• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
আ.লীগ-বিএনপি আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

আইন-আদালত

আদালত বর্জন

আ.লীগ-বিএনপি আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ নভেম্বর ২০১৮

আদালত বর্জন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিএনপি ও সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। হইচই, হট্টগোল ছাপিয়ে একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে দুপক্ষের মধ্যে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর প্রতিবাদে গতকাল আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। এই সমিতিতে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। গত মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে দশ বছরের রায় দেন হাইকোর্ট। সরকারের চাপে এ রায় দেওয়া হয়েছে এবং রায়কে বেআইনি দাবি করে প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আদালত বর্জনের কর্মসূচি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী (বার) সমিতি।

বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বুধবার সকাল ৯টায় সুপ্রিম কোর্ট ভবনের দুটি প্রবেশ মুখের গেটে (কলাপসিবল গেট) তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। এতে  অন্য আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারেননি। তবে বর্জনের মুখেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যক্রম চলেছে। সকাল ৯টা থেকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মামুদ হোসেনের নেতৃত্বে আদালতের কার্যক্রম চলে।

বিএনপি সমর্থক শত শত আইনজীবী বার সভাপতি জয়নুল আবেদীনের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরাও আদালত বর্জনের বিরুদ্ধে পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন। গেটে লাগানো তালা খুলে আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা আদালতে যেতে চাইলে তাতে বাধা দেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের আইন কর্মকর্তারাও এতে অংশ নেন। কিছুক্ষণ পর পরই থেমে থেমে চলছে দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি, বিক্ষোভ, স্লোগান, ঠেলাঠেলি ও  হট্টগোল চলে। এতে কয়েকজন আইনজীবী সামান্য আহতও হন।

বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা একটানা স্লোগান দিতে থাকেন ধর্মঘট চলবে, হরতাল, আদালত বর্জন চলবে’ অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এতে নেতৃত্ব দেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল ও গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের সভাপতি মনির হোসেন, সাবেক সহ-সম্পাদক এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা। বিক্ষোভে অংশ নেন ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি আইনজীবী এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান, তৈমূর আলম খন্দকার, আবেদ রাজা, মো. শাহজাদা, ড. রফিকুল ইসলাম মেহেদী, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, মো. আখতারুজ্জামান, জামিল আক্তার এলাহী, রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মোহাম্মদ আলী, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, মো. আহসান উল্লাহ, আনিছুর রহমান খান, কাজী জয়নাল আবেদীন, মির্জা আল মাহমুদ, শরীফ ইউ আহমেদ কয়েকশ আইনজীবী।

বিক্ষোভ চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের ঘোষিত আদালত বর্জন কর্মসূচিতে সাধারণ আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন। তারাই সুপ্রিম কোর্ট আদালত ভবনের গেটে তালা দিয়েছেন। এরপর বেলা ১টায় আইনজীবীরা আদালত বর্জন কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়া আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা এই কর্মসূচির প্রতিবাদে মিছিল ও স্লোগান দিতে থাকেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নেতৃত্ব দেন সিনিয়র আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন খসরু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, শ ম রেজাউল করিম প্রমুখ।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বার সভাপতির কক্ষের সামনের দিকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে এলে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। উভয়পক্ষ এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে। বেলা ১টা পর্যন্ত উভয়পক্ষের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের  সভাপতির কক্ষের সামনে অবস্থান করে পাল্টা পাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে রাজনৈতিক মঞ্চ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই আইনিভাবেই করতে হবে। আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত নয়। আদালত বর্জন করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা করতে পারেন। গেটে তালা দিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের তারা বাধ্য করতে পারেন না। এ তালা ভাঙতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইনজীবীরা শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আদালত বর্জন কর্মসূচি করেছে। তিনি বলেন, সাধারণ আইনজীবীদের ধারণা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মামলায় যে রায় দিয়েছে তা সরকারের চাপের মুখে আদালত বাধ্য হয়ে পাঁচ বছরের সাজা বৃদ্ধি করে ১০ বছরে উন্নীত করে। একটি রাজনৈতিক মামলায় এ ধরনের ঘটনায় দেশের আইনজীবী সমাজ বিচার বিভাগের ওপর এ ধরনের হস্তক্ষেপ অতীতে কখনো দেখেনি। এটা দেশ ও জাতীর জন্য দুঃখজনক। জয়নুল আবেদীন অভিযোগ করেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের আদালত বর্জনের কর্মসূচিতে সাধারণ আইনজীবীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া থাকলেও সরকারের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হাতুড়ি নিয়ে নারী আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ করেছেন। এর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশের আইনজীবী সমিতিতে মানববন্ধন পালনের কর্মসূচি ঘোষণা দেন।

আজ মানববন্ধন : আদালত বর্জনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকারদলীয় আইনজীবীদের হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বারসহ সারা দেশের সকল জেলা বারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads