আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ায় আইনজীবীর ফ্ল্যাট থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস তুলি (২২) নামে এক তরুনীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ফুসে উঠেছে। বুধবার রাতে এই মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের মা শরীফা বেগম বাদী হয়ে ওই আইনজীবী মাহমুদুল হাসান সুমনের নামে মডেল থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন । এদিকে কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়ে ইনস্টিটিউটের সামনে মানব বন্ধন কর্মসুচী পালন করছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলছেন, কুষ্টিয়া জজ কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান সুমনের সঙ্গে নিহত তুলির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এক সপ্তাহ আগে অন্য এক মেয়েকে ওই আইনজীবী বিয়ে করেন। মঙ্গলবার বিকেলে সুমনের ভাড়া বাসার ৩ তলার ফ্লাটে এসে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে।
বিষয়টিকে পুলিশ প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বললেও পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত হত্যা। এ ঘটনায় ঐ ভবনে থাকা একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকেই মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের দানা বেঁধেছে।
মা শরিফা বেগম বিলাপ করে বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার মেয়ে নয়। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
নিহতের বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস তাসনিম বলেন, তুলি যে কোচিং-এ পড়তো সুমন সেখানকার শিক্ষক ছিলেন। সেখান থেকে তারা পরিচিত। তাদের দু’জনের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্কের কথা আমাদের জানা নেই। আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় শহরের মজমপুর এলাকার মফিজ উদ্দিন লেনের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান সুমনের ভাড়া বাসার ৩ তলা ফ্ল্যাট থেকে তুলির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে শহরের মোল্লা তেঘড়িয়ার মোল্লা পাড়ার ওহিদুল ইসলামের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে তুলি ছোট। তিনি কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। এ ঘটনার পর থেকে সুমন পলাতক রয়েছে।
নিহতের মা শরীফা বেগম জানান, মঙ্গলবার মেয়ের জন্মদিন ছিল। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটে ক্লাস করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। বের হওয়ার সময় তার কাছ থেকে ১০০ টাকা চেয়ে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হঠাৎ করেই সুমন বড় জামাইকে ফোন করে জানাই তুলি আত্মহত্যা করেছে। সে তুলিকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে বলে। তাৎক্ষনিক সুমনের বাসায় গিয়ে দেখি ফ্ল্যাটের নিচে একটি ভ্যানের উপর তুলির মরাদেহ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় মেয়েকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত বলেন। তিনি দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডঃ তাপস কুমার বলেন, ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়া গেলে জানা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা।