• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
সেদিন যা ঘটেছিল

২০০৪ সালের ২১ আগস্টে আ. লীগের সমাবেশ গ্রেনেড হামলা

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

সেদিন যা ঘটেছিল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০১৮

২১ আগস্ট, ২০০৪। সেদিন ছিল শনিবার। বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ছিল। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশে ছিল হাজারো মানুষের ঢল। কথা ছিল সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হবে। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের পর বক্তব্য শুরু করেন শেখ হাসিনা।

ঘড়িতে বিকাল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগুচ্ছিলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির দিকে। মুহূর্তেই শুরু হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক আর্জেস গ্রেনেড। মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় প্রাণবন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে একের পর এক গ্রেনেড ছোড়ে ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে উপস্থিত জনতা। মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। রক্তগঙ্গা বইয়ে যায় সভাস্থলজুড়ে।

ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিষয়টি বুঝতে পেরে ট্রাকে অবস্থানরত মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফসহ দলটির নেতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক মানবঢাল রচনা করেন। মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন শেখ হাসিনাকে। নেতা ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও সৃষ্টিকর্তার রহমতে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে বিকট শব্দে তার কান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ঘটাতে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা। গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ কেড়ে নিতে না পেরে ওইদিন তার গাড়িতে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ছিল ঘাতকরা। কিন্তু সেই গুলি ভেদ করতে পারেনি বিরোধী দলের নেতাকে বহনকারী বুলেট প্রুফ গাড়ির কাচ। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান। নারকীয় এই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দের কারণে শেখ হাসিনার বাঁ কান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই কানে শ্রবণশক্তি হারান তিনি। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার পরও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি।

পরিকল্পিত সেই হামলায় সেদিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। ওই ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন বহু মানুষ। রক্তস্রোতে মিশে নিরপরাধ বহু মানুষের হাত-পাসহ মানবদেহের বিভিন্ন অংশ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ অনেকের হাত নেই, কারো পা উড়ে যায়। রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায় পিচঢালা কালো পথ। অস্থায়ী সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে রক্তের আল্পনা, শত শত মানুষের আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার জন্য, বাঁচানোর জন্য মুমূর্ষুদের আকুতি, কাতর আর্তনাদ ভেসে আসতে থাকে চারপাশ থেকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads