• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ডিজিটাল আইন নিয়ে আপত্তির সমালোচনায় জয়

তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়

সংরক্ষিত ছবি

আইন-আদালত

ডিজিটাল আইন নিয়ে আপত্তির সমালোচনায় জয়

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০২ অক্টোবর ২০১৮

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি তোলায় সম্পাদক পরিষদের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। পাশাপাশি এই আইনের ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিদেশি দূতাবাসগুলোর দেওয়া বিবৃতির কারণে কূটনীতিকদেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। গত রোববার মধ্যরাতে অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন জয়।

সম্পাদক পরিষদের সমালোচনা করে জয় বলেন, ‘পরিষ্কারভাবেই, তাদের নৈতিকতা বলে কিছু নেই। বস্তুত সম্পাদক পরিষদ বলতে চায়, তাদের সরকারের বিরুদ্ধে নোংরা, মিথ্যা প্রচারণা চালাতে দিতে হবে এবং সত্য অবলম্বন না করেই তাদের অপছন্দের রাজনীতিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রেস ক্লাব, সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের কোনো সংগঠনই কিন্তু তাদের নিজেদের নৈতিকতার সনদ বা আচরণবিধি প্রয়োগ করতে পারেননি। সম্পাদক পরিষদের বর্তমান প্রধান মাহফুজ আনাম, যিনি টেলিভিশনের পর্দায় স্বীকার করেছেন ১/১১ এর সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রচারের কথা। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে হলে তাকে বাধ্য করা হতো সাংবাদিকতা পেশা থেকে পদত্যাগ করতে। শুধু তাই নয়, তাকে আর কোনোদিন সম্পাদক বা সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতো না। বাংলাদেশে কিন্তু সম্পাদক পরিষদ উল্টো তার পক্ষ নিয়েই তাকে তাদের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত করেছে। বিষয়টি আমাকে অবাক করে।’

জয় লিখেছেন, ‘যেহেতু, ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) ও যুক্তরাষ্ট্র মিশন এই আইন নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছে, আমি আশা করব তারা মাহফুজ আনামের স্বীকারোক্তির পরও একটি প্রথম সারির পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত থাকা নিয়েও তাদের মতামত জানাবেন। তা না হলে, তাদের কার্যকলাপ হবে একপেশে ও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল।’

সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। এ আইনের ২৫ ধারায় কাউকে ‘বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার’ জন্য তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার এবং ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন’ করার উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা প্রচার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ বলছে, এই ধারা সংবাদমাধ্যমে সব ধরনের অনুসন্ধানী রিপোর্টিংকে সরাসরি বিরূপভাবে প্রভাবিত করবে। অন্যদিকে ওই ধারার পক্ষে যুক্তি দিয়ে জয় লিখেছেন, ‘যেহেতু গণমাধ্যমের সম্পাদকরা তাদের নিজেদের তৈরি নৈতিক নির্দেশনাই মানতে রাজি নন, তাহলে আমরা সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের ভার আদালতের হাতেই তুলে দেই। গ্রেফতার মানেই জেল নয়। সরকারের প্রমাণ করতে হবে যে, আসামি জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছেন। যেসব সাংবাদিকের মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর উদ্দেশ্য নেই, তাদের ভয়েরও কিছু নেই।’

জনগণের তথ্য ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে দাবি করে জয় বলছেন, ‘এর মাধ্যমে হয়তো একজন সাংবাদিকের কাজ কঠিন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কারো দুর্নীতি ফাঁস করার জন্য একজন সাংবাদিকের কি সরকারি অফিসের কম্পিউটার হ্যাক করে নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্য চুরির অধিকার থাকা উচিত? পৃথিবীর কোনো দেশই কিন্তু বেআইনিভাবে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার সুযোগ দেয় না, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও না। সরকারি অফিসে গোপনে নজরদারি করা সবদেশেই আইনবহির্ভূত, সাংবাদিকদের জন্যও। সাংবাদিকদের তাদের তথ্য অন্যান্য সূত্র থেকে জোগাড় করতে হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘যেসব কূটনৈতিক মিশন এই আইনটি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন তাদের আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই: সাংবাদিকরা কি আপনাদের দূতাবাসের ভেতরে গোপনে নজরদারি করার যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে পারবেন?’

আইনের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রসঙ্গ যুক্ত করার বিষয়ে যারা আপত্তি করছেন, তাদের নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জয়। তিনি লিখেছেন, ‘আইনটির এই ধারার বিরুদ্ধে যারা বলছেন তারা আসলে বাঙালি নন। তারা গোপনে জামায়াত সমর্থক রাজাকার।’ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হলোকাস্ট ডিনায়াল আইনের ওপর ভিত্তি করেই ওই ধারা প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে জয় লেখেন, ‘এ আইনের কিছু অংশ অনলাইনে মিথ্যা বা গুজবের মাধ্যমে সহিংসতা বা ধর্মীয় উন্মাদনা উসকে দেওয়ার বিরুদ্ধে। পৃথিবীর সব দেশেই এ ধরনের আইন আছে।’

আইনের ৪৩ ধারায় পরোয়ানা ছাড়াই শুধু সন্দেহবশত তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের সুযোগের বিষয়ে জয়ের যুক্তি, ‘শুধু অপরাধ সংঘটিত হয়ে যাওয়ার পর যদি গ্রেফতার বা তল্লাশি চালাতে হয়, তখন ওয়ারেন্টের প্রয়োজন হয়। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় ধরা পড়লে এর প্রয়োজন হয় না এবং এ নিয়ম সব দেশেই রয়েছে। পুলিশ যদি অনলাইন হ্যাকিং সম্পর্কে তথ্য পায় ও হ্যাকারের অবস্থান খুঁজে পায়, তাহলে ওয়ারেন্টের জন্য অপেক্ষা করা উচিত নাকি তাৎক্ষণিক তাকে থামানো উচিত?’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads