• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
প্রজনন মৌসুমে পর্যাপ্ত ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ

ইলিশের পেট ভর্তি ডিম মিলছে এখনো

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

প্রজনন মৌসুমে পর্যাপ্ত ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ

এখনো মিলছে ডিমওয়ালা ইলিশ

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০১৮

চলতি ইলিশের প্রজনন মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। এখন দেশের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোতে নিষিক্ত ডিম থেকে পরস্ফুিটিত লার্ভার অনুপাত সেটাই প্রমাণ করছে। সম্প্রতি নদীতে মা ইলিশ ও লার্ভার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণে করা গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে, এবার কিছু জাটকার সাইজ ইতোমধ্যে দেড় থেকে সাড়ে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। ফলে আগামী মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে আরো বড় ইলিশ ফিরবে দেশের নদীগুলোতে এমন আশার কথাই জানাচ্ছেন ইলিশ বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল চাঁদপুর নদীকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক মো. আনিসুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় এ বছর যথেষ্ট সফলভাবে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পেরেছে। মা ইলিশ ও লার্ভার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত সপ্তাহে বেশকিছু প্রজনন স্থানে পরীক্ষা চালানো হয়। ওই সময় প্রচুর লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর কিছু জাটকার সাইজ ইতোমধ্যে দেড় থেকে সাড়ে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এখন সেসব জাটকা সুরক্ষা করা গেলে আগামীতেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রার উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।

স্বাভাবিক সময় ইলিশ সাগরে বসবাস করে। আর প্রজননের সময় মা ইলিশ নদীতে আসে। গত মাসে সে সময়টা ছিল। ফলে ওই সময় ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর ইলিশ মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে সরকার। এ কার্যক্রমের সফলতার কারণে প্রতি বছর বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন- এমনটা জানিয়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক এ বি এম জাহিদ হাবিব বলেন, ইলিশের নিষেধাজ্ঞার সময় বৃদ্ধি ও জাটকা সংরক্ষণ কর্মকাণ্ড শুরু করার পর অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করেছে। এখন প্রচার-প্রচারণা, জেলেদের ভাতা প্রদান ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর এতে গত ৯ বছরে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। আগামীতেও ক্রমান্বয়ে এ উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে মৎস্য অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মাসুদ আরা মমি জানান, এবার প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ সংরক্ষণে সারা দেশে ১৪ হাজার ৬১৪টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে মোবাইল কোর্ট ২ হাজার ৭১০টি। এতে সারা দেশে ৪ হাজার ৪৬৬টি মামলা, ৫৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জরিমানা ও ৪ হাজার ১২৭ জনের জেল হয়েছে।

উৎপাদন ৫ লাখ টনে থাকবে : এ বছর ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ রাখার কারণে ৪২ হাজার কোটি ডিম দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ ৪২ হাজার কোটি জাটকা ইলিশ হবে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।

২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ টন ইলিশ মাছ উৎপাদন হয়েছিল। এবারো একই পরিমাণ ইলিশ মাছ উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের হিসাবে, এ জাটকা থেকে প্রায় ২০০ কোটি ইলিশ মাছ বাজারে আসতে পারে। কারণ ইলিশ যত ডিম ছাড়ে তার মধ্যে দুই থেকে তিন শতাংশের বেশি টিকে না। এদিকে ২০১৩ সালে যেখানে দেশের ইলিশের গড় ওজন ছিল ৫১০ গ্রাম, তা এখন বেড়ে ৬৫০ গ্রামে পৌঁছেছে।

এখনো জালে উঠছে মা ইলিশ : আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে এবং জেলেদের মাধ্যমে চাঁদপুরের মৎস্য আড়তগুলোতে বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ আসছে। সেখানে শেষ দু’দিনে প্রায় ২৮ হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে বলে জানান চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত কোম্পানী। এর মধ্যে বেশিরভাগই ডিমওয়ালা মা ইলিশ।

এমন পরিস্থিতিতে চাঁদপুরের প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী ও মৎস্য নেতারা জানান, ইলিশ প্রজননের সময় আরো বাড়ানো প্রয়োজন। কেননা ২২ দিনেও ইলিশ প্রজননের সময় ডিম ছেড়ে শেষ করতে পারেনি। শুধু চাঁদপুর নৌ-সীমানায় মা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, এটাই নয়। চাঁদপুর ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা থেকে যেসব ইলিশ চাঁদপুর আড়তে আসছে, তার অধিকাংশ ইলিশেও ডিম রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

বাজারে কমছে ইলিশ : গত ২৮ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শেষে কিছু এলাকায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। তবে সেটা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এখন রাজধানীর বাজারে ইলিশের সরবরাহ খুব একটা বেশি নয়। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন যেসব ইলিশ মিলছে তার মধ্যে ডিমওয়ালা বেশি। আর ডিম ছাড়ার পর যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে এসবের স্বাদ কম। ফলে বাজারে ক্রেতারও আগ্রহ কম।

সরবরাহ পরিস্থিতি জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগের থেকে এখন সরবরাহ অর্ধেক। কারণ এখন ডিম ছাড়ার পর মাছের স্বাদ কম। এ সময় ক্রেতারা বেশি ইলিশ কেনেন না। এ কারণে বাজার বুঝে সরবরাহ কমানো হয়েছে।

গতকাল কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০ থেকে ৬৫০, আধা কেজির ইলিশ ৪০০ টাকা ও এর কম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads