• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
আট জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জশিট চূড়ান্ত

লোগো ইউএসএআইডি

আইন-আদালত

জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যা

আট জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জশিট চূড়ান্ত

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২৬ এপ্রিল ২০১৯

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে মেজর জিয়ার নির্দেশে হত্যা করে জঙ্গিরা। রাজধানীর কলাবাগানে সংঘটিত জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার চার্জশিট প্রস্তুত করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। দেশের বাইরে পালিয়ে থাকা মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিম প্রধান মেজর জিয়াসহ ৮ জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে এ চার্জশিট শিগগিরই আদালতে দাখিল করা হবে।

২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হচ্ছে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নেতা  মোজাম্মেল  হোসেন ওরফে সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ  জোবায়ের, আরাফাত শামস ওরফে সাজ্জাদ, ফয়জুল ওরফে আসাদুল্লাহ, হায়দার  জোনায়েদ, আকরাম ওরফে আবির আদনান ও আফনাল ওরফে অনিক। তাদের মধ্যে মোজাম্মেল সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ, আরাফাত শামস ও আসাদুল্লাহ কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক। ঘটনার পর থেকে মেজর জিয়া পলাতক রয়েছে। এটা ছিল তার সর্বশেষ অপারেশন। এর আগে ২০১৩ সাল থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে এবিটির সক্রিয় সদস্যদের নিজেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণ দেয় সে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা প্রথমে ২০১৩ সালে আহমেদ রাজীব হায়দারকে মিরপুরে হত্যা করে। এরপর অভিজিৎ, নীলয়, ওয়াসিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশসহ বেশ কয়েকজন ব্লগারকে হত্যা করে। প্রতিটি ঘটনায় অপারেশনের আগে একাধিকবার রেকি করে তারা। এরপর পরিকল্পিতভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় কলাবাগানের বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা জুলহাজ (৩৫) ও তার বন্ধু মাহবুবকে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর পালানোর সময় বাধা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লাকেও কোপায়। কলাবাগান থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মমতাজউদ্দিন এক দুর্বৃত্তকে জাপটে ধরলে তাকেও কুপিয়ে পালিয়ে যায় তারা। তবে এএসআই মমতাজ ওই দুর্বৃত্তদের একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ কেড়ে নিতে সক্ষম হন। ওই ব্যাগে একটি পিস্তল, একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মুঠোফোন পাওয়া যায়। গতকাল ২৫ এপ্রিল ওই জোড়া খুনের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। তিন বছর ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সব বিষয়। চার্জশিটে ঘটনার বিবরণ বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম সূত্র জানায়, জুলহাজ সমকামিতা নিয়ে পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় আনসার আল ইসলাম তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। জঙ্গি মোজাম্মেল সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ, আরাফাত শামস ও আসাদুল্লাহ আদালতে এ ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার সমন্বয়, পরিকল্পনা ও নির্দেশে জঙ্গিনেতা সেলিমের তত্ত্বাবধানে আনসার আল ইসলামের ১২ জঙ্গি খুনের ঘটনায় জড়িত ছিল। হত্যার আগে পাঁচ জঙ্গি জুলহাজ ও মাহবুবের গতিবিধি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তারা হলেন মোজাম্মেল সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ,  জোবায়ের আকরাম, আরাফাত শামস ও হাসান। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে হায়দার জোনায়েদ, আফনাল, আসাদুল্লাহ, কামরুল ও আলীম বাসায় ঢুকে জুলহাজ ও মাহবুবকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় তৎকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মার্কিন পুলিশের একটি তদন্ত দল ঢাকায় এসে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে পরামর্শ দিয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মেজর জিয়াকে ধরতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। কিন্তু আজো মেজর জিয়ার কোনো হদিস করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দারা।

মেজর জিয়া কোথায় আছে এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের সাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মেজর জিয়া দেশে নেই। সে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে আত্মগোপন করে আছে- এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে আমরা অবহিত করেছি। তারা চেষ্টা করছে মেজর জিয়াকে গ্রেফতার করার জন্য।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads