• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
স্বাগত ২০১৯

স্বাগত ২০১৯

জাতীয়

স্বাগত ২০১৯

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০১৯

কুয়াশার চাদর ভেদ করে আজো পূর্ব দিগন্তে উঁকি মারবে নতুন সূর্য। দেয়ালে টেবিলে পুরনো মলিন দিনপঞ্জিকা বদলে যাবে এর আগেই। রাত বারোটা থেকেই মোবাইল ফোনে আসবে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা। সময় আর নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না’-এই সত্যের ধারাবাহিকতায় আজ বিদায় নিচ্ছে আর একটি বছর। আজ নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। পুরনো বছরের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও বরণ করা হচ্ছে নতুন বছরকে। সম্ভাবনার আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ। হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০১৯।

নতুন বছরটি আনন্দে, শান্তিতে ভরে উঠুক এই প্রত্যাশা। ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। অনেক প্রাপ্তির ঘটনাবহুল ২০১৮-এর অনেক ঘটনার রেশ নিয়েই মানুষ এগিয়ে যাবে। নতুন বছরে গঠন হবে নতুন সরকার। প্রতীক্ষিত একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট হয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর। আর ওই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এর ধারাবাহিকতায় পরপর তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ। 

সারা বিশ্বের মানুষ আনন্দ-উল্লাস করে পালন করছে এই নতুন বছরের শুরুর ক্ষণটিকে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মধ্যেও ২০১৯ সালকে স্বাগত জানিয়েছে সব বয়সের মানুষ। নববর্ষ আসার আগেই বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের নতুন বছরের মঙ্গল কামনা করে মোবাইল ফোনে পাঠানো হয় শুভেচ্ছা বার্তা।  ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছাবার্তার পাশাপাশি প্রকাশ করে উচ্ছ্বাস। রঙ বেরঙের নতুন ক্যালেন্ডার ও ডায়েরিতে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন বিপণিবিতান।

রাজনৈতিক অস্থিরতা নয় বরং আশার মধ্যেই শুরু হয়েছে নতুন বছর। বিদায়ী বছর ২০১৮ সালে দেশের সবচেয়ে বড় পাওয়া স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তকমা কাটিয়ে উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক স্বীকৃতি। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সঙ্গে দেশের মর্যাদা উঠেছে অন্য উচ্চতায়। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে দুই আন্দোলনে ছিল বছরের আলোচিত ঘটনা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা, ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা, বড়পুকুরিয়ার উড়ে যাওয়া কয়লা, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম আটক, মৃত্যুদণ্ড রেখে সড়ক পরিবহন বিল, ডিআইজি মিজানের ‘প্রত্যাহার’, ত্রিভুবনে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলার বিমান, সড়ক অবরোধ, ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় শেখ হাসিনা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণা, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং বাবা-মাকে অপমান, ভিকারুননিসার অভিমানী অরিত্রির আত্মহত্যা আর ব্যান্ড শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু বছরের আলোচিত ঘটনাগুলোর অন্যতম। বছর শেষে আলোচনার টেবিলে ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নতুন বছর সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, অতীতকে পেছনে ফেলে সময়ের চিরায়ত আবর্তনে খ্রিস্টীয় নববর্ষ আমাদের মধ্যে সমাগত। নতুনকে বরণ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। তাই তো নববর্ষকে বরণ করতে বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন। খ্রিস্টীয় নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত গোটা দেশ। বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহূত। খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জি তাই জাতীয় জীবনে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে।

তিনি বলেন, নববর্ষ সকলের মধ্যে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ খ্রিস্টীয় নববর্ষে এ প্রত্যাশা করি।

নতুন বছরের বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটানা ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকায় তৃণমূলের জনগণ আজ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষা এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে ২০১৮ সাল জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল বছর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য সাফল্যময় বছর।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ। উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করেছি। জনগণকে দেওয়া ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য পরিচালনা করছি, বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। বিগত ১০ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট-প্রযুক্তির অভিজাত দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছি। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার। শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যের বই পাচ্ছে। শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে এবং আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা শতভাগে উন্নীত হবে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায়। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads