• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮

গ্যাস সঙ্কটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইউরিয়া সার উৎপাদন

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয়

৬ সার কারখানাই বন্ধ

  • কাওসার আলম
  • প্রকাশিত ২৬ জুলাই ২০১৮

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে সার কারখানাগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়া হবে- পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে এমন আশ্বাসই দেওয়া হয়েছিল বিসিআইসিকে। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কারখানাগুলোয় গ্যাস সংযোগ মেলেনি। একটি মাত্র কারখানায় সংযোগ দেওয়া হলেও সেটিও এক মাসের মাথায় বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে একটি কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় চাপ না থাকায় সেটিও উৎপাদনে যেতে পারছে না। ফলে বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন ৬টি ইউরিয়া সার কারখানারই উৎপাদন কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে।

সব ধরনের আবাদি জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার হলেও ইরি-বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকরা এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকেন। চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সারের চাহিদা ধরা হয়েছে ৩৩ লাখ টন। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমদানি করেই চাহিদার বড় অংশ মেটাতে হবে। কিন্তু আমদানি সময়সাপেক্ষ এবং চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট, অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সময়মতো কৃষকের দোরগোড়ায় সার পৌঁছানো নিয়ে সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অপরদিকে সার আমদানির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ তৈরির পাশাপাশি সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও বাড়বে।

এদিকে সার উৎপাদনসহ সার্বিক বিষয়ে আগামী ২ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে বিসিআইসির পক্ষ থেকে গ্যাস সঙ্কটের কারণে সার উৎপাদন পরিস্থিতি তুলে ধরে কারখানাগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি জানানো হবে। তবে গ্যাস পাওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের নিশ্চয়তা না পাওয়া গেলে আমদানির মাধ্যমে কীভাবে চাহিদা মেটাতে হবে সেটিও তুলে ধরা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ লক্ষ্যেই পরিকল্পনা নিচ্ছে বিসিআইসি। যদিও চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ সার উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে তাদের।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৩৩ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণে প্রাথমিকভাবে সাড়ে ১৬ লাখ টন সার আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বিসিআইসি। এর মধ্যে কাফকো থেকে সাড়ে ৫ লাখ টন আমদানি করা হবে। বাকি সার সরকারি পর্যায়ে আমদানি করা হবে। মজুত রয়েছে প্রায় ৭ লাখ টন। উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টন সার। কিন্তু গ্যাস নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পর্যন্ত মাত্র ১৩ হাজার টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে বিসিআইসি।

ইউরিয়া সার উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামালই হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। ইউরিয়া উৎপাদনে গ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে রেশনিং পদ্ধতিতে সার কারখানায় বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ করছে সরকার।

কারখানাগুলোর গ্যাস সংযোগ চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিআইসির পরিচালক (বাণিজ্য) হাইয়ুল কাইয়ুম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কারখানাগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে আমাদের পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু গ্যাস পাওয়া না গেলে উৎপাদনের পরিবর্তে আমদানি করেই চাহিদা মেটাতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যে পরিকল্পনাও গ্রহণ করছি। সার নিয়ে কোনো ধরনের সঙ্কট হবে না এমনটিই মনে করছেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমাদের সাড়ে ৭ লাখ টন সার মজুত রয়েছে। ২ থেকে আড়াই লাখ টন আমদানি পাইপ-লাইনে রয়েছে। ফলে সার নিয়ে সঙ্কটের আশঙ্কা করছি না।

বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস সঙ্কটের কারণে গত বছরের এপ্রিল মাস থেকেই পলাশ ও ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে এ দুটি কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (টিজিটিডিসি)। ডিসেম্বর থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল থেকে শাহজালাল সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

অপরদিকে ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর চলতি বছরের ১৩ জুন আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে যন্ত্রপাতি সচল করে গত ২ জুলাই থেকে কারখানাটির উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু ১৩ জুলাই যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ফের কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ত্রুটি সারিয়ে উৎপাদন শুরু হতে না হতেই গ্যাস সঙ্কটের কারণে ফের গত ২১ জুলাই থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে আশুগঞ্জ সার কারখানাটির। সম্প্রতি যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় চাপ না থাকার কারণে উৎপাদনে যেতে পারছে না এটি। ফলে বর্তমানে ৬টি ইউরিয়া সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ কারখানাগুলোর উৎপাদন শুরু হবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিসিআইসির ৬টি ইউরিয়া সার কারখানার প্রতিষ্ঠাকালীন উৎপাদন সক্ষমতা বছরে ২৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। কিন্তু একমাত্র শাহজালাল ইউরিয়া সার কারখানা ব্যতীত ৫টি সার কারখানারই আয়ুষ্কাল অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। পুরনো প্ল্যান্ট ও মেশিনারিজের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা কমলেও বর্তমানে ৬টি সার কারখানার মাধ্যমে ২০ থেকে ২২ লাখ টন সার উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু কারখানাগুলোয় গ্যাস না পাওয়ার কারণে সামর্থ্যের তুলনায় অর্ধেক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেও তা অর্জন করতে পারছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads