• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯

আইন-আদালত

শুনানির অপেক্ষায় আলোচিত মামলা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর ২০২১

দেশে বহুল আলোচিত অনেক মামলার শুনানি বন্ধ আছে দীর্ঘদিন ধরে। করোনাকালীন শুনানি বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয়েছে এ স্থবিরতা। তবে শিগগিরই বিচারকাজে গতি ফিরবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টেও সশরীরে শুরু হয়েছে বিচার কার্যক্রম। আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ পুরোদমে বিচারিক কাজ চালাচ্ছে। বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত ও একক মিলে ৫৩টি বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন। একই সময়ে দেশের সব নিম্ন (বিচারিক) আদালতও খুলেছে।

আইনজীবীরা বলছেন, দুই দফায় করোনা মহামারির কারণে উদ্যোগ নেওয়ার পরও আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার চূড়ান্ত বিচার কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। দ্রুতই হয়তো এসব মামলার বিচারকাজে গতি ফিরবে।

শুনানি বা নিষ্পত্তি অপেক্ষায় থাকা উল্লেখযোগ্য মামলাগুলোরর মধ্যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, সিলেটের রাজন হত্যা মামলা, পুলিশ দম্পতি হত্যায় একমাত্র সন্তান ঐশীর মামলা, ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলা, বরগুনার রিফাত হত্যা মামলা, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা, হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামালার আপিল ও রমনা বটমূলে হামলার ডেথ রেফারেন্সসহ আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্য মামলা রয়েছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে অনলাইনে অর্থাৎ ভার্চুয়ালি অনেক মামলার শুনানি চলছে। কিন্তু অনেক চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হচ্ছে না।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা হানা দিলে অন্য সব ক্ষেত্রের মতো উচ্চ আদালতের কার্যক্রমেও স্থবিরতা নামে। তখন টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে বিধিনিষেধ ক্রমে শিথিল হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে থাকা চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত মামলাগুলোও সচলের উদ্যোগ হয়। কিন্তু ২০২১ সালের মার্চের শেষ দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রকট আকার ধারণ করলে আবারো আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা আসে। আবারও এসব মামলার বিচারকাজ থমকে যায়। এতে একদিকে যেমন বিচার প্রার্থীদের অপেক্ষা বাড়ছে, অন্যদিকে কারাগারে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ন্যায়বিচার প্রার্থী বহু আসামির।

সাবেক আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে শুনানির ব্যবস্থা হয়। দরকার হলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মামলার পেপারবুক প্রস্তুত ও শুনানি হতে পারে। এসব প্রস্তুতি নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পারে মামলাগুলোর শুনানির উদ্যোগ নিতে।

ক্রিমিনাল বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেছেন, আমরা তো আসামিপক্ষের আইনজীবী। কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা চাঞ্চল্যকর মামলার শুনানি হবে কি না, সেটি আমরা বলতে পারি না। তবে মামলা শুনানির জন্য কাযর্তালিকায় (কজলিস্টে) এলে, আমরা তা শুরু করতে প্রস্তুত আছি।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, করোনা মহামারি কাটিয়ে এখন কোর্টের কার্যক্রমে স্বাভাবিকতা ফিরেছে। লকডাউনে আদালত সীমিত পরিসরে চলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি সম্ভব হয়নি। এখন যেহেতু আদালত খুলেছে, আমরা পর্যায়ক্রমে এসব আলোচিত মামলার শুনানির উদ্যোগ নেব।

বিচারপ্রার্থী আইনজীবীরা বলছেন, উচ্চ আদালতে উল্লেখযোগ্য হারে মামলা নিষ্পত্তি হলেও জট কমছে না। এর অন্যতম কারণ, পুরোনো ও চাঞ্চল্যকর মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া। সার্বিক পরিস্থিতিতে মামলাজট কমানো ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এসব মামলার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া উচিত। যদিও রাষ্ট্রপক্ষ ও অন্য আইনজীবীদের প্রত্যাশা, শিগগির ঝুলে থাকা মামলাগুলোর আপিলসহ অন্য কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ আসবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর সব মামলা শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে তালিকা ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে শুনানি হবে। এক্ষেত্রে পিলখানা হত্যা মামলা, হলি আর্টিসান মামলা, ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই আসামি জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও হবিগঞ্জের সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের রিভিউ আবেদন অগ্রাধিকার পেতে পারে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলছেন, করোনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা শুনানি অপেক্ষমাণ। এসব মামলার শুনানি শেষ হলে দ্রুত নিষ্পত্তিও হয়ে যাবে।

আপিল বিভাগে পিলখানার বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ কায়সারের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে।

এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আসামিপক্ষের আপিল আবেদন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের মামলায় দলটির পক্ষ থেকে করা আপিল আবেদন, পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তাদের কন্যা ঐশী রহমানের পক্ষে আবেদন, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য রয়েছে।

হাইকোর্ট বিভাগে শুনানি হতে পারে গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় নারকীয় হামলা মামলায় আসামিপক্ষের জেল আপিল, ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ডেথ রেফারেন্স, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, রমনার বটমূলে বোমা হামলাসহ বেশকিছু মামলা হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। এ ছাড়া পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ হত্যা ও খুলনায় শিশু রাকিব হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়াও আটকে আছে।

রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণে বোমা হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিল শুনানি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর হাইকোর্টের কার্যতালিকায় উঠেছিল। হাইকোর্টে গত ২ নভেম্বর আপিল আবেদনটি বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ছিল। পরে শুনানি নিয়ে কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে মামলাটি একাধিকবার কার্যতালিকায় এলেও শুনানি হয়নি। সবশেষ গত ২৪ জুন এবং এর আগে ১৪ মার্চ কার্যতালিকায় এসেছিল।

সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলা প্রায় চার বছর ধরে আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায়। নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত সাত খুন মামলায় সাবেক র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন, এম এম রানা, সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড উচ্চ আদালতে বহাল থাকলেও, আসামিরা সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করায় মামলাটি এখনো বিচারাধীন। করোনার কারণে এ মামলার আপিল শুনানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads