাহিদ মাস্টার ট্রেইনার ছিল। প্রশিক্ষণ চলে ২৮ দিন। হামলার আগে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি ঝিনাইদহে কথিত হিজরত করে। সেখানে তারা কিছুদিন অবস্থান করে একাধিক টার্গেট কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করে। এটা জঙ্গিদের ভাষায়, বড় হামলার আগে হাতে-কলমে শিক্ষা। তারপর তাদের ঢাকায় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ভাটারার একটি বাসায় রাখা হয়। ওই বাসা থেকে প্রথমে রিকশায় এবং পরে হেঁটে গিয়ে হলি আর্টিজানে হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় খুব বেশি খরচ হয়নি। ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এই খরচ তারা মিটিয়েছে কমন ফান্ড থেকে। ২০১৬ সালে আর্থিকভাবে সচ্ছল অনেকেই নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছিল। অনেকেই অ্যাপার্টমেন্ট ও গাড়ি বিক্রি করেছিল। তাদের সঞ্চয়ের সব টাকা সংগঠনে দিয়েছিল। এ কারণে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা জোগাড় করতে বাইরে থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজন হয়নি।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান ২ নম্বর সার্কেলের ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছিল পাঁচ জঙ্গি। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে নিহত হন ডিবির সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন। জঙ্গি হামলায় ইতালির ৯, জাপানের ৭, ভারতের ১ এবং বাংলাদেশের ৩ নাগরিককে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গিসহ ৬ জন। অভিযানে এক জাপানি ও দুই শ্রীলঙ্কানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় ৪ জুলাই গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads