• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

প্রতীকী ছবি

বিবিধ

স্রষ্টার অপার বিস্ময়

  • প্রকাশিত ০৬ এপ্রিল ২০২১

রাব্বুল আলামীন তার এই বিশাল জগতে কত যে অকল্পনীয় ও বৈচিত্র্যময় বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তা ভাবতেই অন্তর বিস্ময়ে শিউরে ওঠে। অতিশয় ক্ষুদ্র অণু-পরিমাণ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী, বড় বড় প্রাণী এবং অতি বড় নক্ষত্র গ্যালাক্সিতে ভরপুর এ মহাবিশ্ব। আল্লাহর সৃষ্টি বিশেষ করে বিশ্বজগত মানুষের জন্য চির বিস্ময়ের বস্তু। বিজ্ঞানীরা মহাকাশ সম্পর্কে বছরের পর বছর গবেষণা করে বিস্ময়কর অজানা অনেক তথ্য আবিষ্কার করেছেন। মহাকাশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্যে কোরআনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃজনে এবং দিন-রাত আবর্তনে সেসব জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে আর বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র, অনন্তর আমাদের দোজখের আগুন থেকে মুক্তি দিন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-১৯০, ১৯১) আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার জন্য তার সৃষ্টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, পৌঁছতে হবে চিন্তার সর্বোচ্চ চূড়ায়। এখানে তার বিস্ময়কর সৃষ্টির কিয়দ উল্লেখ করা হলো।

সৌরজগত : মহাবিশ্বের দিকে তাকালে প্রথমে যে বিস্ময়কর জগৎ দেখতে পাই, তাহলো সৌরজগত। সূর্য ও তার গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে গঠিত আমাদের এ সৌরজগত। সূর্য একটি সাধারণ নক্ষত্র। এ পর্যন্ত সূর্যের নয়টি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। সূর্যের গ্রহ-উপগ্রহের পরিসংখ্যান নিচে দেওয়া হলো। (১) বুধ। সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। এতে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। এটি ৮৮ দিনে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসে। এ গ্রহের ব্যাস ৩০৩০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৩ কোটি ৬০ লক্ষ মাইল। (২) শুক্র। এর ব্যাস হলো, ৭৭০০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৬ কোটি ৭০ লক্ষ মাইল। সূর্যকে প্রদক্ষিণ ২২৫ দিন পরপর। (৩) পৃথিবী। কেবল পৃথিবীতেই জীবনের জন্য উপযোগী  ও পরিবেশ রয়েছে। পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে তৃতীয় গ্রহ। এর ব্যাস ৭৯১৫ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা পরপর একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। উপগ্রহ ১ টি। (৪) মঙ্গল। এ গ্রহের ব্যাস হলো ৪২৩০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ১৪ কোটি ২০ লক্ষ মাইল। প্রদক্ষিণ করার সময় ৬৮৭ দিন। উপগ্রহ ২ টি। (৫) বৃহস্পতি। সূর্যের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এটিতে শুধু গ্যাসই রয়েছে, কোনো পৃষ্ঠ নেই। এর ব্যাস ৮৮৭০০ মাইল। দূরত্ব  ৪৮ কোটি ৩২ লক্ষ মাইল। ১১ বছর ৩৩৫ দিন পর একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। উপগ্রহ ১৬ টি। (৬) শনি। এ গ্রহের ব্যাস প্রায় ৭৫০০০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব  ৮৮ কোটি ৬০ লক্ষ মাইল। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় ২৯ বছর ৬ মাস। উপগ্রহ ১০ টি। (৭) ইউরেনাস। এর ব্যাস ২৯০০০ মাইল। দূরত্ব ১৭৮ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। ৮৪ বছর পর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। উপগ্রহ ৫ টি। (৮) নেপচুন। ব্যাস প্রায় ২৮০০০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ২৭৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ১৬৫ বছরে একবার। উপগ্রহ ২ টি। (৯) প্লুটো। এ গ্রহের ব্যাস ৩৬০০ প্রায় মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৩৬৭ কোটি মাইল। ২৪৮ বছর পর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে।

পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় গ্রহ। পৃথিবীর পরিধি হলো ২৫০০০ মাইল। পৃথিবীর পৃষ্ঠের আয়তন ১৯,৮০,০০,০০০ বর্গমাইল। এর মধ্যে প্রায় ৫ কোটি ৬০ হাজার বর্গমাইল স্থলভাগ, বাকি বিশাল অংশ জলভাগ। পৃথিবী প্রতিদিন একবার নিজ কক্ষের ওপর ঘুরে আসে, এটাই পৃথিবীর আহ্নিক গতি। প্রতিটি বস্তুর ছায়ার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় তার আহ্নিক গতির কারণে। পৃথিবী স্থির থাকলে ছায়ার বিস্তৃতি কখনো সম্ভব হতো না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি কি লক্ষ্য করো না! কিভাবে তোমার প্রতিপালক ছায়া সমপ্রসারিত করেন? তিনি চাইলে তাকে স্থির করে দিতে পারেন; অনন্তর আমি সূর্যকে করেছি এর নিদর্শক। (সুরা ফুরকান, আয়াত-৪৫)

সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্যের অবস্থান। সূর্য পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড় এবং এর ভর পৃথিবীর ভরের চেয়ে ৩,৩৩,০০০ গুণ বেশি। সূর্যের ন্যায় হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে যে জগত তাকে বলা হয় তারকা জগত বা গ্যালাক্সি। সূর্য যে গ্যালাক্সির অন্তর্ভুক্ত তার নাম মিলকিওয়ে। সূর্য তার কক্ষপথ থেকে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে প্রতি সেকেন্ডে ২০০ মাইল বেগে অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৭,২০,০০০ মাইল বেগে ২০ কোটি বছরে একবার ঘুরে আসে।

গ্যালাক্সি বা নক্ষত্র জগত : হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে একটি গ্যালাক্সি বা নক্ষত্র জগত গঠিত। এক একটি গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র রয়েছে ১০ হাজার কোটি হতে ৩০ হাজার কোটি পর্যন্ত। আবার নক্ষত্রগুলো একটি হতে অপরটি অনেক দূরে অবস্থিত এবং নিজ নিজ কক্ষপথে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে অবিরত ঘূর্ণায়মান। বিজ্ঞানীদের হিসেবে এক নক্ষত্র হতে অপর নক্ষত্রের গড় দূরত্ব ২.৫৫ আলোকবর্ষ বা প্রায় ১৫ লক্ষ কোটি মাইল। এক আলোকবর্ষ বলতে আলো প্রতি সেকেন্ডে ১৮৬০০০ মাইল বেগে এক বছরে যত মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে তা বুঝায় আর তা হলো ৫.৮৭ লক্ষ কোটি মাইল।

মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা কত তা সঠিকভাবে এখননো জানা যায়নি এবং যাবেও না। তবে অতিকায় শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে যা জানা যায়, এতে দৃশ্য জ্যোতিষ্কের ভর সমষ্টি অদৃশ্য পদার্থের ভরের তুলনায় মাত্র শতকরা ১০ ভাগ। বাকি ৯০ ভাগ পড়ে আছে মানুষের দৃষ্টির বাইরে। আর দৃশ্য গ্যালাক্সির সংখ্যা ১০০ কোটি। বিজ্ঞানীদের ধারণা মহাবিশ্বের গ্যালাক্সির সংখ্যা ২০ হাজার কোটি। সে হিসেবে মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা ২০ হাজার কোটি বা ১০ হাজার কোটি। এ থেকে অনুমান করা যায়, মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা নিরূপণ করা কত জটিল। আসলে দুনিয়ার সকল সমুদ্রের বেলাভূমিতে যতগুলো বালুকণা রয়েছে, আকাশমণ্ডল অবস্থিত নক্ষত্রগুলো তত সংখ্যক কিংবা তার চেয়েও অনেক বেশি। এই মহাবিশ্বকে যত জানতে চেষ্টা করা হয় কৌতূহলতা ততই বেড়ে যায়। বিস্ময় আর বিহ্বলতার মাঝে প্রশ্ন জাগে এই মহাবিশ্বের কিংবা বিস্ময়কর মহাসৃষ্টির স্রষ্টার বিশালতা কেমন?

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ

লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক

ahmadabdullah7860@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads