• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

আইন-আদালত

ছয় খুন মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ৬ বছরেও

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

রাজধানীর ওয়ারী এলাকার গোপীবাগে পীর লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয়জন খুনের মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ছয় বছরেও। কবে শুরু হবে মামলার কার্যক্রম তাও কেউ বলতে পারছে না।

ঘটনাটি আলোচিত হলেও তদন্তের ক্ষেত্রে ততটা গুরুত্ব পায়নি বলে অভিযোগ ওই মামলার বাদী ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া লুৎফর রহমানের ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুকের।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাঁচ পরিবার ছয় জনকে হারিয়েছি ছয় বছর হয়ে গেল। এখনো বিচার পেলাম না। আমরা সবাই হতাশ। তবুও আশায় আছি বিচার হবে। হত্যাকাণ্ডের অনেক সময় হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত শুধু জবানবন্দি ছাড়া আর তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

বাদী বলেন, বাবাকে হারিয়েছি। বাবার পরে ভাইয়ের স্থান। তাকেও হারিয়েছি। সংসার গোছাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এত দিনেও বিচার শুরু না হওয়ায় চরম হতাশ আমরা।

আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী থেকে আলোচিত যত ঘটনা ঘটেছে কোনোটারই বিচার হয়নি। আমিও তো সেদিন হত্যাকারীদের টার্গেটে ছিলাম। তারা সেদিন আমাকেও খুঁজেছিল। বাসায় না থাকায় ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই। এখন আশায় আছি যেন মামলাটির তদন্ত শেষ হয়ে মামলাটির বিচার হয়।

২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর গোপীবাগের বাসায় লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয়জন খুন হন। আলোচিত এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ঘাতকদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রায় ১০০ বার সময় নিয়েছে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। থানা পুলিশ, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাত ঘুরে মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। আগামী ৫ জানুয়ারি মামলাটির প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তারিখ ধার্য রয়েছে।

মামলাটির তদন্ত কবে শেষ হবে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। সিটিটিসির উপ-কমিশনার (ডিসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলাটির তদন্তে তেমন নতুন কোনো আপডেট নেই। কবে নাগাদ মামলাটির তদন্ত শেষে চার্জশিট দেওয়া যাবে এ মুহূর্তে তাও বলা যাচ্ছে না।

মামলার এজাহারে বলা হয়, লুৎফর রহমান ফারুক পীর ছিলেন। তার অনেক মুরিদ ছিলেন, যারা বাসায় যাতায়াত করতেন। তিনি নিজেকে সবার কাছে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দাবি করতেন। তার ধর্মীয় মতাদর্শের সঙ্গে প্রচলিত ধর্মীয় মতাদর্শের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। যার কারণে ইতঃপূর্বে রাজধানীর বিবির বাগিচায় লুৎফর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয় এবং গেণ্ডারিয়া ও গোপীবাগে হামলার চেষ্টা করা হয়।

২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর মাগরিবের নামাজের আগে ১০/১২ জন লোক ধর্মীয় বিষয়ে জানার জন্য এসেছে বলে জানায়। লুৎফর রহমান ফারুক সবাইকে দরবার ঘরে বসতে দিয়ে তাদের খাবারের ব্যবস্থার জন্য মুরিদ শাহিনকে বাজারে পাঠায়।

এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে লুৎফর রহমান ফারুক, তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, তার মুরিদ শাহিন, মজিবুর, মঞ্জুরুল আলম, রাসেল ভূঁইয়া সবাইকে কসটেপ দিয়ে মুখ আটকিয়ে, হাত-পা বেঁধে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

একই সময় আসামিরা লুৎফর রহমান ফারুকের তাওই, আনোয়ার মিস্ত্রি ও অন্য একজন মুরিদকে হাত-পা-মুখ বেঁধে দরবার রুমে ফেলে রাখে।

ঘটনার সময় আসামিদের একজন বলে, ওনার (লুৎফর রহমান ফারুক) আরেক ছেলে আছে আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ কোথায়? এরপর লুৎফর রহমান ফারুকের স্ত্রী ও তার পুত্রবধূর কাছে আসামিরা বলে যায়, ‘এই ছয়জনকে মারার অর্ডার ছিল, ছয়জনকে মারছি। তোরা যদি পুলিশ কিংবা মিডিয়ার কাছে কিছু বলিস তাহলে তোদের অবস্থা ওদের মতো হবে।’

এদিকে আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় এখন পর্যন্ত আটজন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এরা হলো- হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে জুলফিকার ওরফে সাদ বিন রিপন, মামুনুর রশীদ রিপন, সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম ওরফে জিতু ওরফে নীরব ওরফে নিয়ন ওরফে হিমু, সৈয়দ আল আমিন, তরিকুল ইসলাম, মো. গাফ্ফার, মো. আজমেরী ওরফে অমিত ও মো. গোলাম সরোয়ার।

আসামিদের মধ্যে আজমির অমিত ও গোলাম সরোয়ার জামিনে আছেন। অপর ছয় আসামি কারাগারে আছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads