• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
উন্নয়নের গতি টেনে ধরেছে নির্বাচন

লোগো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

উন্নয়নের গতি টেনে ধরেছে নির্বাচন

# কাটা হবে ধীরগতির প্রকল্পের অর্থ # বাড়তি অর্থ পাবে দ্রুতগতির প্রকল্প # নতুন প্রকল্প পরিহারের নির্দেশ # আরএডিপি প্রণয়ন নীতিমালা জারি

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

উন্নয়ন কার্যক্রমের গতি অনেকটাই টেনে ধরেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিষয়টি বিবেচনায় শুরুতে প্রকল্পের শতভাগ অর্থ ছাড়ের সুযোগ রাখা হলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে গতি আসেনি। এর ফলে এডিপিতে বড় ধরনের কাটছাঁটের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে ধীরগতির রুগ্ণ প্রকল্পের অর্থ কেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে দ্রুতগতির প্রকল্পে। নতুন প্রকল্প নেওয়ার পরিবর্তে চলতি অর্থবছরেই শেষ হবে এমন প্রকল্পে দেওয়া হবে বেশি অর্থ। দুই বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) প্রণয়নের নীতিমালা জারি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগ। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় এ নীতিমালা পাঠানো হয়েছে। একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দারিদ্র্যবিমোচনে সরাসরি সহায়ক হতে পারে এমন প্রকল্প আরএডিপিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে নীতিমালায়। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষায় নেওয়া প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে। অগ্রাধিকার থাকবে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় নেওয়া প্রকল্পে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এমন প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্পেও পর্যাপ্ত অর্থ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়।

সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কার্যক্রম বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ চাহিদা, সম্পদের লভ্যতা, স্থানীয় সম্পদ সংগ্রহ এবং বৈদেশিক সহায্যের প্রাপ্তি ও ব্যবহারের সক্ষমতা, অর্থ ব্যয়ের ধারা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার নির্ধারণ করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের  অর্থ বিভাগ কর্তৃক আরএডিপির আকার নির্ধারণ করার পর অর্থনৈতিক সেক্টরভিত্তিক অগ্রাধিকার, চলমান প্রকল্পের চাহিদা, প্রকল্পের বাস্তবায়নের অগ্রগতি ইত্যাদি বিবেচনায় বরাদ্দ বিভাজন করা হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ও বিদেশি সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এডিপি বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। পাঁচ মাসে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ১৫ শতাংশে। শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে সাত মাসে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। এ বাস্তবতা মাথায় রেখেই সংশোধন করা হচ্ছে এডিপি।

এর আগেই এডিপি থেকে বিদেশি সহায়তা বাবদ বরাদ্দ অর্থ কাটছাঁটের কাজ শুরু করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বাস্তবায়নকারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইআরডির সিরিজ বৈঠক ১৯ ডিসেম্বর শুরু হয়ে গতকাল শেষ হয়েছে। বাস্তবায়নে ধীরগতি ও বিদেশি সহায়তা ছাড়ে মন্দা বিবেচনায় এ খাতেও ব্যাপক কাটছাঁট হবে বলে জানিয়েছেন ইআরডির কর্মকর্তারা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, প্রতিবছর একটি বড় এডিপি প্রণয়ন করে তা পরবর্তীতে কাটছাঁট করে ছোট করা হয়ে থাকে। বছর শেষে অর্থ ব্যয় হয় আরো কম। টেকসই উন্নয়ন বজায় রাখতে বাস্তবায়নের সক্ষমতা বিবেচনা করেই এডিপি প্রণয়ন করা উচিত। তিনি আরো বলেন, কয়েক বছরে অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে প্রকল্প সংখ্যাও বেড়েছে। এর সঙ্গে তাল রেখে বাড়েনি বাস্তবায়নের সক্ষমতা। ফলে ব্যয় হওয়া অর্থের একটা অংশ অপচয় হচ্ছে। নির্বাচন ঘিরে অশান্তি বেশি দিন স্থায়ী হলে আগামীতে উন্নয়নের গতি আরো কমবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads