পেশাদার অপহরণকারী চক্রের দ্বারা, দলীয় অন্তর্কোন্দল নাকি পানিতে পড়ে গিয়ে যশোর জেলা বিএনপির নেতা আবু বকরের মৃত্যু হয়েছে— এ তিনটি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এদিকে যে বিকাশ নম্বরগুলো থেকে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা নেওয়া হয়েছে সেই নম্বরগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। সবগুলো নম্বরই চট্টগ্রামের।
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়ী এলাকায় এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। খুব শিগগিরই যশোরের বিএনপি নেতা আবু বকর আবু হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে। এই ঘটনার সঙ্গে নির্বাচনের সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে তিনি আরো বলেন, তবে কারা, কী কারণে আবুকে অপহরণের পর হত্যা করেছে নাকি পানিতে ডুবে মারা গেছেন তদন্তে সেটা বেরিয়ে আসবে। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আবু বকরের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্থানীয় সূত্রগুলোর মতে, নিহত আবু বকরের বাড়ি যশোর জেলার কেশবপুর থানা এলাকায়। তিনি এলাকায় জনপ্রিয় ব্যক্তি এবং নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আবু বকর একটি দলের অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন- আরেক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও কেশবপুর থানা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ। দীর্ঘদিন ধরে কেশবপুর উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পৃথক দুটি কার্যালয়ের মাধ্যমে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছিল। সুতরাং দলীয় কোন্দলে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিও তদন্তে মাথায় রেখে অগ্রসর হচ্ছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শফিউর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মামলা তদন্তে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারকে গুরুত্ব দিচ্ছি— যেহেতু এটা একটা ক্লুলেস মার্ডার, সেই সঙ্গে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে কথা বলে তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে এবং যেসব মোবাইল নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়েছে সে নম্বরগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। সেহেতু আশা করছি, দ্রুতই এ হত্যারহস্য উদঘাটন হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে ১২ নভেম্বর ঢাকায় আসেন আবু বকর। ওই দিনই পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলের চতুর্থ তলায় ৪১৩ নম্বর রুমে ওঠেন তিনি। ১৪ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম কেনেন। ১৫ নভেম্বর জমা দেন। ১৮ নভেম্বর রাতে তিনি নিখোঁজ হন। ২০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে আবুর লাশ উদ্ধার করা হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে ১২ নভেম্বর ঢাকায় আসেন আবু বকর। ওই দিনই পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলের চতুর্থ তলায় ৪১৩ নম্বর রুমে ওঠেন তিনি। ১৪ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম কেনেন। ১৫ নভেম্বর জমা দেন। ১৮ নভেম্বর রাতে তিনি নিখোঁজ হন।
তার পারিবারিক সূত্র জানায়, ১৮ নভেম্বর রাত ৮টা ৪৩ মিনিটে আবু বকর মোবাইল ফোনে তার ভাতিজাকে জানান, তিনি রমনা পার্কের কাছাকাছি রিকশায় আছেন। কারা যেন তাকে ফলো করছে। এর ঘণ্টাখানেক পর থেকেই আবুর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাত সাড়ে ১২টায় অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে আবু বকরের ভাগ্নে মেহেদি হাসান জাহিদকে ফোন দিয়ে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে আরো ২০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। ১৯ নভেম্বর সকাল ৭-৮টার মধ্যে ৮-১০টি বিকাশ নম্বরে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া হয়।
২০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে আবুর লাশ উদ্ধার করা হয়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর অপমৃত্যু মামলা লিপিবদ্ধ করে। ২২ নভেম্বর লাশের পরিচয় মেলে। গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে গ্রেফতার হওয়া পাঁচ নেতার নামের যে তালিকা বিএনপি দিয়েছিল সেখানে বকরের নাম ছিল।