• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে

লোগো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

আইন-আদালত

গোলটেবিল বৈঠকে সংশোধনের তাগিদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের পাশাপাশি উদ্বেগের কারণ সাধারণ মানুষের জন্যও। এ আইনে যাকে-তাকে আটকে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পুলিশকে দেওয়া হয়েছে অপার ক্ষমতা। তাদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল হবে মামলার ভবিষ্যৎ। এতে আইনের ব্যাপক অপব্যবহার ও হয়রানির সুযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় হয়রানি থেকে মানুষকে বাঁচাতে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের তাগিদ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেছেন, চলতি সংসদ অধিবেশনে আইন পরিবর্তন করতে পারে সরকার।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে ‘মুক্ত গণমাধ্যম : প্রেক্ষিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ তাগিদ এসেছে। আইন, আদালত ও মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাঈদ আহমেদ। বক্তব্য রাখেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস ও লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাদল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব শাবান মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মিজান মালিক ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। সঞ্চালনা করেন এলআরএফের সাধারণ সম্পাদক হাসান জাবেদ।

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, প্রত্যেক আইনের একটি প্রস্তাবনা থাকে। এই আইনের প্রস্তাবনায়ও ডিজিটাল অপরাধের বিচারের কথা রয়েছে। আইন যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রশ্ন রাখার সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবে কার্যকর হয়েছে। এখনো প্রয়োগ হয়নি। বিষয়টি এমন নয় যে, ঢালাওভাবে আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। যদি অপব্যবহার হয়, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন কিংবা বাতিলও হতে পারে। তথ্য-প্রযুক্তির এই সময়ে ডিজিটাল জালিয়াতি একটি ভয়াবহ সমস্যা। এই সমস্যার নিয়ন্ত্রণ দরকার।

জয়নুল আবেদীন বলেন, এ আইনটি নিবর্তনমূলক। কালো আইন। গণমাধ্যমের জন্য যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি সাধারণ মানুষও ক্ষগিতগ্রস্ত হবে। যাকে-তাকে আইনের আওতায় ফেলে দেওয়া যাবে। আইনটি পড়ে মনে হয়েছে, এটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন দরকার। বর্তমানে সংসদ অধিবেশন চলছে, এই অধিবেশনে সংশোধন করে সাধারণ মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া দরকার।

জয়নুল আবেদীন বলেন, আসল কথা হলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একটি লক্ষ্য থেকে আইনটি করা হয়েছে। যাতে আগামী নির্বাচনে কেউ শব্দ উচ্চারণ করতে না পারেন। দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে এ আইন করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে সাঈদ আহমেদ বলেন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে ছাপাখানা আইন, দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহূত হচ্ছে। সম্প্রতি এসেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আমরা জানি, প্রতিটি আইন প্রণয়নের আগে আইন কমিশনের সুপারিশ থাকে। এ আইন প্রণয়নে আইন কমিশনের সুপারিশ ছিল কি না আমরা জানি না।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, এ আইনের অপপ্রয়োগ সম্ভব। কারণ পূর্বের তথ্য-প্রযুক্তি আইনে সাংবাদিকদের হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার কথা তুলে ধরে বলেন, একটি ভুয়া আইডি থেকে মন্ত্রীকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ভুয়া আইডির বিষয়ে আমি আগেই পুলিশকে অবহিত করেছিলাম, কিন্তু ভুয়া আইডির সঙ্গে জড়িতদের কিছু হয়নি। আমার না হয় উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, যাদের এ সুযোগ নেই তাদের কী হবে আমাদের ভাবতে হবে?

সারা হোসেন বলেন, বাক-স্বাধীনতার পাশাপাশি মানুষের অন্য অধিকারও এ আইনে লঙ্ঘিত হবে। মানুষের যে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে যেমন- নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করা যাবে না, কিন্তু প্রতিনিয়ত মানুষকে টেনেহিঁচড়ে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো, একটি পক্ষকে ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার করা হলেও আরেকটি পক্ষ যে ডিজিটাল মাধ্যমে অশ্লীল ও গালিগালাজ করছে তাদের আইনের আওতায় আনবে কে?

শাবান মাহমুদ বলেন, এ আইনের ৩২ ধারা উদ্বেগজনক। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অন্তরায়। আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন ছাড়া আইন কার্যকর করা আমরা মেনে নিতে পারে না। প্রয়োজনে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মৌলিক আইনের মধ্যে পড়ে না। এটি সম্পূরক আইন হিসেবে কাজ করবে। কারণ মৌলিক আইনে সবকিছু স্পষ্ট থাকবে। কিন্তু এ আইনে অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে। ফলে অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের আশঙ্কাও রয়েছে।

সবচেয়ে অভূতপূর্ব বিষয় হলো, তদন্ত কর্মকর্তা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) কোনো ঘটনায় অনুরোধ করবে। আর এ অনুরোধ করা মানে হলো আদেশ দেওয়া। এতে বিটিআরসি পুলিশের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। একটি ইউটিউব চ্যানেল বন্ধে একজন পুলিশ কর্মকর্তাই যথেষ্ট।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads