• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
স্বেচ্ছাসেবী ও রক্তদাতা আসমাঊল হুসনা

সংগৃহীত ছবি

বিবিধ

স্বেচ্ছাসেবী ও রক্তদাতা আসমাঊল হুসনা

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

আত্মকেন্দ্রিকতার এ যুগে  কিছু মানুষ রয়েছে যারা নিজেকে নিয়ে বিমোহিত থাকার জায়গাটি উপেক্ষা করে।  নিজেদের উৎসর্গ করে সমাজসেবার জন্য। এসকল সমাজসেবীদের ভাবনার জগৎজুড়ে থাকে অসহায় মানুষের সেবার নিয়ত। তারা আছে বলেই পৃথিবীটা আজো এতো সুন্দর। আসমাঊল হুসনা তেমনি একজন। তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী ও  রক্তদাতা।

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বদলে গেছে আমাদের পরিচিত বিশ্ব। পরিবর্তন  এসেছে  বিভিন্ন দেশের সার্বিক চিত্রে এবং সেই সাথে মানুষের জীবনেও। পরিবর্তনের এই ধারা থেকে বাদ যাননি আসমাঊল হুসনা নিজেও। লক-ডাউনের সেই সময়টিতে হতাশায় কেটেছে তার জীবনও।

হতাশাগ্রস্ত তার জীবনটিকে আলোকিত করতেই মানবিক সংগঠন ‘পজিটিভ ঢাকা’ তাদের সাথে কাজ করার জন্য আসমাকে প্রস্তাব দিলেন। ঘরে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে রক্তদাতা ম্যানেজ করে হাসপাতালে থাকা অসহায় মানুষের জন্য কাজ করা যায়। এই বিষয়টি তিনি উপলব্ধি করলেন পজিটিভ ঢাকা -তে যুক্ত হবার পর। এভাবেই রক্তদাতা ম্যানেজ করে দিয়ে অসহায়ের সেবা করতে শুরু করেন তিনি। বিনিময়ে রোগীর লোক থেকে দোয়া ছাড়া নেন না অন্যকিছু ।

ইন্টারনেটের বদৌলতে  স্বেচ্ছাসেবীরা রোগীদের জন্য  ব্লাডের যোগান দিয়ে থাকে। তাই আপাতত দৃষ্টিতে কেউ যদি একবার কোনো  হাসপাতালের একজন রোগীর জন্য  ব্লাড ম্যানেজ করে দেয়। সেই একজনের মাধ্যমে ফোন নাম্বারটি পুরো হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই মার্জিয়ার ব্লাডের জন্য তার মা হাসপাতাল থেকে  আসমার নাম্বারটি যোগাড় করে তাকে ফোন দিয়ে তাদের অসহায়ত্তের কথা জানায়। পরবর্তীতে আসমা ও তার সংগঠন মিলে মার্জিয়ার জন্য ১৩ জন রক্তদাতা  ম্যানেজ করে দেয় এবং মার্জিয়ার চিকিৎসার জন্য বেশকিছু টাকা তুলে দেয়। শুধু মার্জিয়া নয় ঢাকা মেডিকেলে ক্যানসার আক্রান্ত শিশু দিদার, রাসেল, সুমাইয়া, মিমসহ প্রায় শতাধিক রোগীর রক্তের প্রয়োজনে তারা আসমাকে কল করেন। এতো কেবল একটি হাসপাতালের চিত্র। ঢাকা শহরের  প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে তিনি রক্তদাতা পাঠিয়েছেন। রক্তদাতা ম্যানেজ করার পর যেসকল রোগীকে  ব্লাড দিয়ে আসার পর রক্তদাতারা  আসমাকে জানায় রোগীর লোকের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তখন তিনি নিজে হাসপাতালে গিয়ে রোগী এবং তাদের পরিবারের সাথে দেখা করে আসেন এবং  তাদের সংগঠন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাহায্য নিয়ে টাকা কালেকশন করে দিয়ে থাকেন। মানবতার এই প্ল্যাটফরমে কাজের মাধ্যমে তিনি জিতে নিয়েছেন এমন অসংখ্য মানুষের হূদয়। তিনি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন অসহায়ের রক্ত ম্যানেজ করে দিতে। ভুক্তভোগী রোগীর লোকদের থেকে পেয়েছেন অনেক দোয়া। আপাতত দৃষ্টিতে যে কারোই মনে হবে অনেক ভালো কাজ করছেন তিনি। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে উজ্জ্বল এই মানবতারপ্রেমীকেও যেতে হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে।  হবে নাই বা কেন আপনি কি আপনার সন্তানকে এমন কাজ করতে উৎসাহ প্রদান করবেন?

 

রক্তদাতাদের কল করার জন্য দিনের অনেকটা সময় তাকে মোবাইলে কথা বলে কাটাতে হয়। ফলে পরিবার থেকে নানারকম কথা শুনতে হয় তাকে। কথা শোনাতে বাদ দেন না পাড়াপ্রতিবেশীও। সারাক্ষণ এত মোবাইলে কি? এসব করে লাভটা কি? শুধু শুধু সময় নষ্ট করা, খেয়ে দে কাজ না থাকলে যা হয় আর কি?

এমন নানারকম কটুক্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাকে। তবে তিনি হতাশ হননি কখনো। রক্তদাতা ম্যানেজ করে দেওয়ার পর রোগীর লোকের মুখে স্বস্তির হাসি ভুলিয়ে দেয় তার শত মন খারাপকে।

আসমাঊল হুসনা বর্তমানে সরকারি তিতুমীর কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের  তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত রয়েছে। সদাহাস্যেজ্বল  এই মেয়েটি তার মানবিক কাজের মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে হাজারো অসহায় মানুষের হূদয়ে। তার এই মানবিক কাজে যুক্ত হয়ে এত মানুষের হূদয়ে পৌঁছানোর অনুভূতি সম্পর্কে তিনি বলেন-‘ছোট থেকেই মানুষের উপকার করতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু আমি ভাবতাম সেজন্য আমাকে বাসার বাইরে অনেক সময় দিতে হবে। যা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। করোনার লক-ডাউনের সময় আমাদের সংগঠন পজিটিভ ঢাকা-র সাথে যুক্ত হওয়ার পরই বুঝতে পারলাম ঘরে বসেই একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হাজারো মানুষের উপকার করা সম্ভব। পজিটিভ ঢাকা-র কাছে আমি কৃতজ্ঞ কারণ এই সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের কাছে আমি পৌঁছাতে পেরেছি।  আজকের এই আসমাঊল হুসনা হয়ে উঠতে আমার সহযোদ্ধারা আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমি সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যে বাংলাদেশে  রক্তের অভাবে আর কোনো  প্রাণকে  মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে না । তাই আমি ও আমার সংগঠন প্রতিনিয়ত  সমাজের প্রতিটি মানুষ কাছে মানবতার আহ্বান পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।   

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads