• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় বাস্তবায়ন নেই

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮

ছবি : সংগৃহীত

আইন-আদালত

সড়ক পরিবহন আইন

প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় বাস্তবায়ন নেই

  • রেজাউল করিম হীরা
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০১৯

দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে ৫ বছরের করাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রেখে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে পাস হয়। এরপর কেটে গেছে পাঁচ মাস। কিন্তু এখনো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এই আইন বাস্তবায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এমনকি তৈরি হয়নি নীতিমালাও। যার ফলে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরছে না। যাত্রীরাও দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চন্দন কুমার দে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইনের মধ্যেই উল্লেখ করা আছে, সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে যে তারিখ থেকে আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবে সেই তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে। আইন পাস করা হলেও মন্ত্রণালয় থেকে এখনো আইন বাস্তবায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি, বিধিমালা এখনো তৈরি হয়নি।’

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মো. মাহাবুব-ই-রাব্বানী বলেন, ‘সারা দেশের সড়ক পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা আনতে গত সেপ্টেম্বরে সড়ক পরিবহন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এরপর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে সরকার যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখন থেকেই এই আইন বাস্তবায়ন করা হবে’।

গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশে সাড়া ফেলার পাশাপাশি বিশ্বেও আলোচিত হয়েছিল। এরপরই কয়েক বছর ধরে ঝুলে থাকা আইনের খসড়াটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই বছরের গত ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়। এরপর জাতীয় সংসদে পাস হয়।

সড়ক পরিবহন বিলে বলা আছে, এই আইনে যাই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে এ সংক্রান্ত অপরাধ দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর এ সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে দণ্ডবিধির ৩০৪বি ধারাতে যাই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। বিলের ১১৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) প্রযোজ্য হবে। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী হত্যা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই হিসেবে যেকোনো সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হত্যা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

কিন্তু সড়ক পরিবহন আইনটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরছে না। থামছে না সড়কে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হচ্ছে। পরিবহন মালিক ও চালকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। আইনটি পাস হওয়ার ৫ মাসের বেশি সময় অতিক্রম হলেও আইন বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। আইন বাস্তবায়নে সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে চাপ থাকার কারণে বিধিমালা এখনো তৈরি করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট সচিবালয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের ৪২তম বৈঠকে ১৯টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন নেই। এর নেপথ্যে নিরাপদ সড়কের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), সিটি করপোরেশন, ট্রাফিক পুলিশ, সড়ক পরিবহন মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন ও পথচারী। এ আইনে তাদের দায়িত্ব পালনে কতটুকু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু বিচারের নামে আইন করে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা যাবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার অধিকার আছে। কারণ তারা ন্যায়বিচার ও নিরাপদ সড়কের জন্য শুধু পথে নামেনি, অত্যন্ত সুন্দরভাবে তারা দেখাতে পেরেছে, সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞান ও চর্চা অনুকরণীয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘১৯৮৫ সালে দণ্ডবিধিতে যে সংশোধনীর মাধ্যমে বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত যান চালনায় সংঘটিত মৃত্যুর ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছরে কমিয়ে আনা হয়, হাইকোর্ট ২০১৪ সালে তা অবৈধ ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর বহাল থাকার কথা। অথচ গণমাধ্যম প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী প্রস্তাবিত আইনে তা ৫ বছর করায় কার্যত সাজা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আন্দোলনকারী তরুণ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, ‘আইনটি আমাদের বিবেচনায় অগ্রহণযোগ্য। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সবসময় চালককে দোষী ভাবা ঠিক নয়। দায়ী মালিক হতে পারে, পথচারীও হতে পারে। তাই আইনে চালক শব্দটির পরিবর্তে দায়ী ব্যক্তি ব্যবহার করা যেত।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads